ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পরীক্ষায় পাঠিয়ে প্রতীক্ষায় স্বজন

মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরীক্ষায় পাঠিয়ে প্রতীক্ষায় স্বজন

বার্ধক্যে ঝুঁকে যাওয়া আম বৃক্ষটিতে হেলান দিয়ে বসে আছেন মধ্যবয়সী শামসুর রহমান। পেশায় একজন সরকারি চাকরিজীবী।

শামসুর রহমানের দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে শরীরে ছেড়ে দিয়েছে। তবুও চোখে কোনো এক আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের অপেক্ষা। সেকেন্ড, মিনিট হিসেব করে এভাবে সময় গণনার মুহূর্ত আজই। একমাত্র সন্তানকে স্বপ্ন পূরণের পরীক্ষায় পাঠিয়ে এ প্রতীক্ষা।

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে মেয়ে মিলিকে নিয়ে এসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রিয় সন্তান স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে মিলি। দীর্ঘ যাত্রার পর সামান্য বিশ্রাম নিয়েই পরীক্ষার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে বাবাকে। এজন্যই তার চিন্তাটা একটু বেশি।

শামসুর রহমান সাহেবের চোখে মিলিকে দেখা শেষ মুখচ্ছবি। সময় যেন আজ আর যেতে চায় না। প্রতিবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তার রেখা বাড়ছে। চিন্তিত মনে সন্তানের মঙ্গল কামনা করছেন তিনি। চিত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের পাশের আম বাগানের।

শামসুর রহমান জানালেন, ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ‘সি’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন মিলি।

চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন বিকাশ চন্দন। তিনিও অপেক্ষা করছেন তার মেয়ের জন্য। একই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন তার মেয়ে।

পাশেই দেখা মিলল মধ্যবয়সী এক নারী বসে আছেন। স্বামীহারা এ মায়েরও অপেক্ষা কখন মেয়ের পরীক্ষা শেষ হবে।

ফুটবল মাঠের সামনে গিয়ে চোখে পড়ল বাবা-মায়ের সাথে বসে খেলা করছে ৫/৬ বছরের একটি শিশু। কথা বলতেই বলল, ‘আমার ভাইয়া পরীক্ষা দিচ্ছে। এক ঘণ্টা পর বের হবে। ভাইয়া আসলে আমরা চলে যাব।’

বাড়ি কোথায় তোমাদের? প্রশ্নের জবাবে বলল, নাটোর। বড় হয়ে কী হতে চাও? জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘আমিও ভাইয়ের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।’

বাচ্চাটি ধরেই নিয়েছে তার ভাই এখানে ভর্তি হবে। আর বড় ভাইয়ের এ যে স্বপ্ন কচি প্রাণটিকেও আলোড়িত করেছে, তা তার কথা শুনেই বোঝা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের থানা গেটের পাশে অভিভাবক কর্নারে গিয়ে কথা হলো ঝিনাইদহের এক পরিবারের সাথে। ক্যাম্পাস নিকটবর্তী হওয়ায় ভর্তিচ্ছু বিপ্লবের সাথে এসেছে তার পুরো পরিবারই। তাদের পাশেই ছিলেন বগুড়া থেকে আসা সুমন। ছোট বোন মুক্তিকে পরীক্ষায় পাঠিয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি।

তাদের মতো হাজারো স্বজনেরা বসে অপেক্ষা করছেন। কেউ গল্পে, কেউবা পার্থনায় সময় কাটাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেয়া সীমার বাইরে তাকালে চোখে পড়ে আরেক স্বজনের অপেক্ষার চাহনি। গল্প কথার মাঝেও মনে চিন্তার খেলা। কেমন হচ্ছে পরীক্ষা?

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একই চিত্র। ভর্তিচ্ছুর সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেন এসব প্রিয়জনেরা। যারা যেতে পারেন না, তারাও বাড়িতে বসে প্রার্থনা করেন প্রিয় মানুষটির স্বপ্ন পূরণের জন্য।

শত দুর্ভোগ আর ক্লান্তি ভুলে অবসন্ন শরীরে শ্রান্ত চোখে স্বপ্ন দেখেন, ছেলে-মেয়ে তার বড় হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্বদ্যিালয়, কুষ্টিয়া।


মুনজুরুল ইসলাম/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়