ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘প্রিয়জনের সুরক্ষাই হোক ঈদের ব্রত’

মুহম্মদ সজীব প্রধান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৪ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘প্রিয়জনের সুরক্ষাই হোক ঈদের ব্রত’

যেখানে সচেতনতাই একমাত্র রক্ষাকবচ, সেখানে অসচেতনতা ভয়াবহতার কারণ। বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশেও কোনো করুণা দেখায়নি নিষ্ঠুর করোনা।

দেশের এই পরিস্থিতিতে মনে পড়ে বাংলা সেই প্রবাদবাক্য ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়’। অর্থাৎ দেশের এমন নাজেহাল অবস্থায় বেশির ভাগ মানুষের মাঝে সচেতনতার ছিটেফোঁটাও নেই, বরং ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা না মেনে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে মানুষের অবাধ চলাচল লক্ষ্যণীয়।

বিশেষত, ঢাকা শহরে করোনা যে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর তথ্যানুযায়ী দেশে মোট করোনা আক্রান্তের ৮৫ ভাগ ঢাকাতেই। রাজারবাগ, কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও মুগদা করোনায় আক্রান্তের হার সর্বাধিক। গত ২৬ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সীমিত আকারে সবকিছু চালু করার ঘোষণার পর থেকেই লক্ষ করা যায় শহরের অলিগলিতে ব্যতিক্রম সব চিত্র অর্থাৎ রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় শপিংমল এবং বিপণি বিতানে করোনার শঙ্কা উপেক্ষা করে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়।

এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি যাওয়ার ঢল নেমেছে শহরের সড়ক মহাসড়কে। শারীরিক দূরত্বের ব্যাপারে কারো মাঝেই নেই কোনো ভ্রূক্ষেপ। সরকার ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি বর্তমানে গণপরিবহনে রূপ নিয়েছে, যা সত্যিই দুঃখজনক। শুধু তাই নয় ট্রাক, সিএনজি, অটো বাইক ও মোটরসাইকেলেও একই চিত্র দৃশ্যমান। এসব গাড়িতে নেই কোনো জীবাণুনাশক; নেই কোনো স্বাস্থ বিধির প্রয়োগ। তবুও গাদাগাদি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহর ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এক্ষেত্রে প্রশাসনের সক্রিয়তা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়, আর এর প্রভাব কতটা ভয়ংকর হবে, সেটা সময় বলে দেবে। এসব মানুষ নিজের পরিবারসহ দেশের গ্রামগুলো চরম ঝুঁকিতে ঠেলে দিবে সেটা আপাতত নির্দিধায়ই বলা যায়। যদিও প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পরিবার এবং সমাজকে করোনার থাবা থেকে রক্ষা করতে চায়, তবুও সিংহভাগ মানুষের কর্মকাণ্ডে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে না। মূলত বর্তমানে স্বাস্থবিধি মেনে যে যেখানে আছে, সেখানে থাকার মাধ্যমেই প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

ঈদ মানেই আনন্দ, আর পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে আনন্দঘন মুহূর্ত ভাগাভাগি করার  মাধ্যমে ঈদের আনন্দ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও এমন মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে অসচেতন জনগোষ্ঠী নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন।  কিন্তু এক্ষেত্রে বর্তমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যুক্তি হচ্ছে, ঈদ মানে আনন্দ হলেও পরিবার ও প্রিয়জনের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই সর্বোচ্চ আনন্দ প্রকাশ পাবে। তাই সর্বস্তরের মানুষের উচিৎ পরিবার ও সমাজের সুরক্ষার জন্য স্থানান্তরিত না হয়ে যে যেখানে আছে, সেখানে অবস্থান করা।

ইতোমধ্যে যারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজ গ্রামে গিয়েছেন, তাদের অবশ্যই কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, পরিচ্ছন্নতাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যাবশ্যক। এছাড়াও সবার উচিৎ ঈদকে কেন্দ্র করে হৈ-হুল্লোর আনন্দ উচ্ছ্বাস পরিহার করা এবং স্বজনদের বাড়ি যাওয়ার রীতি বর্জন করা। তাহলেই ভালো থাকবে প্রতিটি পরিবার, সমাজ এবং প্রিয় দেশ। তাই প্রিয়জনের সুরক্ষাই হোক এবারের ঈদ।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


বশেমুরবিপ্রবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়