ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বায়ুদূষণ-পরিবেশ বিপর্যয় এবং কিছু কথা

আব্দুল ওয়াহিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০০, ২১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বায়ুদূষণ-পরিবেশ বিপর্যয় এবং কিছু কথা

বায়ুদূষণ সম্পর্কে জানতে হলে আগে বায়ুর পরিচয় জানা দরকার। আমরা ভাবতে পারি, সারাজীবন যে বায়ু গ্রহণ করে আসলাম, আজ আবার বায়ু চিনতে হবে কেন! বলব হ্যাঁ, আমরা আসলে বায়ু চিনি না, আর এ সম্পর্কে জানিও না। যদি জানতাম তাহলে যে বায়ু আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, আমরা সেটিকে দূষণ করতে পারতাম না। যেমন- আমরা কখনো স্বজ্ঞানে আগুনে ঝাঁপ দেই না।

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। মাটি, পানি এবং বায়ু হলো পরিবেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই তিনটি উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কোনো একটিকে ছাড়া মানুষ, প্রাণী এমনকি উদ্ভিদকুলও বেঁচে থাকতে পারে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে বায়ু, গাছ মাটিস্থ পানি, বাতাসের CO2 এর  মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে, সাথে O2 উৎপন্ন করে পরিবেশে ছেড়ে দেয়, যা কিনা মানুষসহ সকল প্রাণী শ্বসনের জন্য ব্যবহার করে থাকে।

আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের ঘরবাড়ি, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র, ইত্যাদি তৈরির জন্য নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলছি, ফলে পরিবেশে CO2 এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ঢাকা শহরে প্রায় হাজার হাজার গাড়ি চলছে, যা থেকে প্রচুর CO2 ও অন্যান্য গ্যাস র্নিগত হচ্ছে। আবার কলকারখানা, ইটের ভাটা, ২০ বছরের পুরাতন গাড়ি ইত্যাদি থেকে প্রচুর CO2 গ্যাস র্নিগত হচ্ছে। গৃহস্থালির ময়লা, প্লাস্টিক, পলিথিন পোড়ানো হলে CO, CH4, SO2, NOX ইত্যাদি গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। পৃথিবীর সব দেশেই নগরায়ণ ও শিল্পায়নের হার খুব দ্রুত বহুগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের ঢাকাসহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এমনকি ময়মনসিংহ অঞ্চলেও দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলেই পরিবেশের বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলেই ঢাকা শহরের বায়ু দূষিত হচ্ছে। ঢাকা শহরের ৩০-৪০ বছরের পুরাতন গাড়ির সংখ্যায় বেশি, যা প্রতিনিয়তই পরিবেশে বিভিন্ন গ্যাস নির্গত করছে, যা কিনা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্বের যে পাঁচটি দেশ বায়ুদূষণে শতভাগ শিকার, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের ঢাকা শহর। বিশ্বে বায়ু দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান পঞ্চম।  ২০১৪ সালের WHO এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে বিশ্বে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। বায়ুদূষণের ফলে ঢাকার মানুষের চলাফেরা, কাজকর্ম ইত্যাদি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ঢাকার পরিবেশ খুবই বিষাক্ত এবং ঢাকার অর্থনীতি খুবই হুমকির মধ্যে আছে। বায়ুদূষণের কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক।  বায়ুদূষণের কারণে স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনি রোগ, জন্মগত ক্রটি, শুক্রানুর ক্ষতি, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি মানসিক সমস্যা হচ্ছে।

সূর্যের রশ্মি যেমন ওজন স্তর ক্ষতি করে, ঠিক তেমনিভাবে দূষিত বায়ু মানুষের ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, ফলে মানুষের ক্যান্সার নামক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরের মানুষ তীব্র সমস্যায় ভূগছে। এতে মানুষের মস্তিষ্কে চাপের সৃষ্টি হয়, যা মানুষের গুরুমস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে তা মানুষের ঘ্রাণ, চিন্তা-চেতনা, স্মৃতি, জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক লোপ করে। এতে মানুষ ঠিক মতো কাজ করতে পারে না, কাজে অমনোযোগী হয়, ঠিকমতো অফিসে যাওয়া হয় না ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই কারণে মানুষের আয়ের উৎস ও হ্রাস পাচ্ছে, যা কিনা অর্থনীতির ওপর  বড়  ধরনের চাপের সৃষ্টি করতে পারে।

বায়ুদূষণের কারণে ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোর পরিবেশ ও সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে নানা পেশাজীবী মানুষের কর্মক্ষেত্র হ্রাস পাচ্ছে, জনজীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বায়ুদূষণ একটি মারাত্মক আতঙ্ক। এই দূষণ প্রতিরোধ করতে হলে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আবার সরকারের পাশাপাশি নানা পেশাজীবী মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বায়ুদূষণ রোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে হবে। এটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে টিভি মিডিয়ায়, সংবাদপত্রে, সামাজিক, সাংস্কিতিক সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করতে হবে।

আমরা জানি, আমরা যাকে আত্মা বলি বা জীবন বলি, সেটাই বিজ্ঞানে বায়ু-বাতাস-অক্সিজেন বলে। সুতরাং বায়ুদূষণে অর্থনীতি যে ধ্বংস হবে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো বেঁচে থাকা। এভাবে চলতে থাকলে একসময় উদ্ভিদ ও প্রাণী বলতে কিছুই থাকবে না। ধ্বংস হবে প্রাণিকুল।

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। সর্বোপরি, সরকারের পাশাপাশি আপনি, আমি সচেতন হলেই কিন্তু বায়ুদূষণের মতো বড় একটি মারাত্মক সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জাককানইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়