ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্বাধীনতা দিবস

স্বাধীনতা: বেকারত্ব দূরীকরণই হোক অঙ্গীকার

আমজাদ হোসেন হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাধীনতা: বেকারত্ব দূরীকরণই হোক অঙ্গীকার

বিশ্বে চলছে একটি হাহাকার অধ্যায়। প্রায় এক চতুর্থাংশমানুষ আজ গৃহবন্দী। বাংলাদেশও অনেকটা আক্রান্ত এ ব্যাধিতে। তার মধ্যেই স্বাধীনতার ৪৯ বছরে পা রাখল বাংলাদেশ। ৫০ বছর পূর্ণ হবে ২০২১ সালে। সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব করতে চেষ্টা করছি আমরা সবাই।

স্বাধীনতা দিবসে কী ভাবছেন আগামীর বাংলাদেশ খ্যাত তরুণ শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতার মাসে তাদের ভাবনা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। ভাবনাগুলো সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন হৃদয়।

বেকারত্ব দূরীকরণই হোক এবারের অঙ্গীকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, জাতির পিতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'’ আমরা বুঝলাম, মুক্তির জন্য চাই স্বাধীনতা। ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এ মুক্তির অর্থ কেবল একটি স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জনই ছিল না; বরং এ মুক্তির অর্থ ছিল আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি আর বৈষম্য নিরসন।

একাত্তরে আমাদের স্বজনদের লাশ আর রক্তের উপর দিয়ে এসেছে স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীন ভূখণ্ড মিললেও মিলেছে কি অর্থনৈতিক মুক্তি, ঘটেছে কি শ্রেণিবৈষম্যের অবসান? বেকারত্বের জালে বন্দি দেশের সম্ভাবনাময় জনশক্তি। অতশত মাথাপিছু আয়, আমার আয় কে পায়, হায়! কার ভাগে এই অর্থ যায়। স্বাধীনতার এই মাসে আমাদের শপথ নিতে হবে বেকারত্বমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার। এ লক্ষ্যে নতুন করে ভাবতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার।

প্রকৃত স্বাধীনতায় উজ্জীবিত হোক তারুণ্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া আনজু। তিনি বলেন তার ভাবনার কথাগুলো। স্বাধীনতা মানুষের আত্মার খোরাক যোগায়। মানুষের সব প্রতিভার বিকাশ সাধন করে। আর একজন তরুণ যখন তার সব ধরনের প্রতিভার সুষ্ঠ বিকাশ ঘটাতে পারেন, তখন একটি নতুন উৎকর্ষ সভ্যতার সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতা শব্দটি হয়ে উঠুক তরুণদের উজ্জীবনী শক্তি। স্বাধীনতাই হোক একজন তরুণের বেঁচে থাকার প্রেরণা। এটা শব্দে বা অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকুক।

স্বাধীনতা-মৌলিক চাহিদার অবাধ বিন্যাসে সমন্বিত প্রত্যয়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পল্লব আহমেদ সিয়াম। তিনি বলেন, স্বাধীনতা বাংলা অক্ষরে লিখিত কোনো সাধারণ শব্দ নয়। স্বাধীনতা হলেো বাংলাদেশ নামক দেশটির নব সূচনার জন্য দুর্ভিক্ষ, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, বৈষম্য অনাচার দূরীকরণে শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্ষিতা নারীসহ আপামর জনসাধারণ ও কৃষকের ঘাম ঝরা শ্রমের সংমিশ্রণ। এটা হলো যুদ্ধ উত্তর দেশের কল্যাণকামী প্রতিটি নাগরিকের অকপটে কথা বলা, মুক্ত বিচরণসহ মৌলিক চাহিদার অবাধ বিন্যাসে সমন্বিত প্রত্যয়।

যদিও স্বাধীনতা এখন গল্প, পাঠ্য বই, ইতিহাস ও পত্রিকা এমনকি প্রতিবছর এইদিনে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনেই সীমাবদ্ধ, যেটা স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বহন করেনা। স্বাধীনতা হবে সার্বজনীন, লালন করতে হবে মননে। প্রত্যেক নাগরিককে দিতে হবে স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ।

স্বাধীনতা দিবসে চিন্তা-চেতনার স্বাধীনতাই কাম্য

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহাগ মনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতা অনেক বড় একটি বিষয়। স্বাধীনতার সাথে আমাদের জীবনের অনেক কিছুই জড়িত। চিন্তার স্বাধীনতা,দৈন্যতা থেকে মুক্তি এই দিকটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবসের অংশ হোক। মানুষের জীবনের স্বাধীনতার অংশ হিসেবে ঘুচে যাক সব বাঁধা, যে বাঁধা আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই স্বাধীনতা দিবস, সেই উদ্দেশ্য সফল হোক এটাই চাওয়া। যে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখে জীবন বাজি রাখা, মানুষের মুক্তির জন্য যে সংগ্রাম,সেই যাপিত জীবন হোক দেশের প্রতিটি মানুষের। এই দেশ হয়ে উঠুক স্বাধীন মানুষের, স্বাধীন চিন্তা-চেতনার আবাসভূমি, এই প্রত্যাশাই আমাদের।

