ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জিপিএ-৫ বনাম কোয়ালিটি এডুকেশন

সাইফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৩১ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
জিপিএ-৫ বনাম কোয়ালিটি এডুকেশন

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে জীবনকে আলোকিত করা এবং মনুষ্যত্ববোধ অর্জন করা। বর্তমানে আমাদের তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু মানুষ শিক্ষাকে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডের দ্বারা সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। তার মধ্যে একটি হলো জিপিএ ৫।

আমাদের সমাজব্যবস্থায় মনে করা হয় জিপিএ-৫ পাওয়াই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। জিপিএ ৫ না পেলে একজন শিক্ষার্থীকে সমাজের চোখে ছোট করে দেখা হয়। এ রেজাল্ট পেতে তার মা-বাবা থেকে শুরু করে ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে সবাই শিক্ষার্থীর উপর চাপ প্রয়োগ করে। আসলেই জিপিএ-৫ কি সবকিছু? এটা পেলে হয়তো একজন শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে অনেক প্রশংসিত হন, কিন্তু আদৌ কি জিপিএ-৫ জীবনের উন্নতিতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে? জীবনে উন্নতি করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই নিজ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজের জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই কিন্তু দক্ষতার পরিচয় দেওয়া না। তবে এটি শিক্ষাজীবনের একটা প্রাপ্তি এবং সাফল্যের একটি ছোট্ট ধাপ।

জিপিএ-৫ কখনোই গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে না। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলোতে জিপিএ ছাড়া ভর্তি নেওয়া হয় না। তাহলে, আমরা ধরে নিতে পারি, যাদের ভর্তি নেওয়া হয়েছিলো সবাই আবার জিপিএ-৫ নিয়েই বের হবে? কিন্তু তা হয় না, কারণ জিপিএ-৫ কখনোই কোনো শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করতে পারে না। সব দিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে হয়। জিপিএ-৫ পাওয়ার পেছনে ছোটাছুটি করা একটি ব্যর্থ প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই না। যারা জিপিএ-৫ পায়, তারা সবাই কি ঢাবি, বুয়েট, মেডিকেলসহ দেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়? বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, জিপিএ-৫ ছাড়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই চান্স পায়। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে কী শিখলো আর কীভাবে তা কাজে লাগালো সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়।

আমাদের অভিভাবকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে এ রেজাল্ট পাওয়ার জন্য। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং তারা বিভিন্ন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হয়। যেখানে অভিভাবকদের উচিৎ তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া।  কিন্তু সেখানে আমাদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের উপর চাপ দেয়, ফলে প্রতিবছর ঝরে যায় হাজারো তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এতটাও উন্নত নয়, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাস করবে কিংবা প্রত্যেকেই জিপিএ-৫ পাবে। কিন্তু এই বিষয়টা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা মেনে নিতে নারাজ। তাই জিপিএ-৫ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা সবসময় বেড়েই চলছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের একদিনের মধ্যেই ১৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ২০১৯ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না করায় ১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানা যায়। এসব তরুণ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার জন্য দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা তথা জিপিএ-৫ নামক মানদণ্ড।

একজন শিক্ষার্থী তখনই পরিপূর্ণ শিক্ষিত হতে পারবে, যখন সে তার দক্ষতার মাধ্যমে নিজের জীবনকে আলোকিত করতে পারবে এবং মনুষ্যত্ববোধ অর্জন করতে পারবে। জিপিএ ৫ নামক মানদণ্ড কখনো একজন শিক্ষার্থীর দক্ষতা বিচার করতে পারবে না। একজন শিক্ষার্থীর দক্ষতা বিচার করতে হলে আনুষঙ্গিক সব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ, তাই তাদের যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব। তবেই আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি আদর্শ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


ঢাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়