ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

যেভাবে অবসর সময় কাটাবেন শিক্ষার্থীরা

জুবায়ের আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে অবসর সময় কাটাবেন শিক্ষার্থীরা

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দী। সময় কাটছে না। অনলাইন দুনিয়ায়ও মন টিকছে না। যেন খাঁচার মধ্যে থেকে বন্য পশুপাখি বের হতে ছটফট করছে। বিশ্বজুড়ে খেলাধুলা বন্ধ। টিভি চ্যানেলগুলোতেও এখন নেই নতুন নাটক-সিরিয়াল। তাহলে কী করবেন তারা?

করোনার প্রভাবে বাইরে বেরোনোও নিষেধ। এমন পরিস্থিতিতে হোম কোয়ারেন্টাইনের সময়গুলো ভালো কাটাতে কিছু পরিকল্পনার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়ার (বিজেম) শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ।

পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় ব্যয়

লেখাপড়া, অবহেলা কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে পরিবারের সদস্যদের ঠিকমতো সময় দিতে পারি না আমরা অনেকেই। এই সময়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় ব্যয় করুন। (আক্রান্ত সন্দেহে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলে অবশ্যই সকল স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা মেনে চলতে হবে)। পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলুন, কোনো সদস্যের সাথে দূরত্ব তৈরি হলে তা মিটিয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন।

বই পাঠে সময় ব্যয় করুন

কম-বেশি সবারই বই পড়ায় অভ্যাস আছে। বাসায় থাকা বইগুলো পড়ুন, ব্যস্ততার কারণে ইতোপূর্বে পড়তে চেয়েও পারেননি, সেসব বইগুলো পড়ে নিন। নিজ সংগ্রহে না থাকলেও অনলাইনে পিডিএফ ফরম্যাটে বই পাওয়া যায়, প্রিয় বইগুলো ডাউনলোড করে পড়তে পারেন। বই জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়, আলোকিত ব্যক্তিত্ব, আলোকিত সমাজ ও দেশ গঠন করতে ভালো বইয়ের জুড়ি নেই। সেই সাথে পত্রিকা/অনলাইনের গুরুত্বপূর্ণ খবর ও লেখাগুলো পড়ুন।

বাড়ির কাজে সময় ব্যয় করুন

বহু নারী কর্মজীবী হলেও মূলত পরিবারের মেয়ে সদস্যরাই গৃহের কাজকর্ম করে থাকেন। বাসায় থাকার সময়ে স্ত্রী, মা-বোনদের কাজে সাধ্যমত সহায়তা করুন। যেহেতু পরিবারের সব সদস্য একত্রে বাড়িতে থাকেন, সেহেতু দৈনন্দিন কাজগুলো পূর্বের চেয়েও বেশি হয়। সবাই মিলে কাজগুলো করলে দ্রুত শেষ হবে এবং বাসার কাজে সাহায্য করার মানসিকতা তৈরি হবে।

রান্না করা শিখুন

আমাদের মতো অনেক তরুণ-তরুণীরা রান্না করতে পারি না। তারা কিন্তু এই সময়ে প্রয়োজনীয় রান্নার আইটেমগুলো শিখে নিতে পারি। তাহলে,অন্যের উপর নির্ভরতা কমবে। বৈবাহিক জীবনে, কিংবা পরিবারের রান্নার কাজগুলো করতে সহজ হবে। আর মা, বোন, স্ত্রী, কাজের লোকের উপর নির্ভর করতে হবে না।

বাচ্চাদের লেখাপড়ায় সময় দিন

কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তানদের কোচিং করাতে হয়। যেহেতু এই সময়ে প্রায় সব কোচিং সেন্টার কিংবা গৃহ শিক্ষকরা পড়ানো বন্ধ রাখছেন। কাজেই সন্তানদের নিজেরাই লেখাপড়া করাতে পারেন। পিতা-মাতা কিংবা পরিবারের সদস্যদের কাছে শিশুরা পড়তে না চেয়ে দুষ্টুমি করলেও যতটুকুই পড়বে, তা হবে বেশ অর্থবহ। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্যও পিতা-মাতার সঙ্গ বেশ ইতিবাচক।

শরীর চর্চা করুন

নিয়মিত যারা জিমে গিয়ে শরীর চর্চা করেন, তাদের অনেকেরই বাসায় কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট থাকে। আবার অনেকের বাসাতেই জিমের সব ইনস্ট্রুমেন্ট আছে। কারো না থাকলেও সহজ ব্যায়ামগুলো করতে পারেন। বাসায় কাজহীন থাকায় ওজন বৃদ্ধির শঙ্কা থাকেই। শরীর চর্চার মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখতে পারেন।

আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করুন

কর্মব্যস্ততায় প্রিয়জন কিংবা আত্মীয়-স্বজনের সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ফলে দেশ-বিদেশে বহু বন্ধু তৈরি হলেও নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও অনেক সময় দূরত্ব বেড়ে যায়। এই সময়ে সবার খোঁজ-খবর নিতে পারেন। আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো পূর্বের চেয়েও মজবুত করার এটাই উপযুক্ত সময়।

গেমস খেলুন

অনেকের বাসায় ডেস্কটপ/ল্যাপটপ আছে। কারো বাসায় কম্পিউটার না থাকলেও স্মার্ট ফোন আছে প্রায় সবার কাছেই। বিভিন্ন মজার মজার গেমসগুলো ডাউনলোড করে খেলুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইবুকের অন্যতম সংযোজন ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এককভাবে কিংবা বন্ধুদের সাথে মিলে অসংখ্য গেমস খেলা যায়। যাদের স্মার্টফোন নেই কিন্তু বাটন মোবাইল ব্যবহার করেন, তারাও সেসব মোবাইলে থাকা গেমস খেলতে পারেন। গেমস খেলার মাধ্যমে বেশ আনন্দদায়ক সময় কাটানো যায়।

দরিদ্র-অসহায়দের সাধ্যমতো সহযোগিতা করুন

দেশব্যাপী মানুষ গৃহবন্দি থাকার কারণে বহু সাধারণ মানুষই আছেন, যাদের দীর্ঘদিন ঘরে বসে খাওয়ার মতো সাধ্য নেই। একেবারে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সংখ্যাও কম নয়। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ছাড়া বহু সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করছেন। বাসায় থাকলেও অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সাধ্যমত সহায়তা করুন।

গুজব ছড়াবেন না

গুজব ছড়াবেন না, গুজবের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করুন। বাসায় থাকলেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সময় ব্যয় করেন। বহু অসচেতন নাগরিক আছেন, যারা কোনো তথ্য পেলেই তা যাচাই না করে ছড়িয়ে দেন এবং অনেকেই বহু মিথ্যা তথ্য তৈরি করেন। এসব প্রচার না করে প্রতিরোধমূলক লেখা পোস্টের মাধ্যমে মানুষদের সচেতন করতে পারেন।

লেখালেখিতে সময় ব্যয় করুন

দেশের মানুষ ও পুরো পৃথিবী কঠিন সময় পার করছে এখন। লেখার হাত যেমনই হোক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইতিবাচক যেকোনো বিষয়ে লিখুন। যারা পত্রিকা-অনলাইনে লেখেন, তারা সচেতনতামূলক লেখালেখিতে সময় ব্যয় করুন। গৃহবন্দি থাকার সময় কীভাবে কাটছে, কিংবা করোনা সংকটকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো খাতায়/কম্পিউটারের মাধ্যমে লেখে রাখতে পারেন।

টিভিতে ভালো প্রোগ্রামগুলো দেখুন

করোনা সংকটকালীন সময়ে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো নিয়মিত তুলে ধরা হচ্ছে। সেই সাথে করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও সব খবরাখবরও প্রচার করা হচ্ছে। এসব দেখতে পারেন। বাসার শিশুদের সাথে বসে শিশুতোষ কার্টুনসমূহ দেখতে পারেন। বহু চ্যানেল পুরনো নাটক-সিরিয়াল-সিনেমা দেখাচ্ছে, সেসবও দেখতে পারেন।

প্রসঙ্গত, চীনের উহান প্রদেশে বিগত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে করোনী রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রথমে চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকলেও ইতালি, স্পেনসহ আরো বহু দেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।

 

বিজেম/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়