ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ও গবেষণায় বেশি বরাদ্দ চান গবি শিক্ষার্থীরা

রাকিবুল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৪ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
স্বাস্থ্য ও গবেষণায় বেশি বরাদ্দ চান গবি শিক্ষার্থীরা

চলছে সংকটময় মুহূর্ত। এর মধ্যেই আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। দেশের বাজেট নিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবীদের পাশাপাশি বরাবরই শিক্ষার্থীদের প্রবল আগ্রহ দেখা যায়।

করোনাকালীন সময়ে কেমন হবে দেশের বাজেট? কোন খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে? কোন খাতে বেশি বরাদ্দ দিলে ভালো হবে; সে সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা। আর মতামতগুলো লিখে পাঠিয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল হাসান।

তরিকুন নেছা খান মিম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ

তিনি বলেন, দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর অবস্থা। কাগজে-কলমে কিংবা মুখে বলি স্বয়ং সম্পূর্ণ দেশ। আসলে কি তাই? দেশের জনগণ এক ক্ষুধার কাছেই অসহায়। এই বাজেটে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দক্ষ জনবলের অভাব। আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রাংশ নেই। আধুনিক চিকিৎসাসেবা ও গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, বেকার ও নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। দেশের আমদানিতে নয়, বেশি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে রপ্তানি খাতে৷ পোশাক শিল্পকে প্রণোদনা দেওয়া উচিত। উন্নত তথ্য প্রযুক্তির না থাকায় শিক্ষাকার্যক্রমে আধুনিকতার ছোঁয়া পুরোদমে লাগেনি। শিক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। সামরিক বাহিনী, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও জরুরি বিভাগে পরিমিত অর্থ বন্টন করতে হবে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে অর্থ বরাদ্দ থাকা দরকার এবং নৌ ও বিমান বাহিনী আধুনিকায়নে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।

আব্দুল্লাহ আল নোমান তকি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

আমাদের দেশের বাজেট দেশের জনসংখ্যার তুলতায় খুবই অপ্রতুল। আমাদের দেশের বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ যায় যোগাযোগ খাতে। কিন্তু একটি উন্নত দেশ হতে হলে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা প্রয়োজন। দেশের প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ দ্রব্য দেশেই উৎপাদন করতে হবে। দেশীয় উৎপাদনকে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে।

শর্মীলা ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগ

চিকিৎসাসেবায় যারা নিয়োজিত, তাদেরকে প্রণোদনা দিতে হবে। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা সেবার জন্য আরও পদ সৃষ্টি করে পরিমিত চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণ ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে মেডিক্যাল শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সেই সাথে বিশ্বের অন্য উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আবশ্যক।

মাহতাবুর রহমান সবুজ, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

রোগী, চিকিৎসকসহ সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালে রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম না কমালে নিম্নবিত্তরা গরীব হয়ে যাবে। মসলা, তেল, শিশুদের গুড়ো দুধসহ নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের দাম কমাতে হবে৷ নইলে এই বাজেট হবে উচ্চবিত্তের কেন্দ্রীয় বাজেট।

সময়ের ব্যবধানে বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেয় মালিক পক্ষ। বাজেট দেশের উচ্চবর্গের মানুষের উপযোগী না করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের উপযোগী করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যেন সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন না হয়ে পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

শারমিন কবিতা, ভাষা যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগ

শিক্ষায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো লাগবে। দুর্যোগ মুহূর্তে শিক্ষকদের বেতন প্রদান ও শিক্ষার্থীদের যেন চাপ না দেওয়া হয়। সেজন্য শিক্ষাখাতে আলাদা ভাতার বরাদ্দ দেওয়া উচিত। চিকিৎসা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রাংশ, ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ, দক্ষ ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে শয্যা অনুযায়ী সরঞ্জাম নিশ্চিতকরণ ও পুরো হাসপাতাল পরিচালনার জন্য শক্ত কমিটি প্রণয়ন করতে হবে। এই অর্থবছরে চিকিৎসা খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানো উচিত।

গবেষণা খাতে আমাদের দেশে বিশেষ কোনো জোর দেওয়া হয় না। জাপান, আমেরিকা বিশ্বের সব উন্নত দেশ এই সেক্টরে অনেক এগিয়ে গেছে। ডেঙ্গু, কোভিড-১৯ নিয়ে গবেষণা করার জন্য জনবল আছে দেশে। তাদের সুযোগ দেওয়া দরকার। গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও উৎসাহ দিতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতন হতে হবে এবং সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। খাদ্য ও জরুরি সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। দুর্যোগ খাতে বড় অঙ্কের অর্থ বণ্টন করা দরকার।

সিরাজুল ইসলাম রিমন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ

জাতীয় বাজেট একটি দেশের চালিকাশক্তি। আগামী বছর কেমন চলবে? অনেকটা নির্ভর করে বাজেটের উপর। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ থাকা উচিত। গবেষণায় আরও বেশি অর্থ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ গবেষণায় অনেক পিছিয়ে আছে। করোনা বিপর্যয়ে দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে নেই। সরকারের নিকট আশা থাকবে, সময় উপযোগী বাজেটই হবে দেশের মানুষের জন্য উপহার।

 

গবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়