ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পঞ্চকাহনের বিদায়

আহমেদ ফাহিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১০ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পঞ্চকাহনের বিদায়

সেদিন সোনালী রোদ্দুর ছিল। প্রকৃতিতে মিশে ছিল বসন্ত। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী  মোহাম্মদ  ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে সাজ সাজ রব। চলছে বর্ণিল পোশাক পরিহিত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। ছেলেদের পরনে পাঞ্জাবি, মেয়েদের পরনে শাড়ি। দেখে মনে হবে যেন বসন্ত উৎসবে মেতেছে সবাই।

সাধারণত উৎসব ঘিরে থাকে আনন্দ, খুশি, উল্লাস। কিন্তু এই উৎসবে আনন্দের চেয়ে বেশি ছিল বেদনা। তাদের মন ভারাক্রান্ত, তারা জানেন, আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়কে এভাবে পাওয়া যাবে না।

‘আমার যাবার সময় হলো-দাও বিদায়, মোছ আঁখি দুয়ার খোল, দাও বিদায়’- ঠিক এমন চরণই সেদিন মনে আসছিল ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) খাদ্যপ্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের। দিনটি ছিল তাদের বিদায়ের দিন। বিদায়কে কেন্দ্র করে ‘পুলকিত হোক সংক্রান্তির মঞ্চ, হৃদয়ে ভালোবাসার পঞ্চ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘পঞ্চকাহন’ শিরোনামে আয়োজন করা হয় এই বিদায় অনুষ্ঠানের।

বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতাকে আরো স্মৃতিময় করতে ছিল নানা আয়োজন। রঙ উৎসব, ফ্ল্যাশ মোভ, বেলুন উৎসব, ফটোসেশন, র‍্যালি, গল্প আড্ডা, সাংস্কৃতিক আয়োজন। বর্ণিল রঙ উৎসবে সাদা টি-শার্টে মার্কার দিয়ে লিখে রাখে একে অপরের উদ্দেশ্যে অমীয় বাণী, যা তারা সংরক্ষণ করবে সারাজীবন। ফ্ল্যাশ মোভে দল বেঁধে গানের তালে মেতে ওঠে, বেলুন উৎসবে বেলুন উড়িয়ে বিদায়কে আরো স্মৃতিময় করে রাখে বিদায়ী শিক্ষার্থীরা এবং র‍্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দিদার উল আলম, খাদ্যপ্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভাগের শিক্ষক এবং বিদায়ী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ করে নতুন মাত্রা।

বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম। এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে ছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, খাদ্যপ্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান রুহুল কবির এবং  বিভাগের অন্য শিক্ষক, বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বিদায়ী শিক্ষার্থীদের  প্রতি দিকনির্দেশনামূলক ও তাদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল কামনা করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে মঞ্চে এসে স্মৃতিচারণ করেন তাদের এই চার বছরের অভিজ্ঞতা। এইতো সেদিন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের  প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু।  নতুন ক্লাস, নতুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, পরিচয় আর হইহুল্লোড়, ক্লাস, পরীক্ষা, ঘোরাঘুরি এর মধ্য দিয়ে দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল অনার্সের চারটি বছর।

এত সুমধুর, অমলিন স্মৃতি বলতে গিয়ে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে বেজে ওঠে বেদনার সুর। বিভাগের শিক্ষক, কর্মচারী এবং বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই যেন তাদের পরমাত্মীয়। নিজ পরিবারের মতই ১০১ একরে কাটানো চারটি বছর তাদের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। বিদায় অনুষ্ঠানে তাদের এই আনন্দের অংশ হয়েছিল বিভাগের শিক্ষকরা। তাদের উদ্দেশ্যে আশীর্বাদস্বরূপ ও দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন বিভাগের শিক্ষকরা।

বিদায় অনুষ্ঠানকে স্মৃতিতে গেঁথে রাখতে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের, যেখানে অংশ নেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আনন্দ, ঠাট্টা, মজা, আবেগে আত্মহারা হয়ে ওঠেন সবাই। কেউ নাচছে, কেউবা গান গাইছে, কেউ করছে কবিতা আবৃত্তি। সব মিলিয়ে মনেই হয়নি এটি তাদের বিদায়ক্ষণ। বরং এটি যেন তাদের মিলনমেলা। শেষ বারের মতো তারা মেতে উঠেছেন আনন্দে।

দিনব্যাপী চলা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের মনেই হয়নি কখন সন্ধ্যা নেমে এলো। এবার যে বিদায় নেওয়ার পালা। ছেড়ে যেতে হবে প্রাণপ্রিয় ১০১ একরের ক্যাম্পাস, প্রাণপ্রিয় বিভাগ, প্রিয় শিক্ষক, সহপাঠি, স্নেহের জুনিয়র ভাইবোনদের। ভালো থাকুক প্রিয় ১০১ একরের ক্যাম্পাস, ভালো থাকুক প্রিয় স্বপ্নভূমি। বন্ধুত্বের বন্ধনগুলো টিকে থাকুক আজীবন এমনটাই প্রত্যাশা বিদায়ী শিক্ষার্থীদের।

 

নোবিপ্রবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়