‘শিশুশ্রম বন্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন’
হাছিবুল বাসার মানিক || রাইজিংবিডি.কম
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই শিশুসহ অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। সংকটকালীন পরিস্থিতিতে এরপরেও শিশুশ্রম কিন্তু থেমে নেই!এমন সংকটমুহূর্তে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনার-আমার সবাইয়ের নৈতিক দায়িত্ব। কেননা, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার।
শিশুদের মধ্যেই সুপ্ত থাকে ভবিষ্যতের কবি, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিভা। শিশুদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি অভিভাবক চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ছিন্নমূল ও অসহায় শিশু আছে, যারা দারিদ্র্যের বলি হয়। যারা তাদের অধিকার বঞ্চিত হয়ে অনাদরে-অবহেলায় দিন কাটায়। দরিদ্র ও অসহায় শিশুরা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
শিশু কারা? জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আঠারো (১৮) বছরের কম বয়সী সব ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে এবং চৌদ্দ (১৪) থেকে আঠারো (১৮) বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে কিশোর/কিশোরী হিসেবে গণ্য করা হয়। শিশুশ্রম কী? স্কুল চলাকালীন সময় চৌদ্দ (১৪) বছরের নিচে কোনো শিশুকে তার পরিবারের লিখিত অনুমতি ছাড়া উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ দেওয়া বা কাজ করিয়ে নেওয়াকে শিশুশ্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথবা শিশু শ্রম বলতে শিশুদের শ্রমের সময় প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন কাজে এবং পরোক্ষভাবে গার্হস্থ্য শ্রমে ব্যয় করাকে বোঝায়।
প্রতিবছর ১২ জুনকে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিবছর দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘কভিড-১৯: শিশুশ্রম থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করুন, এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি!’। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এমন প্রতিপাদ্যই বলে দেয় করোনাকালে শিশুশ্রম প্রতিরোধ করে শিশুর নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা কতটা যুক্তিযুক্ত ও সময়োপযোগী দাবি।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশুশ্রম বিদ্যমান। যে বয়সে একটি শিশুর বই, খাতা, পেন্সিল নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া, আনন্দ চিত্তে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে ঐ শিশুকে নেমে পড়তে হয় জীবিকার সন্ধানে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে একজন পিতা যখন তার পরিবারের ভরণপোষণে ব্যর্থ হয়, তখন ঐ পিতার পক্ষে তার সন্তানদের পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ রাখা আর সম্ভব হয়ে উঠে না। আর এভাবে একটি শিশু একবার পারিবারিক বন্ধন হতে বিছিন্ন হবার পর সে হারিয়ে যায় অগণিত মানুষের ভিড়ে। মানুষের বাড়িতে, দোকানপাটে ফাইফরমায়েস খাটা থেকে শুরু করে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নিয়োজিত হচ্ছে। আর এই সুযোগে দেশের প্রচলিত আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে শহরের ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় নানা ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবসার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ঝালাই, স্প্রে-পেইন্টিং, অটোমোবাইল গ্যারেজ, প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরির কারখানা। জাতিসংঘ কর্তৃক চিহ্নিত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে ঝালাই কারখানার কাজ অন্যতম। কারখানা মালিকদের অধিক মুনাফা লাভের আশায় সেখানে নামমাত্র বেতনে শিশুদের দিনরাত খাটানো। কখনো শুধু একবেলা খাবারের বিনিময়ে তাদের কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। কারখানার পরিবেশ দূষণজনিত কারণে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, শ্রবণবৈকল্যসহ নানা রকম রোগের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া কারখানা মালিকের নির্যাতন-নিপীড়ন তো রয়েছেই।
