করোনা আতঙ্ক, যা বলছেন গবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
রাকিবুল হাসান || রাইজিংবিডি.কম
এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লা এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচ্য বিষয় করোনা। এই ভাইরাসে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খাচ্ছে গোটা বিশ্ব। অনলাইন দুনিয়ায় এ নিয়ে বিভ্রান্তিও কম নয়। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় যারপর নাই উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের মতামতগুলো লিখে পাঠিয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান।
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল মন্ডল বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মূল আলোচ্য বিষয় করোনাভাইরাস। এশিয়ার প্রায় সব কয়েকটি দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। উন্নত দেশগুলোতে এই ভাইরাসের মোকাবিলা করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তাই আমাদের উচিৎ সতর্কভাবে চলাফেরা করা। তবে, এটার বিস্তার যেহেতু বেশি, তাই অতি শীঘ্রই গোটা বিশ্ব এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে।
মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, কয়েক দিন আগে জাতিসংঘ করোনাকে মহামারি বলে ঘোষণা করেছে। অতীতেও এমন অনেক মহামারির সম্মুখীন হয়েছে এই বিশ্ব। তবে দুঃখের বিষয়, করোনাভাইরাস নিয়ে অনলাইন দুনিয়ায় অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। করোনা অনেক দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা থাকলেও এটিতে মৃত্যুর হার অতীতের অন্যান্য মহামারির তুলনায় অনেক কম। তাই, সব গুজবে কান দেওয়া যাবে না।
ভাষা যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন কবিতা জানান তার মতামত, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেসমস্ত দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সেসমস্ত দেশে এখন শীতকাল। আর আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই গ্রীষ্মকাল দরজায় কড়া নাড়ছে। আশা করা যায়, আমরা আশঙ্কা মুক্ত।
জানা যায়, করোনা ভাইরাস ২২°-২৭° তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না। এখন এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রনি আহম্মেদ বলেন, এখনো করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তাই, আমাদের সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। জনসাধারণকে সচেতন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদ বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস আক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম। বাংলাদেশিদের খাদ্যাভ্যাস ও এনজাইম এসিই-২ পদার্থের অনুপাত শরীরে কম থাকায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। করোনা একটি সংক্রামক ব্যাধি। এই সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে সতর্কতার সাথে চলাফেরা দরকার।
নভেল করোনাভাইরাস সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। এ ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য সবাইকে কাজ করা উচিৎ। যেহেতু এটি সংক্রামক ব্যাধি, একজনের থেকে অন্যজনের হয়ে থাকে, তাই অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বনে আপনি আমি চাইলেই এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারি, বলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক মাহতাবুর রহমান সবুজ।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা, কাশি এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে এই ভাইরাস। বিস্তার সীমিত পর্যায়ে রাখতে মেডিক্যাল মাস্ক এবং স্প্রে ব্যবহার করা উচিৎ।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ বাপ্পি বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ধরা পরেছে। বিভিন্ন ধরনের সংবাদের জন্য অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আসলে এমনটা হওয়ার কিছু নেই। সচেতনতাই করোনা মোকাবিলার সর্বোত্তম প্রতিরোধ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে চীনের করোনাভাইরাস। চীনের উহানে প্রথম উদ্ভব হয় এই ভাইরাস। অতিক্ষুদ্র জীবাণু হলেও ভয়ানক তার ক্ষমতা। সাপের চেয়েও প্রাণঘাতী এ জীবাণু। নাগালবদ্ধ নেই প্রতিষেধক। এই প্রাণঘাতী জীবাণুর কাছে গোটা বিশ্বের মানুষ আতঙ্কিত।
জানা যায়, করোনাভাইরাস জুনোটিক ব্যাধি। অর্থাৎ এই ভাইরাস পশুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, সম্প্রতি এই ভাইরাস বাদুড়, সাপ, ইঁদুর ও সামুদ্রিক খাবারের ফলেই ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করা হয়েছে।
এখন আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকেও অন্য মানুষের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে এলে বা তার সঙ্গে হাত মেলালেও করোনাভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হলো- জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি। এ সকল অসুস্থতা আরো বাড়লে কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অবশেষে মৃত্যুও হতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তিন মাসেও করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহবুবা খাতুন বলেন, করোনাভাইরাস নতুন প্রজাতির ভাইরাস। যা পূর্বে মানবদেহে সংক্রমণ হয়নি। সচেতনতা কতটুকুই বা আমাদের প্রতিরক্ষা করতে পারবে প্রশ্ন রয়ে যায়।
প্রতিদিন হাজারো মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসছে। সবচেয়ে ভয়ের কারণ এটি। পর্যাপ্ত থার্মাল স্কানার আমাদের নেই। যারা বিদেশ থেকে দেশে আসছে, তাদের পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই ছাড়া জনসাধারণের মাঝে যেতে দেওয়া উচিৎ নয়।
ড. মাহবুবা খাতুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে একসঙ্গে শত শত শিক্ষার্থী থাকছেন। প্রতিনিয়ত অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সেক্ষেত্রে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে অবস্থান না করাই উত্তম। ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অফিসগুলোতে কারো এধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আর নিজে থেকে সর্তক হয়ে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, শীঘ্রই গোটা বিশ্ব এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে। আবার স্বস্তি ফিরে পাবে সাধারণ মানুষ।
গবি/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন