ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘রাস্তায় নয় পকেটে রাখুন’

আশিকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রাস্তায় নয় পকেটে রাখুন’

তরুণ তারুণ্যের মতোই, যে তারুণ্য তিমির বিদারী, সে যে আলোর দেবতা’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অভিভাষণের মতোই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে তারুণ্যের শক্তিতে জ্বলে ওঠার।

তারুণ্যের শক্তি সঞ্চার করে ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে ভিন্নধর্মী একটি সংগঠন INLEPT (Institute of Learning and Promoting Tolerance) বা আইএনএলইপিটি। সংগঠনটি এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যার বৈশিষ্ট্য হবে ভিন্নতা, শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা। এখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ থাকবে এবং তারা মানুষকে বিচার করবে শুধু তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে। মানুষ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং আচরণে হবে সহিষ্ণু। আচরণ ও যোগ্যতা ভিন্ন অন্য কোনো কিছুই বিবেচনার মাপকাঠি হবে না।

সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে সদস্য হুজাইমা সারোয়ার জানান, মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, যা হবে একটা সহনশীল ও সৃজনশীল সমাজ, যেখানে মানুষের দুঃখ শোনার মতো কেউ থাকবে, চেষ্টা থাকবে পাশে থেকে তাকে সাহায্য করার। পরমতসহিষ্ণুতা গুণটি অর্জন করা সব মানুষের মানবিক দায়িত্ব। ফলে তৈরি হবে সহনশীল ও সৃজনশীল সমাজ। প্রতিটি মানুষের চেষ্টা থাকবে অন্যের দুঃখকে বোঝার এবং সাধ্য অনুযায়ী তাকে সাহায্য করার।

আইএনএলইপিটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সাদিক হাসান শুভ নতুন একটি স্লোগান নিয়ে কাজ করছেন, যা ইতোমধ্যে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্লোগানটি হলো, ‘Keep Your Packet in Your Pocket’।

এই স্লোগানের অর্থ হলো, ব্যবহৃত দ্রব্যের মোড়ক রাস্তায় না ফেলে নিজের পকেটে রাখুন। রাস্তা পরিষ্কার রাখুন। মনে করুন, আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। যেতে যেতে কলা খাচ্ছেন। কলা খাওয়া শেষ করে দেখলেন আপনার ধারে কাছে কোনো ডাস্টবিন নেই। তখন আপনি দুটোর যে কোনো একটি কাজ করতে পারেন। খোসা রাস্তায় ফেলে দিতে পারেন অথবা আপনার ব্যাগে বা টিস্যু পেঁচিয়ে জামার পকেটে রাখতে পারেন। সংগঠনটি বলছে, খোসাটি না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত ডাস্টবিন পাচ্ছেন না, ততক্ষণ আপনার কাছেই রাখুন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের প্রভাষক সাদিক হাসান শুভ জানান, মানুষের জন্য যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা তৈরি করে এমন বিষয়গুলোর একটি হলো রাস্তায় বা যেখানে-সেখানে ময়লা বা ব্যবহৃত দ্রব্যের মোড়ক ফেলা। মানুষ যদি যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলে নিজের ব্যবহৃত কোনো দ্রব্যের মোড়ক (প্যাকেট) নিজের কাছে রেখে দেয় এবং যখন ডাস্টবিন পায় তখন সেখানে রাখে, তাহলে পথ-ঘাটের ময়লার সিংহ ভাগ কমে যাবে।

কারণ রাস্তা-ঘাটে যে সকল ময়লা দেখা যায়, তার প্রায় সবই কোনো না কোনো কিছুর খোসা। রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করা সাধারণ জনগণের দায়িত্ব নয়, বরং এটি স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব। মানুষের দায়িত্ব হলো নিজে ময়লা না ফেলা। মানুষ যদি তাদের এই দায়িত্ব পালন করে, তাহলেই আর নোংরা হবে না, মানুষের চলতে কষ্ট হবে না। মানুষের চলার পথ হবে আরামদায়ক। স্থানীয় প্রশাসনও অন্য অনেক কাজে মনোযোগ দিতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে যাই, সেখানেই এই কথা বলি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আমি একটা অংশে এই বার্তাটা দর্শক-শ্রোতাদের কাছে দেই। তাদের শপথ করাই, যেন তারা যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলে সেগুলো তাদের নিজেদের কাছে রাখে। রাস্তায় কাউকে ময়লা ফেলতে দেখলে তাদেরও একই কথা বলি। আমাদের ইচ্ছা আছে এটি নিয়ে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেমিনার করা। চাইলে যেখানে-সেখানেই ময়লা ফেলা যেতে পারে। কিন্তু যা-তা করাই কি স্বাধীনতা? আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলব না, ডাস্টবিন না পেলে ময়লা পকেটে রাখব।’ 

প্রসঙ্গত, লেখা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের কাছে সহিষ্ণুতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং মানুষের জন্য যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা তৈরি করে এমন বিষয়গুলোকে সমাজ থেকে দূর করতে প্রচারণা চালানোর প্রয়াসে সংগঠনটির যাত্রা শুরু।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।


জাককানইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়