ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাফল‌্য

আরাফাত বিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২০ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাফল‌্য

সম্প্রতি কলকাতা ইমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্স। তিন দিনব্যাপী কনফারেন্সের পোস্টার প্রেজেন্টেশনে অংশ নিয়ে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছে ইন্টারন্যামনাল নেশনাল ফেডারেশন ফর মেডিক‌্যাল স্টুডেন্টস অ‌্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর একটি দল।

সেই দলে ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিক‌্যাল কলেজের এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আলভী আহসান, মুমতাহিনা ফাতিমা, রাইসা নাওয়াল এবং চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজের এমবিবিএস ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা আরাফাত ইসলাম। সম্প্রতি দলটির সদস্যদের সঙ্গে কনফারেন্স নিয়ে কথা বলেছেন আরাফাত বিন হাসান। এ কথামালার চুম্বক অংশ রাইজিংবিডির পাঠকদের জন‌্য তুলে ধরা হলো।

আরাফাত: আপনারা আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্সের বিষয়ে জেনেছিলেন কীভাবে?

মুমতাহিনা: শুরুতে আমাদের ‘আইএফএমএ বাংলাদেশ’ এর সিনিয়র অ‌্যাডভাইসার ড. সৈয়দা নাজমুন্নাহার আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্সের কথা জানিয়েছেন। ওনার মাধ্যমেই আমরা প্রথম জানতে পারি।

আরাফাত: বাংলাদেশ থেকে আর কোনো দল ছিল? এর আগে কেউ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ থেকে?

রাইসা: বাংলাদেশ থেকে আরো কয়েকটি দল গিয়েছিল কিন্তু সবার সাথে কথা বলা হয়ে ওঠেনি। এছাড়া SWAC (Society for the welfare of the autistic) এর ডেপুটি ডিরেক্টর মফিজুল ইসলাম স্যার, চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ডা. বাসনা মুহূরী ম্যাডাম আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ভাইয়া ও আপুর সাথে দেখা হয়েছিল। গত বছরও বাংলাদেশ থেকে কয়েকটা দল গিয়েছিল।

আরাফাত: ঐ কনফারেন্স অংশগ্রহণের আগ্রহটা কেন আপনাদের?

শরীফ: কনফারেন্সে যাওয়ার কারণ হচ্ছে অটিজম বিষয়ে বৈশ্বিক একটা ধারণা পাওয়া। দেশের বাইরে অটিজম নিয়ে কী কী কাজ হচ্ছে সেটা জানা। অটিজম বিষয়ক কিছু ধারণা আমাদের আগে থেকেই ছিল। যে কারণে এই বিষয়ে কাজ করার আগ্রহটাও অনেক বেশি। এছাড়া কনফারেন্সটিতে যাওয়ার মাধ্যমে আমরা অটিজম বিষয়ক সায়েন্টিফিক পোস্টার উপস্থাপনারও একটা সুযোগ পেয়েছি। আর কনফারেন্সটিতে মূল পর্বে অংশগ্রহণের জন্য আমাদেরকে প্রাথমিকভাবে গবেষণাপত্র জমা দিতে হয়েছে।

আরাফাত: এই যে গবেষণাপত্র, এটা তো হঠা করে আসেনি নিশ্চয়। আপনারা কী অটিজম নিয়ে আগে থেকেই কাজ করতেন?

মোস্তফা:  অটিজম নিয়ে আমাদের কিছু ধারণা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু গবেষণাপত্র এবারই প্রথম। গত ৭ এবং ৮ নভেম্বর আমরা আইএফএমএসএ বাংলাদেশের আয়োজনে চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজে ‘স্কিল স্কুল এবং ওয়ার্কশপ কার্নিভাল’ নামে প্রোগ্রামের আয়োজন করি। সেখানে একটি সেশন ছিল ‘কেয়ার অফ অটিস্টিক চাইল্ড’, যেটি পরিচালনা করেন ডাঃ বাসনা রানী মুহুরী। অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য নিষ্পাপ অটিজম স্কুল নামে ম্যাডামের একটি স্কুল আছে। আমরা মূলত সেখান থেকেই অটিজম নিয়ে প্রাথমিক ধারণা পাই এবং এটি নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হই। পরবর্তীতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্সের ইভেন্ট লিংক পেয়ে আমরা গবেষণাপত্র জমা দিতে আগ্রহী হই এবং কাজ শুরু করি।

আরাফাত: গবেষণাটা কী বিষয়ে ছিল? টিম গঠন করলেন কীভাবে?

মোস্তফা: যেকোনো গবেষণার ক্ষেত্রে টিম মেম্বার নির্বাচন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ‘আইএফএমএসএ বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় প্রতি বছর SCOREsearch নামে রিসার্চ ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়। আমি, আলভী, মুমতাহিনা আর রাইসা আমরা ২০১৮ তে ওয়ার্কশপে অংশ নেই। তাই কাজ করতে বেশ সুবিধা হয়েছে।

আমাদের রিসার্চের শিরোনাম ছিল, ‘নলেজ অফ অটিজম স্পেকট্রাম ডিজওর্ডার এমোং সেকেন্ড টু ফোর্থ ফেইজ স্টুডেন্টস অফ বাংলাদেশ।’

আরাফাত: গবেষণাপত্র জমা দিয়ে মূল প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হবেন -এমন বিশ্বাস আগে থেকে ছিল?

মুমতাহিনা: আসলে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। মনোনীত হবো এমনটা আশা ছিল, আবার ছিল না। আমরা যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছি, এরকম কাজ বাংলাদেশে তো বটেই এমনকি পুরো উপমহাদেশে খুব কমই করা হয়েছে। কিন্তু আবার এটাও মনে হয়েছিল যে এটা তো আমাদের প্রথম কাজ।

আরাফাত: পোস্টারের বিষয় কীভাবে নির্ধারণ করলেন?

শরীফ: যেকোনো সায়েন্টিফিক পোস্টার উপস্থাপনার আগে প্রথম যে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হয়, তা হচ্ছে আমরা আমাদের কাজটি কোন বিষয়ে করব। তখন আমরা ভাবলাম, যেহেতু আমরা মেডিক‌্যাল স্টুডেন্ট তাই আমাদের উচিত মেডিক‌্যাল স্টুডেন্টদের অটিজম বিষয়ে ধারণা বা জ্ঞান কতটুকু সেটা জানা। কারণ তারাই কদিন পর চিকিৎসক হবে। এভাবেই পোস্টারের বিষয় নির্ধারণ করি।

আরাফাত: অটিজমটা কি আসলে কোনো রোগ? এটা ঠিক কী কারণে হয়?

মুমতাহিনা: অটিজম আসলে কোনো রোগ নয়। এটি একটি ডিসঅর্ডার। অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হয় নানাবিধ জিনগত এবং পরিবেশগত কারণ অটিজমের জন্য দায়ী। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী শিশুর জন্মের ১৮-২৫ মাসের মধ্যেই অটিজম চিহ্নিত করা সম্ভব।

আরাফাত: ইন্ডিয়া অটিজম সেন্টার কী উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এটা আয়োজন করে থাকে?

শরীফ: এবার কনফারেন্সটি ছিল দ্বিতীয়য় আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্স। গত বছরই ভারতের কলকতায় ১ম আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্স হয়। ২০১৯ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল। এর আয়োজক ছিল  ইন্ডিয়া অটিজম সেন্টার। মূলত অটিজম আক্রান্তদের চিকিৎসায় সর্বাধুনিক গবেষণা এবং উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আধুনিক গবেষণা এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ‘আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্স’ এর আয়োজন করে।

আরাফাত: পুরষ্কারের অর্থ কী কাজে ব্যবহার করবেন?

মোস্তফা: আমাদেরকে পুরষ্কার হিসেবে ১০ হাজার রূপি দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন অটিজম নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হই সেক্ষেত্রে এটি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। যেহেতু আমাদের দেশে অটিজম নিয়ে গবেষণাপত্রের সংখ্যা কম সেহেতু আমরা পরবর্তীতে অটিজম নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার জন্য প্রাইজমানিটি ব্যবহার করবো। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছি কিভাবে বড় পরিসরে অটিজম নিয়ে কাজ করা যায়। স্যারেরা আমাদের সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে গবেষণামূলক কাজে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা করি।

আরাফাত: বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা অটিস্টিক শিশুদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করেন?

মুমতাহিনা: বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে মোটামুটি কিছু কাজ হচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সেটা এখনো যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। ভবিষ্যতে সেটা সম্ভব হবে আশা করি।

আরাফাত: অটিজম নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছা আছে? বিশেষ করে পেশাগত জীবনে?

রাইসা: অটিজম নিয়ে ভবিষ্যতেও কাজ করার ইচ্ছা আছে। এই কনফারেন্সটিতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। অটিজম সম্পর্কে না জানা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। বিভিন্ন দেশের অনেক শিশু অটিজমে আক্রান্ত। তাদের জন্য পেশাগত জীবনেও অটিজম নিয়ে কাজ করতে চাই।

আরাফাত: বাংলাদেশে এখনও অনেকে ‘অটিজম’ শব্দটি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না, এর কারণ কী?

মোস্তফা: দেখুন অটিজম আক্রান্তদের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। ঢাকা শিশু হাসপাতালের একদল গবেষকের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে প্রতি ১০ হাজার বাচ্চাদের মধ্যে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ জন। যেটি ২০১৮ তে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন। দেশের একটা বড় একটা জনগোষ্ঠী অটিজমে আক্রান্ত। কিন্তু এটি নিয়ে আসলে সচেতনতামূলক কোন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সাধারণ মানুষের অটিজম নিয়ে ধারণা কম এবং অনেকে এই বাচ্চাগুলোকে পাগল বলে অভিহিত করে যেটি খুবই দুঃখজনক। যথাযথভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করতে পারলে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণাগুলোর অবসান ঘটবে। স্কুল লেভেল থেকে পাঠ্যপুস্তকে এসব বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করলে অটিজম নিয়ে মানুষের সঠিক ধারণা তৈরি হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে ছোট ছোট ওয়ার্কশপ আয়োজনের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করতে পারলে অটিজম নিয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটবে।


ঢাকা/আরাফাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়