ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মেধাবীদের হোম কোয়ারেন্টাইন

এমদাদুল হক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৫ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেধাবীদের হোম কোয়ারেন্টাইন

দেশব্যাপী চলছে অঘোষিত লকডাউন ও সাধারণ ছুটি। চারদিকে মৃত্যুর মিছিলে জনজীবন স্থবির হয়ে আছে। ধীরে ধীরে কমছে মৃত্যুর সংখ্যা, কিন্তু বাড়ছে সংক্রমণ। সরকারি নির্দেশনায় ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন অফুরন্ত সময়। তবে এই ছুটিতে অন্য ছুটির ন্যায় বন্ধুদের সঙ্গে লাল মাটির ক্যাম্পাসে দলবেঁধে আড্ডা, ঘুরাঘুরি করা যাচ্ছে না।

হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণায় ক্যাম্পাস মুখরিত হচ্ছে না। ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখা প্রিয় মুখগুলোর দেখা মিলছে না। অন্যরকম এ অবসর কীভাবে কাটছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, তা জানতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমদাদুল হক সরকার।

জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ

সত্যি বলতে হোম কোয়ারেন্টাইনের সময়টা খারাপ যাচ্ছে না। সচরাচর আমি ব্যস্ত থেকে অভ্যস্ত। এই সময়টাতেও নিজেকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখছি। গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যপাঠ্য বইগুলো পড়ার চেষ্টা করছি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও একাডেমিক ও সাংগঠনিক ব্যস্ততায় বই পড়া হতো না। এত বড় ছুটি বা অবসর কখনো পাইনি। এই সুযোগে সেটা পুষিয়ে নিচ্ছি। রমজান মাস, আবার সবাই বাসায় থাকায় মায়ের কাজের চাপও অনেক বেড়ে গেছে। তাই বাসার কাজে মাকে সাহায্য করছি। ছোট ভাইকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছি। তবে, এসময়ে সচেতনতার বিকল্প নেই। নিজে সচেতন থেকে অন্যকে সচেতন করছি। আশা করি দ্রুতই এই সংকটময় অবস্থার অবসান হবে।

মাহফুজ কিশোর, বাংলা বিভাগ

করোনার প্রাদুর্ভাবে সবকিছুই ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো এতো দিন ঘরে আবদ্ধ। পূর্বে ব্যস্ত দিনের ক্লান্তিতে মায়ের কাছে ফিরার জন্য মন কাঁদতো অথচ এখন লম্বা ছুটির আবদ্ধ জীবনে ক্যাম্পাসের প্রিয় স্থান আর মানুষগুলোকে ভীষণ মনে পড়ছে। তবে দুর্যোগের এই সময়ে আমরা উপজেলার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি, বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা ও সচেতন করছি। পাশাপাশি অবসরে ঘরের কাজেও হাত লাগাচ্ছি।

বাড়ির মানুষকে করোনার বৈশ্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে সতর্ক করছি ও ঘরে থাকতে বলছি। কেননা, মানুষের সচেতনতাই এই মহামারি থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র পথ। রমজানের এই সময়ে এবার মসজিদের পরিবর্তে বাড়িতেই নামাজ আদায় করছি।

শাহরিয়ার এম সোহান, ফার্মেসি বিভাগ

করোনা মহামারিতে অপ্রত্যাশিত ছুতিতে শিক্ষার্থীরা আড্ডা,  ঘুরাঘুরি ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকলেও সুযোগ রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির। দীর্ঘ ছুটির এ সময়কে কাজে লাগাতে আমি চেষ্টা করছি পুরনো একাডেমিক পড়াগুলোকে ঝালিয়ে নিতে। সেই সাথে ইন্টারনেট ভিত্তিক জ্ঞানমূলক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আয়ত্ত করতে সময় দিচ্ছি।  জমিয়ে রাখা প্রিয় লেখকের বইগুলোও আপন করে নিয়েছি এ ছুটিতে।

পাশাপাশি মা-বাবাকে সময় দিচ্ছি করোনাকালীন মানসিক স্বস্তির যোগান দিতে। এছাড়াও গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছি তাদের কষ্টকে কিছুটা লাঘব করতে। বাড়ির বারান্দায় অযত্নে বেড়ে ওঠা টবের গাছগুলোর পরিচর্যা করছি নিয়মিত। সর্বোপরি চেষ্টা করছি এ অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটিকে জীবনের মূল্যবান সময়ে পরিণত করতে।

আনোয়ার হোসেন আরাফ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

লকডাউনে অনেকে হাপিয়ে উঠেছে, কিন্তু এই অফুরান অবসর আমি যথেষ্ট উপভোগ করছি। অনেক দিনের সংগৃহীত ভালো মানের কিছু বই পড়ার যথেষ্ট সুযোগ হয়েছে। একাডেমিক পড়াশোনা, ক্লাস ও টিউশনের কারণে কিছু টিভি সিরিজ দেখার সময় হয়ে ওঠেছি, তা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে দেখে শেষ করতে পারছি।

পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গল্প করা, বাসার কাজে সাহায্য করা, ছোটদের একান্তে সময় দেওয়া ও আবদারগুলো মিটানোর চেষ্টা করা দৈনন্দিন রুটিনের অন্যতম জায়গা দখল করেছে। এছাড়াও সৃষ্টিশীল কাজের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারছি। সর্বোপরি লকডাউনের সময়টা যথার্থ কাজে আসছে বলে মনে হচ্ছে। এত কিছুর পরও বার বার মনে পড়ছে প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসের কথা।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।


কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়