স্বাধীনতা দিবস তরুণদের প্রেরণা

মোমেনা আক্তার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে বাংলাদেশকে পেয়েছি, তা আমাদেরজাতির জন্য গৌরবের, অহঙ্কারের। কিন্তু,স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪৯ বছর পর দেখা যাচ্ছে আমাদের কারও কারও মধ্যে স্বাধীনতা নিয়ে উচ্ছ্বাস নেই, কারও মধ্যে বা কিছুটা বিরূপ মনোভাবও নেই। বিশেষ করে আজকের তরুণ সমাজ। আমরা চাইবো, স্বাধীনতা দিবসের প্রেরণা ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই আমাদের তরুণ সমাজ একটা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। সেইসাথে আত্মসমালোচনা, আত্মোপলব্ধি ও কর্তব্য নির্ধারণের দায়িত্ব পালন আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে।

স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে যাক সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে

শহিদুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, পলাশীর প্রান্তরে যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেই সূর্য আবার উদিত হয়েছিল ২৫ মার্চ রাতে একটি বার্তার মাধ্যমে।এটিচূড়ান্ত হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের মাধ্যমে।অপশাসন আর শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির দীর্ঘ লড়াই ছিল দেশের প্রতিটি মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। প্রায় অর্ধ শতাব্দী হতে চলল, আমরা বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড পেয়েছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি পুরোপুরি। দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু শ্রেণিবিভাজন এখনো প্রকট।

সময় এসেছে চলমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে স্বাধীনতার সুফল সমাজের প্রতিটি শ্রেণির কাছে পৌঁছে দেওয়ার।কৃষক পাক তার ন্যায্য মূল্য, শ্রমিক, দিনমজুর পাক তার প্রাপ্য পাওনা ও গৃহহীন মানুষের আবাস নিশ্চিত হোক।মুজিববর্ষে জাতির জনকের এসবস্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক।

অর্জিত স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী আশফিক রাসেল। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় অধ্যায়। একাত্তরের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্ম হওয়ার মধ্যদিয়ে এই জনপদে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে মুক্তি আকাঙ্ক্ষার যে প্রদীপশিখাটি জ্বলে উঠেছিল, বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে তারই রক্তস্নাত পূর্ণতা ছিল১৬ ডিসেম্বরে। আমাদের পূর্বসূরীদের অপরিমেয় ত্যাগ ও তিতিক্ষার ফসল যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।

স্বাধীনতা কোটি প্রাণের তৃষ্ণা

মুহম্মদ সজীব প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, স্বাধীনতা কোটি প্রাণের তৃষ্ণা। ১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ীযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল সাড়ে ৭ কোটি প্রাণের স্বাধীনতার তৃষ্ণা। সেই মহান স্বাধীনতার অন্যতমউদ্দেশ্য ছিল সর্বস্তরের মানুষের মৌলিক ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

শহীদদের রক্তে সিক্ত এই মাটি

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেছেন তার ভাবনার কথাগুলো।  আমি মুক্তচিন্তা এবং ইচ্ছার সাথে বেড়ে ওঠা একজন স্বাধীন মানুষ। তবে, আমার এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে এক রক্তাক্ত ইতিহাস, যা বাঙালি জাতিকে দিয়েছে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অধিকার। স্বাধীনতার এই দিনে আমি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি দেশমাতৃকার জন্য আত্মদান করা বীর সন্তানদের। প্রতিটিবাংলাদেশির মতো আমিও স্বপ্ন দেখি বেকারত্ব, ক্ষুধা, ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের। যে স্বপ্নটা দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সে স্বপ্নটা একদিন পূরণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হোক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহরা এলি। তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবস সর্বদাই আমাদেরকে নির্ভীক বীরের জাতিতে পরিণত করেছে।উজ্জীবিত করেছে এই দেশকে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে। শুধু দিবস হিসেবে নয়, এর রয়েছে বিবিধ গুরুত্বও। স্বাধীনতার বর্ণিল আলোয় যেমনভাবে বদলে দেয় জীবনের গতিপথ, ঠিক তেমনিভাবে এটি আমাদের নতুন স্বপ্ন আর শপথের সাহস যোগায়। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা লক্ষ করি, স্বাধীনতা পেলেও মুক্তি পাইনি আমরা। অন্যায়ে নত হতে শিখে গেছি আমরা। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাধাদানকারী সেই আল বদর-আল শামস, কিংবা দেশদ্রোহীরা বাংলার মাটিতে এখনো সক্রিয় আছে। সময়ের সাথে সাথে এরা বদলেছে এদের নাম,বদলেছে এদের রূপ।

আমি মনে করি, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন, সচেতনতাবোধ এবং দুর্নীতিরোধ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়িত করতে হবে।

 

ঢাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়