ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মুকুলের ঘ্রাণ জাগিয়ে রাখে ক্যাম্পাস

রাকিবুল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৫, ৪ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 মুকুলের ঘ্রাণ জাগিয়ে রাখে ক্যাম্পাস

আচমকা দখিনা বাতাস অবসাদগ্রস্ত মনের মাঝে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট। এ বাতাস যেন মনকে নাড়িয়ে দেয়। আবির ছিটিয়ে দেয় শরীরে। আমের মুকুল ভরা ডালে দিনভর কোকিলের কুহু কুহু ডাক, এমন পরিবেশ যেন শুধু বসন্তেই শোভা পায়। বিচিত্র রঙের পাখিরাও এডাল থেকে ওডালে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়।

এ সময়ে প্রকৃতি তার আপন রঙ বদলায়। গাছের পাতাগুলোর রঙ পাল্টে যায়। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ, সবশেষে লালচে বর্ণের বিবর্ণ পাতাগুলো আস্তে আস্তে ঝরে পড়ে। শীতের রুক্ষতা শেষে প্রকৃতিতে আসে নতুনত্ব। গাছে গাছে নতুন পাতা আর বাহারি রঙের ফুল জানান দেয় ঋতুরাজ বসন্ত তার রূপের পসরা নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে। বসন্তকে বরণ করে নিতে বাঙালি আয়োজন করে নানা উৎসব।

দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসগুলোতেও এ সময় ঘটা করে পালিত হয় বসন্তবরণ। ব্যতিক্রম হয়নি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়েও। বিগত বছরের মতো এবারও বসন্তবরণ উৎসব পালিত হয়েছে। বসন্তের শুরুতেই ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলোচনা সভা ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বসন্তকে বরণ নেয়। বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে, কপালে টিপ, হাতে কাচের চুড়ি, পায়ে নুপুর, খোঁপায় গাঁদা ফুল আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে ভালোবাসার বসন্ত বন্দনায় মুখরিত করেছে ৩৪ একরের সবুজ ক্যাম্পাসকে।

বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে লালন করতে গানের সুরে মেতে উঠেছিল গোটা ক্যাম্পাস। নৃত্যের তালে তালে, বাদ্যের ঝংকারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্ব। দেশীয় সংস্কৃতির নাচ, গানে মেতে উঠেছিল ক্যাম্পাস। দিনভর এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আক্তার-উল-আলম, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনসুর মুসা, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোতাহার হোসেন মন্ডল, সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মদ মোকাম্মেল, ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) বিভাগের প্রধান মনিরুল হাসান মাসুম।

এরই মধ্যে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়ায় শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে। সারি সারি কাঠবাদাম গাছের মচমচে শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় পায়ের নিচে পড়া শুকনো পাতাগুলোর মড়মড়ে শব্দ শোনা যায়। নতুন পাতার কুঁড়ি এসেছে ডালে ডালে। ক্যাম্পাসের প্রাণ বাদাম তলার রাস্তা যেন লালছে পাতার বাহারি লালগালিচা হয়ে আছে। এই প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে ক্যামেরায় বন্দি করেছে অনেকেই। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত এলেই এমন চিত্র দেখা যায়।

দেখলে মনে হয়ে মৃতগাছ। প্রতিদিনই রাস্তায় পড়ে থাকা পাতাগুলো পরিস্কার করতে করতে ফের জায়গাটা ভরে যায় পাতায়। গাছের তলায় কংক্রিটের বসার স্থানগুলোতে বসন্তের আমেজে গল্প গানে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এমন আবহাওয়াতে বন্ধুদের আড্ডায় ফুচকা প্রেমীরা একচোখ বন্ধ করে নিমিষেই সাবাড় করে দিচ্ছে ফুচকার বাটি।

ঝালমুড়ি আর নানা রকমের মশলা নিয়ে হাজির থাকে হিটলার (মুড়িমাখা মামা)। শুকনো জাল মুড়ি, ডাল দিয়ে ভেজাভেজা ঝালমুড়ি, সান্ধ্য ছোলা শিক্ষার্থীদের খুব পছন্দের। মুড়ি খেতে হলে অবশ্যই কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এ মুড়ি খেতে মাঝে মাঝেই চলে আসেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুড়ি খেতে আড্ডায় মেতে উঠেন তারা। এই বসন্তে হিটলার চত্বরের রঙ বদলে গেছে। মাথার উপর ছাতার মতো গাছ। তবে শীতে পাতাগুলো ঝরে গেছে। এখন শুধু দাঁড়িয়ে আছে সোজা কাণ্ডটি। রাতের আকাশে পাতা ঝরা ডালের ফাঁকে চাঁদকে অপূর্ব লাগে। যেন কেউ ছবি নিজ হাতে ছবি একেঁ চাঁদ বসিয়ে দিয়েছেন। এ দৃশ্য প্রেমিক মনকে পাগল করে।

বসন্তের মৃদু হাওয়াতে পিঠা খেতে হলে যেতে হবে ট্রান্সপোর্ট চত্বরের পিঠা পল্লীতে। বাদামতলার সব পাতা ঝরে গেলেও পিঠা পল্লী গাছে ঘনপাতার সমাহার। কেউ মাঠে, কেউ বেঞ্চে, কেউ দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, আলুর চপ, বেগুনি, মাংস পিঠা। এই পিঠা পল্লীতে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের খাওয়া-আড্ডা।

ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদের বরাতুজ্জামান স্পন্দন বলেন, ‘বসন্তের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ বদল গেছে। শীতকালে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি নিরস হয়েছিল। বসন্তের আবির্ভাবে ক্যাম্পাস ফিরে পেয়েছে প্রাণের উচ্ছ্বাস।

ডালে ডালে নতুন পাতা, বাহারি রঙের ফুল, পাখিদের ডাকাডাকি আর নাতিশীতোষ্ণের রোমাঞ্চকর অনুভূতিই বলে দেয় ক্যাম্পাসে “বসন্ত যেন তার স্বরূপে, পরিপূর্ণতার সাথে আবির্ভূত হয়েছে।’

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের জুয়েল মন্ডল বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি আমার প্রথম বসন্ত। বসন্তের শুকনো পাতা, নয়া পাতার কুঁড়ি ও ফুলের গন্ধ আমাকে মুগ্ধ করে। ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে কচি পাতায় ভরে উঠছে। এছাড়াও ফুল ফুটতে শুরু করেছে। মাঝে মধ্যেই বাতাসে ফুলের সুবাস পাওয়া যায়। সকাল- সন্ধ্যা কোকিলের কুহু কুহু, শিমুল ফুল, মৃদু বাতাসে ভালোই কাটছে বসন্তের দিনগুলি।

নিয়মিত বসন্তে এমন রূপ ধারণ করে ক্যাম্পাসের প্রতিটা প্রাঙ্গণ। প্রকৃতিও যেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বসন্তের সাজে সাজাতে অপেক্ষায় থাকে। আমের মুকুলের মুকুলের ঘ্রাণ জাগিয়ে রাখে ক্যাম্পাস।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)।


গবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়