ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জিপিএ-৫ মানসিকতা ও অ্যাডমিশন টেস্ট

ইসতিয়াক হোসেন সোয়েব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
জিপিএ-৫ মানসিকতা ও অ্যাডমিশন টেস্ট

জিপিএ-৫ পেলে ছাত্র ভালো, না পেলে ছাত্র খারাপ, এমন একটা ধারণা আমাদের সমাজে চলে এসেছে। যারা জিপিএ-৫ পাচ্ছে তাদেরকে আমরা অতি উৎসাহী করে ফেলছি, আর যারা পাচ্ছে না তাদের মনোবল চিরতরে ভেঙে দিচ্ছি। কিন্তু বাস্তব জীবনে নিজের আত্ন-অহংকারের বাইরে এই প্লাসের মূল্য ঠিক কতখানি তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি?

এক সময় ম্যাট্রিক পাস করা লোকের দেখা পাওয়া অমাবস্যার চাদের মতোই দুষ্কর ছিল। আশেপাশের কয়েকগ্রাম খুঁজেও একজন ম্যাট্রিক পাস লোকের সন্ধান পাওয়া যেতো না। কেউ যদি ম্যাট্রিক পাস করতো, তাহলে দূর দূরান্ত থেকে লোক তাকে দেখতে আসতো। কিন্তু সময় বদলে গেছে। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, ঘরে ঘরে ম্যাট্রিক পাস এখন।

সময়ের পরিবর্তনে ম্যাট্রিক পাস করলে দূর দূরান্ত থেকে  কেউ দেখতে না আসলেও, এক শ্রেণির লোকদের আবেগ বেড়ে যায় রেজাল্টের দিন। তাদের কথা এ প্লাস পাইলে বেশ, না পাইলে শেষ। তাদের যুক্তি এপ্লাস পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পাবে, এপ্লাস পায় নাই চান্সও পাবে না। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজে এইসব লোকের সংখ্যাই বেশি। এসব লোকদের দ্বারা আমাদের সমাজ খুব বাজেভাবে প্রভাবিত। অনেক ছাত্র-ছাত্রী মানসিকভাবে এইসব লোকদের মোকাবিলা করতে পারে না। ফলে এ প্লাস না পেলে অথবা রেজাল্ট খারাপ করলে অনেকেই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।

কিন্তু বাস্তবতা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে রেজাল্ট তেমন কোনো বাঁধা না। ভর্তি পরীক্ষায় বসার জন্য সর্বনিম্ন একটা ফলাফল থাকলেই ভালো প্রস্তুতিতে চান্স পাওয়া সম্ভব।

এইবার এসএসসিতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুসারে পাবলিক, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে মোট আসন ৬৪ হাজার। তাহলে দেখা যাচ্ছে  বিশাল পরিমাণ এপ্লাসধারী ছাত্র-ছাত্রী কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে না। আবার অনেকেই এই জিপিএ-৫ পেয়ে পড়াশোনার হাল ছেড়ে দেয়। ফলে ইন্টারে রেজাল্ট খারাপ করে ফেলে তারা। অন্য দিকে যে ছাত্র-ছাত্রী রেজাল্ট খারাপ করেছে তাদেরকে যদি বকাঝকা না করে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়, তাহলে তাদের ইন্টারে ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও ভালো ফলাফল করে।

খোঁজ নিলে দেখা যায়, পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বিশালসংখ্যক স্টুডেন্ট মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে মোটামুটি রেজাল্ট করে আসা। আসলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যার বেসিক ভালো সেই চান্স পাবে। যে ভর্তি পরীক্ষার আগের তিনমাস মন দিয়ে পড়বে সেই চান্স পাবে। এপ্লাস পাইলে পাবে, না পাইলে পাবে না এমন কোনো কথা নেই।

তাই, যারা রেজাল্ট খারাপ করছে, তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। নেগেটিভ কথাবার্তার লোকদের থেকে দূরে রাখুন। সামনে ভালো করার মোটিভেশন দিন। একসময় তাদের মধ্যে সেরাটা বের হয়ে আসবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

রাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়