ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রসের খোঁজে

আর এম রিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ১৯ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রসের খোঁজে

তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত ৮টা। হঠাৎ করেই ফেসবুক গ্রুপে বন্ধুর মেসেজ। কে কে খেজুরের রস খেতে যাবি। ইচ্ছা থাকলে কাল ভোর সাড়ে ৬টার মধ্য রেডি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল পুকুর ঘাটে আসতে হবে। দু’একজন ব্যতীত তেমন কেউ সাড়া দিলো না। ওদের মধ্যে এক বন্ধু সবাইকে বোঝাচ্ছে, চল না সবাই মিলে ঘুরে আসি। অনেক দিন হলো একসাথে ঘোরাঘুরি হয় না। এদিকে ঘোরাঘুরিও হবে, খেজুরের রস খাওয়ার ইচ্ছাটাও পূর্ণ হবে।

কেউ বলছে, এত সকালে ঘুম থেকে কী করে উঠবো। কেউ বলছে, প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কীভাবে সম্ভব! দেখা দিল নানা মুনির নানা মত। সবশেষে কিছু বন্ধুর সাড়া পাওয়া গেল। যেই কথা সেই কাজ। সকালে বের হতে হবে। তারপর যার যার মতো গ্রুপ থেকে সেপারেট হয়ে রাতে দ্রুত ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। ঘুম ভাঙলেই খেজুরের রসের সন্ধানে বের হতে হবে।

আয়োজক বন্ধু সকাল সাড়ে ৫টায় ওঠে সব বন্ধুদের ফোন দিতে লাগলো। ফোনের পর ফোন। সবাই এতটাই ঘুমে বিভোর যে, ৪-৫ বার ফোন দেয়ার পর একেক জন ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। পরে যার যার মতো রেডি হয়ে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন পুকুর ঘাটে একত্র হলাম। এরমধ্যে অনেকেই ভেবেছিল শুধু আমরাই যাব। কিন্তু ওখানে উপস্থিত হওয়া মাত্রই দেখা গেল বিভিন্ন বিভাগের বন্ধু ও বড় ভাইদের সমাগম।

তারপর সবাই মিলে ভ্যানের সন্ধান করা শুরু করলাম। অনেক খোঁজাখুজির পর তিনটি ভ্যান পাওয়া গেল। কিন্তু দেখা গেল তিনটি ভ্যানে যাত্রী পূর্ণ হওয়ার পরও ১৩ জন থেকে যায়। এদিকে আর তেমন ভ্যানও মেলেনি। রসের ঠিকানায় পৌঁছতে হবে দ্রুত। এজন্য তারা পায়ে হাটা শুরু করলেন। শর্টকার্ট মাটির রাস্তা দিয়ে খেজুর রসের এলাকা ত্রিবেণির উদ্দেশ্য রওনা হলেন। একদিকে ভ্যান পার্টি, অন্য দিকে পায়ে হাঁটা বন্ধুরা। দূর থেকে একে অপরের সাথে কুচকাওয়াজ করতে করতে অরণ্যের ছায়ায় হারিয়ে গেলেন তারা।

পায়ে হাঁটা বন্ধুরা ধীরে ধীরে দৌড়াচ্ছেন। আর একে অপরের সাথে বিনোদনমূলক নাটকীয় কথা বলছেন। এক সময় তারা রস ওয়ালার বাড়িতে এসে পৌঁছালেন। সবাই যার যার মতো রস খেয়ে মনের একগুচ্ছ আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করলেন।

এ সময় রসওয়ালার বাড়িতে ভিন্ন কিছু দেখতে পেলাম আমরা। তারা খেজুরের রস বড় একটা কড়াইয়ে তাপ দিচ্ছেন। এ দিয়ে তারা গুড় বানাবেন। এই রস দিয়ে বানানো গুড়কে আমরা খেজুরের গুড় বলে থাকি।

অবশেষে সবার খেজুরের রস খাওয়া শেষ হলে ভ্যানে চড়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। পথিমধ্যে ভ্যান দিয়ে যাওয়া বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ। ওরা পায়ে হেঁটে যাওয়া ১৩ জনের আগেই খেজুরের রস খেয়ে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। এবার দেখা গেল ভ্যান দিয়ে যাওয়া বন্ধুরা আসার সময় পায়ে হেঁটে আসছে। আর হেঁটে যাওয়া বন্ধুরা আসার সময় ভ্যান দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেইটে এসে পৌঁছেছে।

এভাবে কেটে গেল এক চিলতি সকাল বেলা। পরিচয় হলো নতুন বন্ধুদের সাথে। কাটলো নতুন এক সকাল। পূর্ণ হলো এ বছরের শীতের আমেজের খেজুরের রস খাওয়া। বন্ধুদের সাথে কাটানো এই সময়টা স্মৃতিপটে জমা থাকবে আজীবন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।


ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়