ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘ভাষা যেন জগাখিচুড়ি না হয়’

আজাহার ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ভাষা যেন জগাখিচুড়ি না হয়’

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারসহ ভাষা শহীদদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ফিরে পেয়েছি। এর মাধ্যমে সাবলীলভাবে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। এমনি হাজারো ভাবনা ও অনুভূতি থাকে বাংলা ভাষা-ভাষীদের মনে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের কিছু ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজাহার ইসলাম।

ওয়াহিদা খানম আশা

আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় শৈশবে বলা আমার সেই বাংলা ভাষার বর্ণমালা আজ কেমন আছে? তা আজ ভাববার সময় এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাংলা ভাষার ব্যবহার যেন জগাখিচুড়ির ভাষায় রূপ নিয়েছে। বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে না বলা নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ভাষা আজ হুমকির মুখে। তাই ভাষার ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। এই শঙ্কার অন্যতম কারণ সাহিত্যের প্রতি বিমুখতা। যেসময় তরুণ প্রজন্মের কবিতা, প্রবন্ধ পড়ার কথা, তখন তারা ইংরেজি সিনেমা, হিন্দি সিরিয়ালে মত্ত। বাংলা ভাষার মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে বর্তমান প্রজন্মকে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। না হয় কালের পরিক্রমায় আমাদের ভাষা হারিয়ে যাবে।

শৈবাল নন্দী হিমু

উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হিমু জানিয়েছেন, মাতৃভাষা দিবসে আবদুল গাফফার চৌধুরীর রচনায় একুশের গান (আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো....) শুনে তারা ভাষা শহীদদের এবং মাতৃভাষাকে সম্মান দিতে শিখেছেন। ভালোবাসতে শিখেছেন। ভাষা একটি জাতির পরিচয় বহন করে। কিন্তু আজ মাতৃভাষা অর্জনের ৬৮ বছর পেরিয়েও ভাষা ব্যবহারে বিপন্নতা দেখে হতাশ তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে অভিভাবকেরা পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষাকে তুচ্ছ হিসেবে তুলে ধরছে। ভাষার মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে অভিভাবকদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সর্বপ্রথম অভিভাবকদের বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষার প্রতি অনুপ্রাণিত করে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাতে হবে। তবেই আমাদের ভাষা তার যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে।

ফারহানা আফরিন অন্তি

অন্তি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। মাতৃভাষা নিয়ে তার ভাবনার কথা জানিয়েছেন রাইজিংবিডিকে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের মাস। শ্রদ্ধার আর অহংকারের মাস। পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাঙালিরাই মাতৃভাষার জন্য রক্তে রঞ্জিত করেছিল রাজপথ। ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিল দামাল ছেলেরা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষায় প্রাণ খুলে অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি। ভাষা সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয় বহন করে। কিন্তু আজকের তরুণ প্রজন্মের পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা ভাষা তার যথাযথ মর্যাদা হারাতে বসেছে। বায়ান্নর চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন তরুণ প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।

বায়েজিদ আহমেদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিদ আহমেদ বলেছেন, প্রত্যেক জাতির যেমন নিজস্ব একটি ভাষা থাকে। তেমনি বাঙালি জাতিরও একটি নিজস্ব ভাষা আছে। হাজারো ত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে এনেছে বাংলা ভাষা। একুশ শতকের এই সময়ে এসে আমরা ভাষার সঠিক মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ। দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিকৃত করে ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের মায়ের মুখের বুলি। বাংলা ভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করা ও মনে লালন করাই হোক আমাদের ভাষা দিবসের অঙ্গীকার।

জান্নাতুল ইসবা বিথী

আরবি ভাষা সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী বিথী কবির ভাষা নিয়ে বলেন, আমার ছেলে খুব সিরিয়াস, কথায় কথায় হাসে না, জানেন দাদা আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে যেমন স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। ঠিক তেমনি আমাদের ভাষার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। আমরা ভুলে গিয়েছি বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগ। মাতৃভাষা সকলেই জন্মসূত্রে পেলেও আমরা পেয়েছি সংগ্রামের মাধ্যমে। নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলার মতো স্বর্গীয় সুখ পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু আমরা বাংলা গান শুনতে অভ্যস্ত নই। আমরা অভ্যস্ত হিন্দি, ইংলিশ গানে। ভাষার গুরুত্ব ও ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিতে সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। যেন শহীদের রক্তে পাওয়া এই ভাষার ইতিহাস কালের গর্ভে হারিয়ে না যায়।


ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়