বাংলাদেশের শিশু শ্রমিকের মধ্যে একটি বিশাল অংশ হচ্ছে মেয়েশিশু। দরিদ্র পরিবারের বেশির ভাগ মেয়েশিশুকে গৃহকর্মীর কাজে লাগানো হয়। সেখানে দুবেলা দুমুঠো খাবারের বিনিময়ে দিনরাত খেটে যেতে হয়। কখনো সামান্য খাবারটুকু থেকেও বঞ্চিত হতে হয় ওদের। এ ছাড়া নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন তো রয়েছেই। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দারিদ্র্যই মূলত শিশুশ্রমের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে শিশুশ্রম দিনদিন বেড়ে তা আজ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে কারখানায়সহ প্রায় ৪৭ ধরনের কাজ করানো হয় শিশুদের দিয়ে। বাংলাদেশে শতকরা ৯৪ ভাগ শিশুশ্রমিক কৃষি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। প্রায় ৪৭ লাখ শিশু শ্রমিকের মধ্যে ৫ থেকে ১৪ বছরের শিশুর সংখ্যা বেশি। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের প্রায় ৭৫ লাখ শ্রমজীবী শিশুর মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ শিশু জনপ্রতি সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাজ করে থাকে।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবিক অর্থে অল্প মজুরি দিয়ে অধিক কর্মঘণ্টায় নিয়োজিত রাখা যায় বলে শিশুদের শ্রমে নিয়োগের ক্ষেত্রে মালিকদের অধিক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো মজুরি ছাড়া পেটেভাতে বা স্বল্পতম শ্রম বিনিময় মজুরি নিয়ে শিশু-কিশোরদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। যার ফলে শ্রমে নিয়োজিত এসব শিশুরা বঞ্চিত হয় শিক্ষা, সু-স্বাস্থ্য ও পুষ্টি থেকে। আর এসব শ্রমজীবী শিশুরা যে কর্মপরিবেশে তাদের কাজ সম্পাদনা করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা তাদের অনুকূলে থাকে না।
শ্রমে নিয়োজিত একজন শিশু-দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করে; এমন কাজ করে যা তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং সামাজিক অবস্থানের উপর অন্যায় চাপ সৃষ্টি করে; নিরাপত্তাহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে; বিনামজুরি, অনিয়মিত মজুরি, স্বল্প মজুরিতে কাজ করে; সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে; শিক্ষা জীবনকে ব্যাহত করে; বাধ্য হয়ে কাজ করে; ব্যক্তি মর্যাদা হেয় করে এমন কাজ করতে বাধ্য হয়; শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; এবং বিশ্রাম বা বিনোদনের কোনো সুযোগ পায় না। উক্ত কর্ম পরিবেশ শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য তথা জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ এবং অমর্যাদাকর। কিন্তু প্রতিটি শ্রমজীবী শিশুই তাদের কাজ সম্পাদন করে উপরিউক্ত পরিবেশে। আর এই পরিবেশ থেকে শিশুকে উদ্ধারে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব আমাদেরই।
সম্পদের অপ্রতুলতা ও অসম বণ্টন, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব বাড়িয়ে চলছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। শিশুশ্রম যেমন শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে, তেমনি সৃষ্টি করছে নানাবিধ সামাজিক সমস্যার। এর ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সামাজিক সুস্থ বিকাশের ধারা। বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ আইনের ৪১টি ধারার মধ্যে বলা হয়েছে, কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে তাকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিতে হবে। তবে ১৪ থেকে ১৮ বছর ‘কিশোর বয়স’ পর্যন্ত কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। আগে ১২ বছরের শিশুদের হালকা কাজ করতে দেওয়া হতো।
শিক্ষাবঞ্চিত নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন শিশুদের স্বল্পমেয়াদি কারিগরি প্রশিক্ষণদানের পর তাদের ঝুঁকিমুক্ত কাজের সংস্থানের জন্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে শিশুশ্রমের প্রবণতা কমে যাবে। অধিকারবঞ্চিত শিশুদের পুনর্বাসনের মানবিক দায়িত্ব সমাজের বিত্তবানদের ও রাষ্ট্রের। শিশুশ্রম বন্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে বাস্তবায়নের পথও উন্মুক্ত হবে। শিশুদের লেখাপড়া, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা ছাড়া শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না। এ লক্ষ্যে শিশুশ্রমের কুফল সম্বন্ধে শিশুর অভিভাবকসহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে তোলাসহ শিশুদের শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে শিশুশ্রম বন্ধের স্থায়ী সমাধান বেরিয়ে আসুক।
আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের শিশুদের দিয়ে এ ধরনের কাজ করানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম প্রতিরোধে শিশুশ্রমকে শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল মনে করে শিশুশ্রম প্রতিরোধে গৃহীত কার্যসূচিতে ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের সরিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও দেশের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত ও দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মননে যে শেকড় গজিয়েছে এর কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় তা বাস্তব রূপ নেয়নি।
