ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুর্দিনে কেমন আছে পথশিশুরা

তাসনিম হাসান মজুমদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ১ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
দুর্দিনে কেমন আছে পথশিশুরা

পৃথিবীজুড়ে আমরা একটা বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করছি। প্রায় সব দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। মালিকপক্ষ কর্মচারীদের বেতন না দিতে পেরে, ছাঁটাই করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বহু মানুষকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হচ্ছে। বহু কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকরা বেকার পড়ে আছেন।

এমনি জাতির ক্রান্তিলগ্নে পথশিশুরা কেমন আছে? পথশিশু শব্দটি সেই সব শিশুদের প্রকাশ করে, যাদের কাছে রাস্তাই (বিস্তৃত অর্থে বস্তি, পতিত জমি ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত) তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান এবং/অথবা জীবিকা নির্বাহের উৎস হয়ে উঠেছে এবং তারা দায়িত্বশীল কোনো প্রাপ্তবয়স্ক কর্তৃক সুরক্ষিত, পথ নির্দেশনা প্রাপ্ত ও পরিচালিত হয়। ধারণা করা হয় যে বাংলাদেশে ৬,০০,০০০-এর বেশি পথশিশু বসবাস করছে এবং এদের ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায় বসবাস করে। মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৮তম স্থানে থাকা একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেখানে এই শিশুরা সামাজিক স্তরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে।

দেশের জনসংখ্যা এখন বেড়েছে, আর রাস্তার শিশুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৪০,০০,০০০ জনে। রাস্তার শিশুদের বসবাসের জায়গা নেই, বা এমনকি ঘুমও নেই, তারা রাস্তা পেরিয়ে আসতে পারে, গোলাপ বিক্রি করে।

বাংলাদেশের অনেক রাস্তার ছেলেমেয়ে কম বয়সে মারা যায়, তারা প্রয়োজনীয় যত্নও পাচ্ছেন না। প্রতি বছর জলবাহিত রোগে ১,১০,০০০ শিশুর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের রাস্তার শিশুরা স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে অক্ষম, যা অনেক সময় তাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত নয় এমন খাবার খেতে বাধ্য করে। রাস্তার ছেলেমেয়েরা অনেক সময় বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে না, কারণ তারা সঠিক শিক্ষা পেতে পারে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় তাদের সহায়তা প্রদান করে, আর যেসব এনজিও ইউনিসেফ প্রায়ই এনজিওগুলোকে সহায়তা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ স্ট্রিট চিলড্রেন ফাউন্ডেশন, দ্য স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, চিলড্রেন ফেরদৌস, জাগো ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ স্ট্রিট চিলড্রেন অর্গানাইজেশন ও বিগ স্কুলসহ বিভিন্ন রাস্তার শিশুদের সীমিত সহায়তা প্রদান করে এমন ছোট এনজিওগুলো রয়েছে ওইসআরিয়ান, সুএমবাকোনা ফাউন্ডেশন ইত্যাদি। কিছু সংগঠনও রাস্তার শিশুদের অনুদান তুলে দেয়।

বাংলাদেশের সমন্বিত কমিউনিটি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ এজেন্সি রাস্তার শিশুদের, বিশেষ করে যারা নির্যাতিত ও যৌন শোষণ করছে, তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করছে। এর স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি স্ট্রিট চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ২০১১ সালে এই সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সড়ক শিশু দিবস পালন করে, যেখানে রাস্তার শিশুদের অধিকার নিয়ে প্রচার মাধ্যম ইউনিয়ন ফর স্ট্রিট চিলড্রেন (সিএসসি) ২০১১-এ চালু হয় সারা বিশ্বেই।

রাস্তার শিশুরা এনজিও, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নির্মাতা, সেলিব্রিটি, কোম্পানি এবং বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে তাদের আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করে। বাংলাদেশে পথশিশুদের স্কুলে যাওয়ার সামর্থ নেই। তাই তাদের সঠিক শিক্ষা লাভের সুযোগ নেই। অথচ, এই শিশুদের জন্য শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের যদি সঠিক শিক্ষা না থাকে, তাহলে তাদেরকে বাকি জীবনটাও দুর্বিষহভাবে কাটাতে হবে। তবে, কিছু এনজিও পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। এই করোনার সময় আমাদের দানশীলতার হাত আরও প্রশস্ত করতে হবে। পথশিশুরা যাতে কষ্টে না থাকে। কেউ মায়ের পেট থেকে বের হয়েই পথ শিশু হয়ে যায়নি। পরিস্থিতি তাঁদের পথশিশু করে দিয়েছে। এমনও দেখা গিয়েছে, কিছু সংখ্যক বাচ্চা দিনের বেলায় বিভিন্ন জনসমাগম এলাকায় ভিক্ষা করছে, একটু খাবারের জন্য। আর রাতের আঁধারে আবার দেখেছি, ওরা মাথা গুঁজার আশ্রয়টুকু পায়নি।  আমরা পথশিশুর প্রতি সদয় হই।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।


চট্টগ্রাম/হাকিম মাহি       

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়