ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘তরুণ লেখকরা বই পড়বেন শেখার জন্য’

আসমাউল মুত্তাকিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘তরুণ লেখকরা বই পড়বেন শেখার জন্য’

এই সময়ে দেশের তরুণদের বৃহৎ একটা অংশ যখন চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির বই নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান, ঠিক সেসময় তরুণদের কেউ কেউ সাহিত্যচর্চা ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছেন। এমনই একজন তরুণ লেখক জনি হোসেন কাব্য।

তিনি একজন তরুণ লেখক। ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছেন। তার প্রথম বই ‘ছড়ার প্যাকেট’। ২০১৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। ছড়ালেখার পরামর্শমূলক বই ‘ছড়ামর্শ’র জন্য তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। অর্জন করেছেন পাঠকপ্রিয়তা। জনি হোসেন কাব্য ছড়া বিভাগে ‘প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার', শিশুসাহিত্যে অক্ষরবৃত্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কারসহ বেশকিছু সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। পাশাপাশি মাসিক শিশু-কিশোর ম্যাগাজিন ‘ভোঁদৌড়’ সম্পাদনা করছেন।

এ পর্যন্ত তার বইয়ের সংখ্যা ১৪টি। লেখার মাধ্যমে গল্প বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। লেখালেখি ও ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমাউল মুত্তাকিন।

মুত্তাকিন: কেমন আছেন?

জনি হোসেন কাব্য: করোনা সংকটের মধ্যে থেকেও যতটুকু ভালো থাকা যায়, আছি৷

মুত্তাকিন: কীভাবে কাটাচ্ছেন করোনার সময়গুলো?

জনি হোসেন কাব্য: একদম ঘরে বসেই৷ প্রচুর পড়া হচ্ছে। লেখালেখিও মোটামুটি হচ্ছে৷ এইভাবেই যাচ্ছে সময়গুলো।

মুত্তাকিন: আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?

জনি হোসেন কাব্য: কয়েকটি পাণ্ডুলিপি গোছানোর চেষ্টা করছি। বর্তমানে শিশু-কিশোর গল্প লিখছি৷ তা নিয়েই ব্যস্ততা।

মুত্তাকিন: আপনার শৈশবটা কেমন ছিল?

জনি হোসেন কাব্য: খুবই রাজকীয়। আমি যখন অনেক ছোট, তখন আমার দাদাই আমাদের পুরো পরিবার দেখাশোনা করতেন৷ উনি আমাদের শৈশবকে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন৷ কোনো কিছুর অপূর্ণতা রাখেননি৷

মুত্তাকিন: ক্যাম্পাস জীবন কেমন ছিল?

জনি হোসেন কাব্য: একেকটা একেক রকম ছিল। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খুবই সুন্দর ছিল। খেলাধুলা, আড্ডা, আনন্দ—হৈ—হল্লা করেই কাটিয়েছিলাম। কিন্তু কলেজে পড়ার চাপে খুব একটা উপভোগ করতে পারিনি৷ সে তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভালোই উপভোগ করেছি।

মুত্তাকিন: লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?

জনি হোসেন কাব্য: শুরুটা সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই। বড় ভাইয়ার বই পড়ার অভ্যাস ছিল৷ ম্যাগাজিনও সংগ্রহ করতেন। সেসব ম্যাগানিজে ছাপা হওয়া কার্টুনগুলো ভালো লাগত৷ ভাইয়া বাসায় না থাকলে সেই কার্টুনগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। একটা সময় খেয়াল করলাম, সেসব কার্টুনগুলো গল্প ও ছড়ার পাশে ছাপা হচ্ছে। আস্তে আস্তে গল্প ও ছড়া পড়তে থাকলাম। সেখানে ছোট ছোট বাচ্চারাও লিখত৷ তাদের লেখা দেখে অনুপ্রাণিত হতাম। ভাবতাম, ওরা পারলে আমি কেন পারব না!

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন— জার্মানে ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল। তো, সে বিষয়টি নিয়ে লিখে ফেললাম একটি ছড়া। সহপাঠীরা দেখল। প্রসংশা করল। তাদের মাধ্যমে তাদের বড় ভাইয়া-আপুরা দেখলেন৷ তারাও উৎসাহিত করলেন। এভাবেই শুরু।

মুত্তাকিন: আপনার পুরস্কার পাওয়ার পর অনুভূতি কেমন ছিল?

জনি হোসেন কাব্য: প্রথমটির বেলায় খুবই স্বাভাবিক ছিল অনুভূতি। কারণ এখানে ছড়া বিভাগে অংশগ্রহণ করেছিলাম৷ খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তবে সেই তুলনায় 'অক্ষবৃত্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কার' জিতে বেশি উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। সেখানে 'শিশু-কিশোর গল্প' বিভাগে জমা দিয়েছিলাম। দেশসেরা বেশ কিছু শিশুসাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মুত্তাকিন: লেখালেখির কারণে কোথাও বাঁধার মুখে পড়েছিলেন কখনো?

