ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাবি চিকিৎসাকেন্দ্রে সেই সফদার ডাক্তার

সাইফুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০১, ১৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাবি চিকিৎসাকেন্দ্রে সেই সফদার ডাক্তার

কবিতায় পড়েছিলাম ‘সফদার ডাক্তার, মাথা ভরা টাক তার, খিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে...কলেরার রোগী এলে, দুপুরের রোদে ফেলে, দেয় তারে কুইনিন খাইয়ে’।  এমনই এক কবিতার চরিত্র ফুটে ওঠেছে বর্তমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে।

এখানে শিক্ষার্থীরা যে যেকোনো রোগ নিয়ে গেলে শুধু একটা করে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ও একটি ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে বিদায় দেন। এতে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার ১১১ জন। কিন্তু এসব পদের ৪৯টি ফাঁকা রয়েছে। ফলে, চিকিৎসকের অভাবে মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চিকিৎসক নিয়োগে অনুমোদন দিলেও নিয়োগ দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষ একটি অর্গানোগ্রাম প্রস্তুত করে। এতে ৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ইমার্জেন্সির জন্য ৬ জন মেডিক্যাল অফিসার, ৬ জন টেকনোলজিস্ট ও ৪ জন নার্সসহ মোট পদ রয়েছে ১১১টি। কিন্তু এর আওতায় অ্যাডিশনাল চিফ, ডেপুটি চিফ, সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৪৯টি পদ খালি রয়েছে।

প্রায় দুই বছর আগে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার পর ইউজিসিতেও অনুমোদিত হয়। কিন্তু এখনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অনেক পদ খালি রয়ে গেছে।

চিকিৎসাকেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা বলছেন, শূন্য পদগুলোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন ব্যক্তিরা জানেন। তবুও তারা নিয়োগ পূর্ণ করছেন না। চর্ম ও যৌন রোগ, নাক-কান-গলা, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকায় রোগীদের অন্যত্র চিকিৎসা নিতে বলা হয়। তবে একেবারেই যে নিয়োগ হচ্ছে না তা নয়। বছরে যে কয়েকটা নিয়োগ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক পদ খালি হচ্ছে।

চিকিৎসাকেন্দ্রের সার্বিক সেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোনো সমস্যা নিয়ে গেলেই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ও একটি করে ইনজেকশন দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বেশি কিছু হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। এছাড়া চিকিৎসাকেন্দ্রে ১০টি বিভাগ রয়েছে। তার মধ্যে ২/৩ বিভাগে প্রতিদিন ডাক্তার বসেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় গিয়ে আমরা ডাক্তার পাই না। অনেক সময় বসে থাকতে হয়। ডাক্তাররাও অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘আমার রুমমেট অসুস্থ হলে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাই। দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পর চিকিৎসক গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিলেন। তিনি দুর্বল হওয়ায় আমি স্যালাইন দিতে চিকিৎসককে জানাই। রোগীর হাতে ক্যানোলা লাগিয়ে দিতে বললে, চিকিৎসক বলেন, তিনি ক্যানোলা লাগাতে জানেন না। অনেকটা অবাক হলাম। যিনি ক্যানোলা লাগাতে পারেন না, তিনি কীভাবে ডাক্তার হয়েছেন?’

চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক তবিবুর রহমান শেখ বলেন, ‘অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী নিয়োগ দিলে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলা যাবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেটি ঝুলে আছে। ইউজিসি অনুমোদন দিলেও প্রশাসন বলছে তারা নিজেদের মতো নিয়োগ দেবে।’

‘আমাদের ইনডোর ব্যবস্থা নেই। ফলে শিক্ষার্থী পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তবে, ইনডোরের অর্গানিজম তৈরির চিন্তা করছি। ইনডোরের জন্য শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরি হবে’, বলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘সর্বক্ষেত্রেই জনবল বেশি থাকলে কাজের ভারটা কম থাকে। কিন্তু জনবল কম থাকলে, তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যারা দায়িত্বরত আছেন তাদেরকে তা পুষিয়ে নিতে হয়। চিকিৎসাকেন্দ্রে যেসব পদ ফাঁকা রয়েছে, তা পূরণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। তবে, যেসব ডাক্তাররা বর্তমানে আছেন, তাদের দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীদের সঠিক সেবাদান করা।’

 

রাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়