ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

একদণ্ড শান্তি দিলো বৌদ্ধবিহার

নাইমুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ২০ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একদণ্ড শান্তি দিলো বৌদ্ধবিহার

বছরজুড়ে থাকে ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন। এসবের মধ্যে ব্যস্ত থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে নিজেকে জড়বস্তুর মতো মনে হয়। শহরের কোলাহল আর ইট-পাথরের নগরীর ক্লান্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে প্রাচীন ঐতিহ্যের টানে ছুটে চলে যান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আরবি সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, মহাস্থানগড় ও বেহুলার বাসর ঘর। এসব ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের টানে নিঝুম রাতে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে পাড়ি দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ১১ মার্চ। বাসের সিট ধরা নিয়ে শুরু হলো বন্ধুদের মাঝে প্রতিযোগিতা, কে কোথায় বসবে! ভ্রমণ কমিটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পূর্ব ঘোষিত নির্দেশ অনুযায়ী বাসের প্রথম চার সারি সিট রাখতে হয়েছে শিক্ষক ও মেয়েদের জন্য। মেয়েদের অবাসিক হল থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে রাত প্রায় ১২টায় যাত্রা শুরু হলো।

কুষ্টিয়া শহর থেকে পথিমধ্যে যোগ দিলো বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন ও অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান। নওগাঁর উদ্দেশে বিরামহীন চলতে থাকল বাসটি। যাত্রা বিরতিতে রাস্তার পাশে অবস্থান করতেই দেখা যায় কেউ নামাজের জন্য ওজু করছেন, কেউ ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য দিকে নিজেকে পরিপাটি করতে মেয়েদের মাঝে কেউ বা ফেসওয়াশে ব্যস্ত। পশ্চিম আকাশে একটু আলো ফুটতেই গ্রামের কিছু মানুষকে দেখা যায় মেহমানদারি করার জন্য পায়েস রান্না করে এনে প্লেটে করে খাওয়াচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুদের।

ট্যুরে দায়িত্বে থাকা প্রধান তিন জনের মধ্যে বিপ্লব খন্দকার, সাইফুল্লাহ সাহাব উদ্দিন ও মাহমুদ ফয়সালের পরিচালনায় চলতে থাকে সব কার্যক্রম। রাস্তার পাশের হাজারো গাছপালা, নদী-নালা অতিক্রম করে ছুটে চলছে উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের মোহে। গাড়ির ভেতরে সাউন্ডবক্সে বাজতে থাকা আধুনিক গানের সাথে তাল মিলিয়ে ড্যান্সে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এভাবে চলতে থাকা বাসটি সকাল ৮টায় গিয়ে পৌঁছে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে।

গাড়ি থেকে নেমেই শুরু হলো সকালের নাস্তা। ভুনা খিচুড়ি সাথে ডিম ও বেগুন ভাজি। নাস্তা শেষে প্রাচীন স্থাপত্য পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার দেখার উদ্দেশে জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকিট কিনে প্রবেশ করা হলো ভেতরে। প্রবেশ করতেই মন কেড়ে নিলো বৌদ্ধ বিহারের স্থাপত্য শিল্প। এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। এছাড়াও চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন।

পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব (৭৮১-৮২১) অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এটি নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই বিশাল স্থাপনা আবিষ্কার করেন। বিহারটি পরিদর্শন শেষে রওয়ানা হলো বগুড়ার মহাস্থানগড়ের উদ্দ্যেশে। পূর্বের ন্যায় এখানেও প্রতিটি স্থানে জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকিট মূল্য রাখা হচ্ছে। মহাস্থানগড় দেখা শেষে এক কিলোমিটার গাড়ি যোগে ও পায়ে হেঁটে গিয়ে প্রবেশ করতে হলো বেহুলার বাসর ঘরে। এটি ১২০০ শতাব্দির মধ্যে নির্মিত হয়। এ স্থাপত্যটি পূর্ব-পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং ত্রিকোণবিশিষ্ট ১৭২টি কক্ষ রয়েছে।

বেহুলার বাসর ঘরটি বর্তমান গবেষকদের মতে ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এটি পরিদর্শন করে বগুড়ার ঐতিহাসিক হোটেল সোনার বাংলায় মধ্যভোজের আয়োজন করা হয়। খিদে পেটে গরুর মাংস, গরম ভাত-ডাল আর সবজিতে মেতে ওঠে খাবারে টেবিল আর ভরে যায় পেট। মধ্যভোজের পর গাড়ির ভেরতে বগুড়ার বিখ্যাত দইয়ের কাপে ঝড় ওঠে। তৃপ্তি পেলো হৃদয়, পূর্ণতা হলো খাবারের সব আয়োজন।

পরবর্তী সময়ে নাটোরের উত্তরা গণভবনের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে গ্রুপ ফটো তুলে নিজেদের বন্দি করে রাখা হলো ফ্রেমে। ফটোসেশন শেষে গাাড়িতে ওঠে গানের তালে মাতিয়ে ঝড়ের বেগে এসে পৌঁছাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ১৭৫ একরে। ট্যুরিস্টদের হৃদয় থেকে বিদায় নিলো শহরের ক্লান্তি, আর কোলাহল, স্বপ্ন দেখতে শুরু করল এক নতুন দিগন্তের।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়