প্রশ্ন-উত্তরে করোনা প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস
ডা. মারুফ রায়হান খান || রাইজিংবিডি.কম
‘করোনা’ শব্দটির চেয়ে বড় আতঙ্কের নাম পৃথিবীতে এখন আর নেই। বিশ্ব এমন মারাত্মক মহামারি খুব কমই দেখেছে৷ চারদিক হু হু করে বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। যেহেতু এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর কোনো ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়নি, তাই যথাযথ এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আসুন প্রশ্ন-উত্তরে জেনে নেই, কী ধরনের খাবার গ্রহণ করলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
প্রশ্ন: এমন কোনো খাবার আছে, যা খেলে করোনাভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না?
উত্তর: না, নেই।
প্রশ্ন: এমন কোনো খাবার আছে, যেটা না খেলে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা যাবে না?
উত্তর: না, নেই।
প্রশ্ন: তাহলে খাবারের ব্যাপারে পরামর্শ কী?
উত্তর: সুষম খাদ্য (ব্যালেন্সড ডায়েট) খেতে হবে। সেসব খাবার থেকেই শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিয়ে নেবে।
প্রশ্ন: কোন কোন খাবার বেশি খাব?
উত্তর: এমন খাবার বেশি খেতে হবে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মূল যুদ্ধটি করে। ভিটামিন সি, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রশ্ন: কোথায় পাব ভিটামিন সি?
উত্তর: পেয়ারা, আমলকি, লেবু, জাম্বুরা, কমলা, টমেটো, কাঁচামরিচ, মিষ্টি আলু ইত্যাদিসহ অন্যান্য মৌসুমি ফলমূল এবং শাকসবজিতে।
প্রশ্ন: কোন কোন খাবারে জিঙ্ক পাওয়া যায়?
উত্তর: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বীচি, বাদাম, ডাল এবং গমজাতীয় খাবারে জিঙ্ক থাকে।
প্রশ্ন: ম্যাগনেসিয়াম কোন খাবারে থাকে?
উত্তর: পালংশাক, টক দই, কলা ইত্যাদি খাবারে।
প্রশ্ন: দৈনিক কত রকমের শাকসবজি ও ফল খেতে হবে?
উত্তর: দিনে কমপক্ষে দু’ধরনের শাকসবজি এবং এক ধরনের ফল খাওয়া ভালো।
প্রশ্ন: শাকসবজি কীভাবে কাটতে হবে?
উত্তর: বড় বড় টুকরো করে কাটতে হবে।
প্রশ্ন: শাকসবজি রাঁধতে হবে কীভাবে?
উত্তর: কম তাপে ঢেকে রান্না করতে হবে, যাতে পুষ্টি উপাদানগুলো অটুট থাকে।
প্রশ্ন: মাছ, মাংস, ডিমও কি অল্প আঁচে রান্না করতে হবে?
উত্তর: না। এগুলো বেশি আঁচে সময় নিয়ে রান্না করতে হবে, যেন ভালোভাবে সেদ্ধ হয়।
প্রশ্ন: রান্নার সময় ভাতের মাড় কী করব?
উত্তর: না ফেলাই শ্রেয়।
প্রশ্ন: রান্না ও খাওয়ার আগে কোনো বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে?
উত্তর: ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন: ভিটামিন-ডি এর ব্যাপারে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
উত্তর: ভিটামিন-ডি আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি বড় সংখ্যক মানুষের শরীরে ভিটামিন-ডি এর স্বল্পতা দেখা গেছে। ভিটামিন-ডি এর সবচেয়ে বড় উৎস সূর্যের আলো। সূর্যের আলো যখন ত্বকের উপর পড়ে, তখন আমাদের শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়।
প্রশ্ন: কতক্ষণ সূর্যের আলোতে থাকব প্রতিদিন এবং কখন?
উত্তর: দিনে অন্তত ১০-১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। মধ্য দুপুরে সূর্য যখন প্রখর হয়ে ওঠে, তখন রোদের আলো শরীরে লাগানো ভালো। তবে সামাজিক দূরত্ব যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে ব্যাপারটিও খেয়াল রাখতে হবে। নিজের বারান্দা, ছাদ বা বাগান বেছে নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: কোন কোন খাবারে ভিটামিন-ডি থাকে?
উত্তর: মাছের তেল, কলিজা, মাশরুম, মাংস, ডিম ও দুধ ইত্যাদিতে।
প্রশ্ন: ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যাবে?
উত্তর: চিকিৎসকের পরামর্শে দৈনিক ৪০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট খাওয়া যেতে পারে। তবে নিজের ইচ্ছেমতো বেশি ডোজে খেলে কিডনি, হৃদপিণ্ড এবং হাড়ের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন: পানি পানের ব্যাপারে কোনো পরামর্শ দেবেন?
উত্তর: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করতে হবে। কুসুম গরম পানি হলে ভালো হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরের নানা ক্ষতি হয়।
প্রশ্ন: কীভাবে বুঝবো পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছি কি না?
উত্তর: প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হলে বুঝে নিতে হবে পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না শরীর।
প্রশ্ন: সুস্থ থাকতে চাইলে কোন কোন খাবার পরিহার করতে হবে?
উত্তর: চিনি, চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, বোতলজাত কোমল পানীয়, কৃত্রিম জুস, কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদি।
প্রশ্ন: দিনে কতটুকু লবণ খাওয়া যাবে?
উত্তর: ১ চা চামচের কম।
প্রশ্ন: খুসখুসে কাশি বা গলাব্যথা থাকলে বাসায় কী খেতে পারি?
উত্তর: মধু, লেবু-আদা-মধুমিশ্রিত চা, মুরগির গরম স্যুপ ইত্যাদি খেতে পারেন। গলা ব্যাথার জন্য লবণপানি দিয়ে কুলি করা যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে৷
লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতাল।
ঢাকা/খালিদ/মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন