ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বালুদস্যুর কবলে দুর্গাপুর, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

কাজী আশফিক রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ৪ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বালুদস্যুর কবলে দুর্গাপুর, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা সোমেশ্বরী নদী একসময় ছিল অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীটি বর্তমানে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে।

গত কয়েক বছর ধরে সোমেশ্বরী নদীতে বালু উত্তোলনের নামে চলে আসছে বালুদস্যুতা। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা সোমেশ্বরী নদীকে করছে ক্ষতবিক্ষত। এতে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল ব্যাপকভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী ও নদীর তীরবর্তী সাধারণ জনগণ। সরকার পাচ্ছে নামেমাত্র রাজস্ব।  হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও  ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দিনমজুরেরা।

কেবল একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অসাধুতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে এখানকার জনজীবন।  মুনাফালোভী এই সম্প্রদায়ের দৌরাত্ম্যের কারণে লড়ি-ট্রাকগুলোতে অতিরিক্ত বালু বোঝাই থেকে শুরু করে সড়কেও চলে অদক্ষ চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। প্রতিদিন শত শত বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে দুর্গাপুরের প্রতিটি রাস্তা বর্তমানে অনিরাপদ। সড়ক দুর্ঘটনা এখানে নিত্য দিনের ঘটনা।

এ এলাকায় বালুবাহী ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়েছে এ পর্যন্ত অসংখ্য প্রাণ হারিয়ে গেছে। বাঙালি, গারো, হাজং, হদি, কোচ, ডালু, বানাই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই এলাকাটি গারো পাহাড়, বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়,  রঙিন পানির কূপ, সোমেশ্বরী নদী, সুসং রাজবাড়ি, রাণীখংয়ে পাহাড়ের চূড়ায় সাধু যোসেফের ধর্ম পল্লী, টঙ্ক ও কৃষক আন্দোলনের পথিকৃ‍ৎ নেত্রী হাজংমাতা শহীদ রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি ও  কমলারানীর দিঘি এমন অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের কারণে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সবসময়ই একটু আলাদা রকম আকর্ষণ।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরে পাহাড় দেখতে এসে লাশ হয়ে ঘরে ফিরল ৪ শিক্ষার্থী। আহত হলো প্রায় ৩০ জনের মতো। এর আগেও আরো চার শিশু মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দুর্গাপুরের বিভিন্ন স্থানে লড়ি ও ট্রাকের চাপায় মারা যায়। সব মৃত্যুই বেদনাদায়ক, কিন্তু এ ধরনের অপমৃত্যু মেনে নেয়া অত্যন্ত কঠিন। নিরাপত্তার দাবিতে স্থানীয়রা দিনের পর দিন আন্দোলন করে আসলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। বরং স্থানীয় প্রশাসনকে হাতে রেখে বালু ব্যবসায়ীরা তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বীরদর্পে।

যে দুর্গাপুরকে আমরা স্থানীয়রা একসময় শান্তির জনপথ বলে গর্ববোধ করতাম, সে জনপদে এখন ভয়ের রাজত্ব চলছে। ঘর থেকে বের হলে বালুবাহী ট্রাক-লড়ির চাপায় পিষ্ট হওয়ার ভয়, আবার ঘাতকদের বিরুদ্ধে কথা বললেও সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে হুমকিধামকি, অত্যাচার, নির্যাতন, হেনস্তার শিকার হওয়ার ভয়। গত ২ মার্চ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে প্রকাশ্যে হামলা করে ৭ শিক্ষার্থীকে মারাত্মকভাবে আহত করে কতিপয় সন্ত্রাসী। এসবের ভিডিওক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ালেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। গুটিকয়েক পরিচিত সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে এ জনপদ যেন এক মগের মুল্লুক।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষা দুর্গাপুর ও সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভাবনাময় এমন সম্পদ ইচ্ছে মতো সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষের ও সোমেশ্বরীর দুর্দশা নিরসনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  স্থানীয় মানুষ চায় না আর একটি প্রাণ অকালে ঝড়ুক, চায় না অন্যায়, অত্যাচার, লুটতরাজ। সবাই চায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


রাবি/হাকিম মাহি 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়