জনি হোসেন কাব্য: না। সেভাবে বাঁধার মুখে পড়িনি কখনো৷ আমার পরিবেশ সবসময়ই লেখালেখির জন্য উপযুক্ত ছিল। এ দিক থেকে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।

মুত্তাকিন: প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

জনি হোসেন কাব্য: প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি ভোলার মতো না৷ আমাদের ডাক বিভাগটি খুবই অনুন্নত ছিল৷ তাই ডাকে কোথাও লেখা পাঠাতে পারতাম না৷ মোবাইল হাতে আসার পর নিজে নিজে চেষ্টা করেছিলাম একটি ম্যাগাজিনে ছড়া মেইল করার জন্য। আমি ঠিক জানতাম না মেইলটি হয়েছিল কিনা! দুমাস পরে সেই ম্যাগাজিনে লেখাটি ছাপা হলো। ম্যাগাজিন হাতে আসার পর অন্যসময় যেভাবে চোখ বুলাতাম, সেভাবেই চোখ বুলাচ্ছিলাম। হঠাৎ নিজের লেখায় চোখের আলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাত কেঁপে ম্যাগাজিনটি পড়ে গিয়েছিল। সত্যি কথা বলতে, বিশ্বাসই হচ্ছিল না আমার লেখা ছাপা হয়েছে!

মুত্তাকিন: আপনার প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতিটাও জানতে চাই?

জনি হোসেন কাব্য: বই প্রকাশের অনুভূতি বলে-লিখে পুরোটা বুঝানো যাবে না। বই করার ক্ষেত্রে এক বড় ভাই সাহায্য করেছিলেন। তিনিই সব করেছিলেন। আমি গ্রামে ছিলাম। অথচ বই প্রকাশ হয়ে ঢাকা বইমেলায় হরদম বিক্রি হচ্ছিল। স্টলে অন্য বইয়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিল বইটি। মেলা শেষে বই হাতে পেলাম আমি। প্রথম বইয়ে প্রথম স্পর্শ ভোলার মতো ছিল না৷

মুত্তাকিন: আপনার কোন বইটি আপনার নিজেরই প্রিয়?

জনি হোসেন কাব্য: সবগুলো বই-ই প্রিয়। একেক বই একেকভাবে। তবে ‘ছড়ামর্শ’ বইটি সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। এ বইটি আমার পরিচিতি বাড়িয়েছে, বাড়াচ্ছে, বাড়াবেও হয়তো।

মুত্তাকিন: আগামী বইমেলা নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা?

জনি হোসেন কাব্য: আগামী বইমেলায় ‘ছড়ামর্শ— ২’ আসতে পারে। এখানে লেখালেখির অলঙ্কার, লেখালেখির গুপ্তধন, ব্যবহারিক বানান, লেখালেখি বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ বিষয়ে কাজ থাকবে। এছাড়া ছড়া ও গল্পের বইও আসবে, ইনশাআল্লাহ্।

মুত্তাকিন: আপনার প্রিয় লেখকদের তালিকায় কারা আছেন?

জনি হোসেন কাব্য: অনেকেই আমার প্রিয় লেখক। কয়েকজনের যদি নাম বলি— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়, জহির রায়হান, হুমায়ূন আহমেদসহ আরও অনেকেই।

মুত্তাকিন: লেখালেখির বিষয়ে আপনার মা-বাবার প্রতিক্রিয়া কী?

জনি হোসেন কাব্য: বই প্রকাশ হওয়ার পর আমার লেখালেখির বিষয়টা বাবা-মা জানতে পেরেছিলেন। উনারা খুবই গর্বিত৷ বই বের হলেই উনাদের জন্য এক সেট পাঠিয়ে দেই৷ খুব খুশি হন।

মুত্তাকিন: নতুন লেখকদের উদ্দেশ্য কিছু বলার আছে?

জনি হোসেন কাব্য: আমি নিজেও নতুন। এতটুকুই বলব— পড়ার বিকল্প নেই। পড়তে হবে৷ তবে সে পড়া শুধু বিনোদন পাবার জন্য পড়লেই হবে না, শেখার জন্যে পড়তে হবে৷ কোনো লেখা পড়ে মুগ্ধ হলে অনুভব করতে হবে কেন মুগ্ধ হয়েছি। সেটি ধারণ করতে হবে। মুগ্ধ না হলে সেটিও অনুভব করতে হবে কেন হইনি। এভাবে ধীরে ধীরে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে।

মুত্তাকিন: পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?

জনি হোসেন কাব্য: পাঠকদের বলব— বেশি বেশি ভালো বই পড়ুন৷ ভালো লেখা পড়ুন৷ যত বেশি ভালো বই পড়বেন, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য তত বেশি ভালো থাকবে।

মুত্তাকিন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

জনি হোসেন কাব্য: তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর সুন্দর প্রশ্ন করার জন্য।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়