প্রতি বছর ১২ জুন ঘটা করে শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হলেও ২০২১ সালের মধ্যে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে কি না বলা মুশকিল। কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগদানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকর এবং গৃহকর্মে নিয়োগ ও ভাঙ্গাড়ি খাতকেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। শিশুশ্রম প্রতিরোধ কার্যক্রমকে সফল করে তুলতে অবিলম্বে শিশুনীতি বাস্তবায়ন, আইএলও কনভেনশন ১৮২ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও ১৩৮ অনুসমর্থন করাসহ পথশিশু, ছিন্নমূল শিশু ও শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কলকারখানার বিকাশ, উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের প্রসার ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। আবার দারিদ্র্য নির্মূল করা ছাড়া শিশুশ্রমও বন্ধ করা যাবে না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া জোড়-জবরদস্তিমূলক শ্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে প্রতিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি- যেখানে অধিকার পাওয়া যায় না, সেখানে অধিকার ক্ষুন্ন হবার কথা কীভাবে ভাববো? বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (২০০৬ সনের ৪২ নং আইন)- এর ২(৮) নং ধারা অনুযায়ী ‘‘চৌদ্দ বৎসর বয়স পূর্ণ করিয়াছেন কিন্তু আঠার বৎসর বয়স পূর্ণ করেন নাই’’এমন কোন ব্যাক্তি ‘কিশোর’ এবং ২(৬৩) নং ধারা অনুযায়ী ‘চৌদ্দ বৎসর বয়স পূর্ণ করেন নাই’ এমন কোনো ব্যক্তিকে ‘শিশু’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তবে ‘শিশুশ্রম’ বা ‘শিশুশ্রমিক’ এর কোনো সংজ্ঞা সরকারি-বেসরকারি কোনো দলিলে পরিলক্ষিত হয় না। এমতাবস্থায়, শিশুশ্রম যাবতীয় আলোচনায় ‘শিশু’ ও ‘কিশোর’ এর সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (২০০৬ সনের ৪২ নং আইন)- এ ‘শিশু’ ও ‘কিশোর’ এর বয়সভিত্তিক সংজ্ঞাটি অনুসরণীয়। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী কোন শিশু দ্বারা সম্পাদিত শ্রম ‘শিশুশ্রম’ হিসেবে বিবেচিত হবে। শ্রমে নিয়োজিত শিশুর বিশেষণ হিসাবে ‘শিশুশ্রমিক’ এর স্থলে ‘শ্রমে নিয়োজিত শিশু’ বা ‘শ্রমজীবী শিশু’ ইত্যাদি বাক্য/ বাক্যসমূহ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এই শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা বর্তমানে বাংলাদেশে কত, তা কি আমরা সঠিক জানি?
শিশু অধিকার সনদের মূলনীতি বলছে শিশুর প্রতি বৈষম্যহীনতা, শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা, শিশুর অধিকার সমুন্নত রাখতে পিতা মাতার দায়িত্ব, শিশুদের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা কতটুকু জানি বা একমত পোষণ করছি? জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০০২-২০০৩ অনুযায়ী সারাদেশে শ্রমজীবি শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ ৮০ হাজারের কাছাকাছি। যাদের মধ্যে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা শহর ঢাকাতেই রয়েছে ৭ লাখ ৮ হাজার শিশু এবং এদের মধ্যে ৩ লাখ ৮৭ হাজার শিশুই বিভিন্ন ধরনের ঝুকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হিসাব সংখ্যার বাইরে, তবে ২০০২-০৩ এর জাতীয় শিশুশ্রম জরিপের পর আর কোনো গ্রহণযোগ্য জরিপ না হওয়ায় বর্তমান সময়ের শ্রমজীবী শিশুদের সংখ্যা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে বর্তমানে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তবে সাম্প্রতিক একটি বেসরকারি জরিপে দেখানো হয়েছে যে, ১৫ বছরের নিচে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ লাখ মেয়ে শিশু গৃহকর্মে নিয়োজিত। আর এদের অধিকাংশই শিকার হয় শারীরিক ও মানসিক যৌন নির্যাতনের। তাই Unicef প্রতি আবেদন থাকবে, সামাজিকভাবে শিশুশ্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সমাজিক জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জন্য সঠিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান করা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কৌশল ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে শিশুশ্রমের যেরূপ পরিস্থিতি তাতে আদৌ এই কর্মসূচি সফল হবে কি না তা কল্পনীয়। তবে গড়ে উঠুক একটি শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ, এই আমাদের সবার প্রত্যাশা।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাবি/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন