ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ভালোবাসা দিবস

অপেক্ষার ৩ বছর...

সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অপেক্ষার ৩ বছর...

মহারানী, অনেক দিন পর তোমাকে লিখতে বসলাম, দয়া করে মন খারাপ করো না। আর বিশ্বাস করো, আগের চিঠিগুলোর মতো এটাও তোমার দেয়া লাল ডায়েরিটার শক্ত মলাটের মধ্যেই চাপা পড়ে থাকবে। যেমনটা আমি পড়ে আছি। ডাকঘর অবধি যাবে না।

জানো, এখন নিঝুম রাত, অনেক শান্ত একটা পরিবেশ, সবকিছু অনেক চুপচাপ, কিছুক্ষণ আগেও কত কোলাহল, কত জনের চলাচল আর এখন শান্ত নিশ্চুপ পরিবেশ। জানালার ওপাশে তাকালে অনেক শান্ত একটা জোৎস্না দেখা যায়। কিছু জোনাকি আর আকাশের তারা একতালে মিটিমিটি করছে। চাঁদটা আস্তে আস্তে আড়ালে চলে যাচ্ছে। কেমন যেন একটা অনুভূতি, অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে।

হুম, এই অনুভূতির সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয়। লুকিয়ে থাকা কষ্টরা যখন বের হয়, তখনই এমন একটা অনুভূতি তৈরি হয়। অনেক দিন ধরেই ওদের আটকে রেখেছি, আজ আর কোনো বাঁধা মানবে না। আর আমিও বাঁধা দেব না, লুকানো কষ্টগুলো মহা আনন্দে বেরুচ্ছে।

কিন্তু কষ্টদেরও কি আনন্দ আছে? আর কেনই বা আনন্দ থাকবে না, কতদিন পর আজ তারা ছাড়া পেল!

জানতে চাইবে না? কষ্টরা কেন হঠাৎ আড়াল ভঙ্গ করতে চাচ্ছে? উত্তর হবে, হয়তো তোমার কথা ভাবছি! কিন্তু সত্যি আমি ভাবতে চাই নাই। আমার মনে পড়ে গেছে, বিশ্বাস কর, আমি ভাবতে চাই নাই, হঠাৎ মনে পড়ে গেল।

আচ্ছা তুমি কি সব ভুলে গেছ? হয়তো গেছ, যেতেই পারো। কিন্তু আমার বোকা মনটা বলছে, তুমি ভুলতে পারোনি। তুমি আমাকে ভুলতে পারো না।

তোমার মনে আছে, সেই রাতগুলোর কথা? কত কত রাত ঘুমহীন কাটালাম, আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে, আর তুমি রুমে বসে গান শুনতে, আর আমরা এভাবেই কথা বলতাম, কত আবোল তাবোল কথা, দুষ্টু-মিষ্টি কথা। কিন্তু আমরা কী বলতাম নিজেরাও জানতাম না। বলতাম আর শোনার জন্য অপেক্ষা করতাম। অপেক্ষা করতে কতই না ভালো লাগতো, সে এক অদ্ভুত ভালো লাগা। তখন, আমি এক অন্য আমি ছিলাম, আর এখন আমি অনেক পাল্টে গেছি।

তখন আমি সারাক্ষণ তোমায় নিয়ে ভাবতাম, ভাবতাম আর ভাবতাম, কখনো কখনো ভাবতে ভাবতে একা একা হেসে ফেলতাম। কত ভাবনা ছিল তোমায় নিয়ে, কিন্তু সব শেষ করে দিলে। এখন রাতের এই সময়টায় আমার মুখে হাসি থাকে না। তুমি চলে যাওয়ার পর রোজ রাতেই আমি মন খারাপ করে থাকি, হয়তো অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসে। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি কাঁদি না। এখন আমি অনেক হাসি, তখন আমি হাসতাম সুখের সময়, আর এখন আমি সুখ-দুঃখ সবসময় হাসি। কিন্তু তখন হাসি পেলে হাসতাম, আর এখন অনেক কিছু আড়াল করার জন্য হাসি।

আচ্ছা বলোতো, আমি এখন যদি শব্দ করে কান্না করি, তাহলে ঘড়ির টিক্ টিক্ টিক্ শব্দ আর কান্নার শব্দ মিলে কেমন লাগবে? ওহহ অসাধারণ লাগছে! তুমি শব্দটা শুনলে হয়তো বুঝতে, তুমি কী হারিয়েছো। হয়তো তুমি এটাও বলতে ওয়াও সুন্দর, এই শব্দে একটা গান গাইলে আরো ভালো লাগতো। এমনটা বললে আমি অবাক হতাম না, কারণ তুমি তো নিষ্ঠুরদের মহারানী।

দেখেছ, চোখের পানিগুলো কত পরিমাণে বেহায়া, শুধু শুধু এতগুলা একসাধে বের হওয়ার কোনো মানে হয় বল?একটা জোনাকি জানালা দিয়ে ভেতরে চলে আসলো, আচ্ছা, তোমার কি মনে পড়ে? আমি তোমাকে কী নামে ডাকতাম?

মনে পড়ে, সেই রাতের কথা? আমরা কথা বলছিলাম, হুট করেই একটা জোনাকি আমার রুমে ঢুকে পড়ল। আমি বললাম, মাত্র আমার রুমে একটা জোনাকি ঢুকলো। আর তুমি লজ্জা স্বরে বললে, আরে বুদ্ধু ওটা জোনাকি না, ওটাতো আমার আদর জোনাকির বেশে তোমার কাছে পাঠিয়েছি। আর আমিও পাগলের মতো জোনাকিকে ধরে আদর দিয়ে ছেরে দিলাম। কেনই বা দিব না, আমি তো মিথ্যা ছিলাম না।

কিন্তু তুমি মিথ্যে বলেছিলে। সেদিন জোনাকি আসছিল সুখের স্বাদ নিতে, আর আজ এলো চোখের পানিতে গা ভাসাতে।

অনেক তো হলো, তুমি ভালো থেকো। কারণ তোমাকে যে ভালো থাকতেই হবে। আর আমি চাই, তুমি ভালো থাকো। কিন্তু আমি নিশ্চিত, তুমি একদিন না একদিন বুঝতে পারবে, তুমি কী হারিয়েছ। কিন্তু সেদিন হয়তো মনের দরজাটা তোমার জন্য বন্ধ থাকবে, তোমার খোলা রেখে যাওয়া দরজা দিয়ে অন্য কেউ ডুকে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে দেবে। গত তিন বছরের মতো এবারো ১৪ ফেব্রুয়ারি বটতলার সামনে অপেক্ষা করব।

ইতি

তোমার স্বপ্নাশিষ

[তিন বছর আগে ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকাকে এক প্রেমিকের চিঠি]

 

ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়