ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জীবন বদলে দেয়া আমার শিক্ষক

মাথিয়া ঐশী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবন বদলে দেয়া আমার শিক্ষক

মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের শুরুতেই একজন মানুষ তার প্রথম শিক্ষক হিসেবে পান তার বাবা-মা, দাদা-দাদি, চাচা-ফুফু বা পরিবারের অন্য কাউকে। বলতে পারি জীবনের প্রথম শিক্ষক হলেন মা। তারপর বাবা বা পরিবারের অন্য কেউ। আবার জীবনের প্রতি মুহূর্তে যে আমাদের কিছু শিক্ষা দেন তিনিও শিক্ষক।

তবে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেন, তাদেরই শিক্ষক বলে থাকি। এই শিক্ষকদের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ আসেন শুধু বই পড়াতে, আবার কেউ আসেন বইয়ের বাইরের জগৎটাকে দেখাতে। কেউ আসেন জীবন ও পৃথিবীটা কত সুন্দর তা দেখাতে। কেউ আসেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখাতে। কেননা, একজন শিক্ষকের কাজ শুধু বই পড়ানো নয়, বরং আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সহজ করে গড়ে তুলে এই পৃথিবীর সামনে একটি ভিন্ন ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য।

এসব কিছুর উপর আমার কাছে শিক্ষকের সংজ্ঞা একটু আলাদা। শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। আর জীবন থেকে পরিপূর্ণ শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারি। জীবনের এই পরিপূর্ণ শিক্ষা যে আমাদের দিয়ে থাকেন তিনিই হলেন আমাদের জীবনের আদর্শ শিক্ষক। বর্তমানে টিকে থাকার জন্য এবং নিজেকে একজন আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ খুব প্রয়োজন।

জন্মের পর একটি শিশুর শিক্ষা গ্রহণের প্রথম পাঠ শুরু হয় তার পরিবারে। আর এ কারণেই শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবকের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আমার জীবনের আদর্শ শিক্ষক হলেন আমার বোন ফ্লোরা ইয়াসমিন সুর্মি। যদিও বিয়ের পর তার নামটা একটু পরিবর্তন হয়ে সুর্মি বিশ্বাস হয়ে গেছে। বোন আমার একটা নয়, পাঁচটি বোনের মধ্যে তিনি হলেন তৃতীয়। তার এবং আমার বয়সের ব্যবধান ষোল বছরের কম হবে না। তার মানে যখন আমার সদ্য জন্ম হয়েছে তখন তার জীবন সম্পর্কে প্রায় অনেক ধারণা।

আমার লেখাপড়া জীবনের হাতেখড়ি হয়েছিল তার হাত দিয়েই। আমি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার ব্যাপারে খুব ফাঁকিবাজ বললেই চলে। যখন সে আমাকে পড়তে বসাতো, পড়া না পারলে তার ঐ কঠিন দুটি চোখ দিয়ে যখন আমার দিকে তাকাতো, আমার অন্তরাত্মা যেন কেঁপে উঠত। শুধু চোখরাঙানি না মাইর ও খেয়েছি খুব। হয়তো এই কারণেই লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে পেরেছি। শুধু লেখাপড়া নয়, জীবনের প্রতিটি কাজের হাতেখড়িও তার হাত দিয়েই। প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কাজের পাশে আমি তাকে পেয়েছি, হোক সেটা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা জীবনের বাকি সময়ের।

হয়তো লেখা শুরু করলে কখনই শেষ হবে না আমার এই শিক্ষকের গল্প। আমার জীবনে তার অবদান অব্যক্ত এবং অতুলনীয়। মা বাবার পরে কারো স্থান দিতে হলে সেই স্থান হবে আমার এই শিক্ষকের।

আমরা এই ছোট্ট জীবনে কতজনের কাছ থেকে কতভাবে শিখি। জীবন থেকে শেখা আমাদের অন্যতম পাথেয়। কেউ কেউ খুব সচেতনভাবে শেখান। একেবারে হাত ধরে শেখান, আবার কেউ নিজ নিয়মে শিখিয়ে যান। আমি বলতে পারি, আমার এই শিক্ষক যেন নিজ হাতে ধরেই আমাকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।

পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার আছে, এক বিশাল পৃথিবী আছে- এই কথাটির সাথে বাস্তবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আমার এই শিক্ষক।

তিনি আমাকে পরিশ্রম করতে শিখিয়েছেন। পরিশ্রম কী করে মানুষকে বদলে দেয় তা শিখেছি আমি তার কাছ থেকেই। তিনি আমাকে ধৈর্য্য ধরতে শিখিয়েছেন। জীবনের খারাপ বা ভালো যেকোনো মুহূর্তে হাসতে শিখিয়েছেন। হাসিমুখে জীবনের সবকিছু গ্রহণ করতে শিখিয়েছেন। তিনি আমাকে মুক্ত চিন্তা করতে শিখিয়েছেন। মানুষের খারাপ দিকটি বাদ দিয়ে ভালো দিকটিকে আপন করে নিতে শিখিয়েছেন।

জীবনে এমন কিছু মানুষের সান্নিধ্য আসে, যাদের অমোঘ উপস্থিতি জীবনে সুদূরপ্রসারী ছাপ ফেলে যায়। জীবনে চলার পথে হয়তো এমন শিক্ষক আরো পাবো, তবে তিনি হলেন আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক, যিনি আমাকে এই জগতের আলো দেখিয়েছেন। বলতে পারি তিনিই হলেন আমার জীবন বদলে দেয়া শিক্ষক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/মাথিয়া ঐশী/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়