ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসে

আহসান হাবীব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ২৪ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসে

বিশ্ব গ্রাস করে ফেলছে একটি ক্ষুদ্র অণুজীব। করোনাভাইরাস নামের এই মহামারিটি মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানেই ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বের প্রায় সব দেশে। এর কবল থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও।

এদিকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গত ১৭ মার্চ থেকে। সে অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে দ্রুত চলে গিয়েছে যার যার বাসস্থানে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেওয়া মানে সে এক অন্যরকম আনন্দ। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট, ভাইবা, প্রেজেন্টেশনের জ্বালা থেকে কিছু দিনের জন্য রেহাই পেলেই শিক্ষার্থীরা যেন মহাসমারোহে বাড়ির দিকে রওনা হয়। শৈশবে পড়ে আসা ‘আজ আমাদের ছুটি রে ভাই, আজ আমাদের ছুটি’ মনে মনে আউড়িয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বাড়ি চলে যায় অনেকেই।

তবে এবার আর সেই আনন্দ নেই। শিক্ষার্থীরা করোনার প্রভাবে ছুটি পেয়েছে বটে, তবে বাড়িতে বড় ছুটি কাটানোটাও হয়ে গেছে বিরক্তিকর। যে ছুটি বহু প্রতীক্ষার, সে ছুটি আনন্দের। কিন্তু মৃত্যুর গন্ধ বেয়ে যে ছুটি আসে সে ছুটি বিষাদের, নিরানন্দের।

ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে এসেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামছিল আরেফিন বাপ্পি। তার কাছে এ এক ভয়াল ছুটি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এহেন পরিস্থিতিতে জনসমাগম নিষিদ্ধ হওয়ার ধারাবাহিকতায় বন্ধ হয়েছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বাড়ি এসেও অন্যান্য ছুটির মতো তেমন আনন্দ পাচ্ছি না।  অবরুদ্ধ হয়ে আছি বাড়িতে। প্রাণের ক্যাম্পাসকে অনেক মনে পড়ছে। ভয় হচ্ছে ক্যাম্পাসে যেতে পারব আবার? তবে শুধু ভয় পেয়ে বসে নেই আমি। আমার এলাকার মানুষদের মাঝে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে, আছি বাড়িতে, কিন্তু মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসে।’

কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী আজমীর আলম বলেছেন, ‘বেদনার এ ছুটি অপ্রত্যাশিত ছিল।  অপ্রত্যাশিত ছুটি পেলে খুশিই হতাম। তবে, এবার কেন জানি ভয় হচ্ছে। এক ছোট্ট অণুজীব পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে দেশের পর দেশ।  সম্ভাবনাহীন এক স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি। এ পরিস্থিতিতে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই করার নেই। সেটিই করছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সূচনা দাসের কাছে এ ছুটি বিষাদের। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় কান্নাকাটি করতাম স্কুলে না যাওয়ার জন্য।  বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও ছুটি পেলেই ছুটে যাই বাড়ির দিকে। যেখানে শৈশব, কৈশোর কাটিয়েছি সে স্থান কি ভোলা যায়? এবারও এসেছি, তবে মনে আর নেই ছুটি পাবার সেই আমেজ। কী যেন এক অদৃশ্য বিষাদ এসে ভর করেছে অন্তরে। সারাক্ষণ শুধু মন কাঁদে ক্যাম্পাসে ছুটে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পিছুটান রয়েছে, সে পিছুটান যন্ত্রণাময়। এ ছুটিও যন্ত্রণাময়।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জিনিয়া বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিন আগেও প্রতিটি দিনের শুরু এবং শেষ হতো ব্যস্ততার মাঝে। ক্লাস, পরীক্ষা, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে ব্যস্ত থাকতে থাকতে প্রায়ই মনে হতো কবে একটু ছুটি পাবো। হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সেই কাঙ্ক্ষিত ছুটি পেয়ে গেছি। কিন্তু এই ছুটিতে কোনো আনন্দ নেই।  প্রতিটা মুহূর্ত এখন আতঙ্কে কাটছে। জীবন মানেই হয়তো অনিশ্চয়তা, কিন্তু এই মুহূর্তে অনিশ্চয়তা বহুগুণ বেড়ে গেছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করায় বেশ আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছি। কী ঘটতে চলছে বাংলাদেশে! শঙ্কায় কাটছে প্রতিমুহূর্ত। ছুটি পেয়েও কোনো মতেই নির্ভার লাগছে না। তবে, আমাদের এ মুহূর্তে নিজের বাসায় থাকাটাই উত্তম।’

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ (৩য় বর্ষ), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জাককানইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়