ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ছেঁড়া দ্বীপে কুবির নৃবিজ্ঞানীরা

এবিএস ফরহাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১২ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছেঁড়া দ্বীপে কুবির নৃবিজ্ঞানীরা

নীল জলরাশি। যেখানে দৃষ্টি আটকে যায়, মনে হয় নীল আকাশ আর নীল জল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। চারদিকে সমুদ্র, সারি সারি নারিকেল গাছ আর বালিতে মাথা উঁচু করে থাকা প্রবাল পাথর যেন মুক্তার দানার মতো আলোকিত করছে পুরো দ্বীপ।  

তীরে বাঁধা নৌকা, মাঝিরা ডাকছেন সমুদ্রে ঘুরতে নেবেন বলে। নৌকায় ঘুরতে মাঝিরা যতটা না টাকা নেন, তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা উপহার দেন। কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ নারিকেল জিঞ্জিরা খ্যাত সেন্টমার্টিন দ্বীপের কথা।

সেদিনের ছিল ২৭ ফেব্রয়ারি। মধ্যরাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জড়ো হন ক্যাম্পাসে। পূর্বে থেকে তিনটি বাস অপেক্ষায় ছিল। অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে টেকনাফের উদ্দেশে বাসযাত্রা শুরু হয় রাত ১১টায়। বাস ছাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় ট্যুরের অসাধারণ সব মুহূর্ত। গল্পে-গানে মেতে ওঠে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

ভোরের সূর্যের আলোয় ঘুম ভাঙে সবার। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে প্রথমেই চোখে পড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। রোহিঙ্গা চলাচল, বসতবাড়ি দেখে বিভিন্ন রকমের মক্তব্য ওঠে আসে শিক্ষার্থীদের আড্ডায়। ওই দিন সকালেই বাস পৌঁছে যায় নির্ধারিত গন্তব্য টেকনাফ ঘাটে। সেখানে সকালে খাবার শেষে  সবাই এগিয়ে যান ঘাটে বাঁধা অপেক্ষমাণ জাহাজে।

সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজভ্রমণ শুরু হয়। যতদূর দু’চোখ যায় সবুজ পাহাড়, সাদা মেঘ, বালুকারাশি, ঝাউবাগান, বিশাল জলরাশি। জাহাজ ছাড়ার সাথে সাথে জাহাজের পিছু নেয় সাদা গাঙচিল। পাখি দেখে জাহাজের যাত্রীরা এগিয়ে যান করিডোরে। চিপস, বিস্কুট জুড়ে মারছে পাখির দিকে। আর গাঙচিল খাবার খুঁজে পিছু নিতে থাকে অনেক দূর।

তবে জাহাজ গভীর সমুদ্রে প্রবেশ করলে হারিয়ে যায় এসব পাখি। জাহাজ থেকে সবাই উপভোগ করেন যৌবনের নাফ নদী, বাংলাদেশ-মায়ানমারের পাহাড়, এ পারের তীরজুড়ে ছোট ম্যানগ্রোভ বন, তারুণ্যদীপ্ত সবুজ পাহাড়, টেকনাফ সৈকত আরো কত কী!

নাফ নদীর ছোট ঢেউ খেতে খেতে জাহাজ পৌঁছে যায় গভীর সমুদ্রে। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে জাহাজের গায়ে। ভেসে আসে ঢেউ, কিনারা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে অনেক বহুদূর জুড়ে।

ভাসতে ভাসতে দুপুর ১টায় জাহাজ ভিড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘাটে। গভীর সাগর উপভোগ করতে করতে ক্লান্ত সবাই। এবার একটু বিশ্রাম দরকার। হোটেলে ওঠে দুপুরের খাবার শেষ করে হালকা বিশ্রাম নিয়ে সবাই বের হয়ে পড়ল ছেঁড়া দ্বীপ উপভোগ করতে। সাগরের জলরাশি আর নারিকেল বৃক্ষের সারি এই দ্বীপকে আলোকময় করে তুলেছে। বালুময় সৈকত, প্রবালের প্রাচীর আর গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য।

উত্তাল সাগরের নোনা জল যখন আছড়ে পড়ে কেয়া গাছের ফাঁকে, ঝিরি ঝিরি বাতাসে তৈরি করে সাদা ফেনা, যা মাতাল করে। দল বেঁধে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঘুরছেন, মাঝে মাঝে কাঁকড়া ভাজা, সুন্দরী মাছ ভাজা খাচ্ছেন। দ্বীপে বসে গান করার মজাই আলাদা। কখনো কখনো শিক্ষকরাও যোগ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের আড্ডায়।

রাতের খাবার শেষে লিপা ম্যামের ডাকে সবাই জড়ো হয় সমুদ্র তীরে। ছেঁড়া দ্বীপে নৃবিজ্ঞান যাবে আর চিহ্ন রেখে আসবে না, তা কী করে হয়। মোমবাতি হাতে সবাই বসে পড়ে নৃবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ লিখতে। সবার হাতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। রাতের অন্ধকারে একেক জনকে দেখে মনে হচ্ছে, ইংরেজি বর্ণমালার একেক বর্ণ। সবশেষে গান করতে করতে ঘুমাতে যান সবাই। সেন্টমার্টিনে সাইকেল ভ্রমণ দারুণ আনন্দের ছিল। পরের দিন ভোরে সাথে যাওয়া একজন স্যারকে নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা।

সেন্টমার্টিনের সর্ব দক্ষিণের অংশ ছেঁড়াদ্বীপ। ট্রলারের ইঞ্জিনের বিকট শব্দে পানির ঢেউয়ের তালে তালে গানে- গল্পে মেতে ওঠে সবাই। ট্রলার থেকে নেমে ডিঙ্গি নৌকায় যেতে হয় প্রবাল দ্বীপে। স্বচ্ছ পানিতে ফটোগ্রাফি আর হাসি আড্ডায় নিজেকে হারিয়ে বিশাল জলরাশিতে স্নান আজও মনে পড়ে। সমুদ্র দেখার ফাঁকে ফাঁকে চলে কেনাকাটা। গলার মালা, জুতা, পুঁথি, শুটকি মাছসহ হরেকরকম জিনিসপত্র কেনেন সবাই।

এবার ফিরতে হবে নিজ বাসস্থলে। কারো মন চাইছে না সৌন্দর্যের মায়ায় পড়ে যাওয়া দ্বীপ ছাড়তে। তবু ফিরতে হবে। বলা হয়ে থাকে ফেরার পথটা শেষ হয় না সহজে। আবারো সেই জাহাজে ফেরা। বিশাল সমুদ্র আর নাফ নদী পেরিয়ে আবার টেকনাফে। এবার গাঙচিল দিল উষ্ম অভ্যর্থনা।

সেখান থেকে এবারের গন্তব্য পৃথিবীর বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল রাতের বিচ উপভোগ, রাতে খাবার আর কেনাকেটা। সেখান থেকে কেনাকাটা শেষে গন্তব্য এবার নিজ বাড়ি। হাজারো মধুর আর সুখময় স্মৃতি পেছনে ফেলে এবার ফিরে আসলাম মায়ের কোল সমতুল্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।


কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়