ক্যাম্পাসের দর্পণ প্রেস ক্লাব
ইকবাল হাসান || রাইজিংবিডি.কম
দর্পণ বা আয়নার সাথে সাংবাদিকদের তুলনা করার কারণ হচ্ছে, আয়নার সামনে গেলে যেমন ব্যক্তির শরীরের সকল ভালো-মন্দ ধরা পড়ে, তেমনি সাংবাদিকদের চোখে মানুষ এবং সমাজের সকল সঙ্গতি এবং অসঙ্গতিগুলো দেখা যায়। আর এ সাংবাদিকদের সংগঠনই হচ্ছে প্রেস ক্লাব।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় নিযুক্ত রয়েছেন। আর ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকে বলা হয় সাংবাদিকতার ‘আঁতুড়ঘর’। এখানে যারা সাংবাদিকতায় নিযুক্ত থাকেন, তাদের অধিকাংশই সাংবাদিকতা বিভাগের না। এ পেশায় ভালোবাসা থেকেই সেই সকল শিক্ষার্থীদের পথচলা।
এক সময়কার আনাড়ি ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা পরবর্তী সময়ে দেশখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ওঠেন। এ সকল ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ও ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি সম্মিলিত সংগঠন। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের খবরের ফেরিওয়ালাদের এমনি একটি সংগঠন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব।
২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল সংগঠনটি একঝাঁক তরুণের কাঁধে ভর করে পথচলা শুরু করে। সময়ের পরিক্রমায় নবীনরা প্রবীণ হয়েছেন। সংগঠনটি যোগ্য নেতৃত্বে সদর্পে এগিয়ে চলছে আজ অবধি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে প্রেস ক্লাব সবার মুখে মুখে এক অনন্য নাম।
সাংবাদিকতা এক চ্যালেঞ্জিং পেশার নাম। সকল বাঁধা কাটিয়ে উঠে স্রোতের উল্টো পথে হেঁটে সত্য সংবাদটি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। সংবাদটি পড়ে হয়তো বোঝা যায় না কত কষ্ট বা ত্যাগের মাধ্যমে সংবাদটি হাতের মুঠোয় এসেছে, কিন্তু একজন সাংবাদিকের কাছে তার তৈরি করা সংবাদটি অন্যরকম ভালো লাগা এবং ভালোবাসার জায়গা তৈরি করে।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা ও তার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার নোবেল বলেছেন, ‘সাংবাদিকতা পেশাটি আপাত চোখে দু’ধরনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আজকাল প্রতীয়মান হচ্ছে। এক- চ্যালেঞ্জিং, দুই- অনেক ক্ষেত্রে লেখার ক্ষমতাটির অপচর্চা। প্রথমটি অবশ্যই সাংবাদিকতা পেশার বৈশিষ্ট্য, কিন্তু দ্বিতীয়টি নয়। ক্ষমতার অপচর্চার বাইরে গিয়ে যারা ক্ষমতার মূলে থাকা শক্তিগুলোর ঘুনে ধরা জায়গুলোতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাংবাদিকতার ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করতে পারে, তাদের এই পেশা স্বাগত জানাবে অবশ্যই। আর ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা হতে পারে এক্ষেত্রে একটি যথাযথ ক্ষেত্র।’
প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহফুজ কিশোর বলেন, ‘ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকে এক অর্থে সাংবাদিকতার 'আঁতুড়ঘর' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার চর্চা নিঃসন্দেহে বিশাল এক চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এ পথ মসৃণ নয়, কণ্টকাকীর্ণ। তবে, ভয়কে জয় করার অদম্য ইচ্ছা এবং সর্বদা সত্যের সন্ধানে চলার স্পৃহা নিয়েই কিছু উদ্যমী সংবাদকর্মীর প্ল্যাটফর্ম আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতির কল্যাণে নিবেদিত থেকেই আমরা কাজ করে যেতে চাই।’
সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিকে পাস কাটিয়ে সত্যের সঙ্গে থাকতে হয়। অনেক সময় নিজ বিভাগের বিরুদ্ধে সংবাদ হলেও ধীরচিত্তে সংবাদটি প্রকাশ করতে হয়। দিন শেষে, সাংবাদিকতা যেন চর্চার বিষয় হয়, সেই প্রত্যাশা সবার।
সুষ্ঠভাবে সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব। শতবর্ষ টিকে থাকুক প্রাণের এ সংগঠনটি, এই আশা সবার কাছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)।
কুবি/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন