যাকে ঘিরে হাজারটা স্বপ্ন
রাশিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
তুমি যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল-নীল বাসে পেছনের কোনো সিটে জানালার পাশে বসে আছ। বাসটা তখন ব্যস্তময় রাস্তায় এসে থামলো। অনেক লম্বা জ্যাম। সারি-সারি দাঁড়িয়ে আছে প্রাইভেট কার, রিকশা, পাবলিক বাস। চারপাশ গরমে অতিষ্ঠ। এই জ্যাম ছাড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ঠিক তখনই তুমি দেখতে পাবে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি সবগুলো গাড়িকে অতিক্রম করে সগৌরবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অসাধারণ শীতল বাতাস এসে তোমার গায়ে তৃপ্তির পরশ বুলিয়ে যাবে।
তুমি জানালা দিয়ে তাকালে দেখতে পাবে রাস্তায় আটকে থাকা গাড়িগুলো সসম্মানে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটিকে সাইড দিয়ে দিচ্ছে।
পাশের লাইনে দাঁড়ানো গাড়িগুলো থেকে কেউ কেউ গলা বের করে একবার দেখে নিচ্ছে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি। এই বাসেই হয়তোবা বসে আছে ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাজিস্ট্রেট, অধ্যাপক, ব্যাংকার ও লেখকসহ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানগুলো।
জ্যামে আটকে থাকা বৃদ্ধ রিকশাচালক ঘাড়ের গামছাটা দিয়ে মুখটা মুছে নিচ্ছে আর একপলকে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটির দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তোবা তার সন্তানও এমন কোনো একটা বাসে করে ক্যাম্পাসে যাচ্ছে। যাকে নিয়ে তার হাজারটা স্বপ্ন।
পাশেই দাঁড়ানো পাবলিক বাসে থাকা কলেজ ছাত্রগুলো তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, হয়তো তারা তাদের আগামী দিনের স্বপ্ন বুনছে। তাদের চোখ বলে দিচ্ছে লক্ষ লক্ষ মেধাবীর সাথে তারা ভর্তিযুদ্ধে বসতে নিজেদেরকে সুন্দরভাবে তৈরি করবে।
তুমি ফুটপাতের দিকে তাকিয়ে দেখবে, একজন মা তার ছোট্ট শিশুটার হাত ধরে স্কুল থেকে ফিরছে, আর সন্তানকে ইশারায় তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি দেখিয়ে দিচ্ছে। তুমি বুঝতে পারবে, মা বলছে এই বাসে করেই দেশসেরা ছাত্রগুলো যাচ্ছে।
তোমার চোখ ভিজে যাবে, যখন তোমার মনে পড়বে সেই দিনটার কথা। যেদিন এমন একটা লালবাস দেখিয়ে তোমার মা তোমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর তোমাকে এভাবেই বলে দিয়েছিলেন তার স্বপ্নের কথা, না বলা হাজারো অনুভূতি।
সে যে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, স্বপ্নকে ফেরি করে বেড়ায় সকাল-সন্ধ্যা। তাকে নিয়ে কত অজানা পথিক কত স্বপ্ন বুনে। সেই অজানা পথিকদের মধ্য থেকে উৎকৃষ্টরা স্থান পায় তার বুকে। যে স্বাপ্নিক দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, তার পায়ের ধুলায় সে হয় ধন্য। যেকেউ ইচ্ছে করলেই তার মধ্যে চড়তে করতে পারে না। সে যেন এক মেধাবীদের মিলনমেলা।
অনেক সাধনা ও তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার মধ্যে আসন পেতে হয়। সকাল-সন্ধ্যা যখনই সে ছুটে রাজপথে, কত যে উৎসুক চাহনী চেয়ে থাকে তার পানে। সে কত শিক্ষার্থীর আনন্দ-বেদনার সামিল! যাত্রা পথে কত সুর-বেসুরা কণ্ঠ গেয়ে ওঠে গান। ক্লাস শেষে ফেরার পথে সে সরব হয়ে ওঠে গল্প-আড্ডা আর গানে। কোনো গল্প হয় হাসি-খুশির, কোনোটা বা বেদনায় সিক্ত। আর এই হাসি-খুশি আর দুঃখ-বেদনাকে সঙ্গী করেই তার পথচলা। সে আর কেউ নয়, সে স্বপ্নের লাল বাস।
কত রাত না ঘুমিয়ে তুমি আজ বাসে একটা সিট পেয়েছো। অসংখ্য অপ্রাপ্তির বা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনার ডালপালা তখনই প্রসারিত হয়, যখন নিজেকে লালবাসের যাত্রী মনে করো...।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
ইবি/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন