ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দ্য পার্ল: নিঃস্ব মানুষের উপাখ্যান

আনিকা তাসনিম সুপ্তি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৬ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
দ্য পার্ল: নিঃস্ব মানুষের উপাখ্যান

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন ঔপন্যাসিক জন আর্নেস্ট স্টাইনবেকের খুব সামান্য কাহিনী নিয়ে লেখা বিখ্যাত এক উপন্যাস ‘দ্য পার্ল’।

স্টাইনবেকের জন্ম ১৯০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাসে। জীবনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে পেশা বদলেছেন জনপ্রিয় এই আমেরিকান লেখক। শিক্ষাজীবনেই তার লেখালেখির হাতেখড়ি হলেও লেখাকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ১৯৩৫ সালে।

‘দ্য পার্ল’ এর কাহিনী প্রধানত এক জেলে পরিবারকে ঘিরে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কিনো নামের এক জেলে, যে সমুদ্রে ডুব দিয়ে মুক্তা তুলে এনে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে সংসার চালায়। স্ত্রী জুয়ানা আর শিশু সন্তান কয়োটিটোকে নিয়েই তার ছোট্ট সাজানো সংসার। কিন্তু তাদের নিরালা শান্ত জীবন চরম অশান্ত হয়ে ওঠে হঠাৎই। উপন্যাসে রক্ত মাংসের মানুষকে ছাপিয়ে প্রধান আকর্ষণ নিজের দিকে নিয়ে নেয় একটি জড়পদার্থ-সাগরতলের মায়াবী আলোয় বড় একটি ঝিনুকের শাঁসের ভেতর থেকে স্বর্গীয় রশ্মিতে ঝিকমিক করে ওঠা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি একটি মুক্তা!

মুক্তাটি হাতে পাওয়ার পর থেকেই কিনো আর জুয়ানা অফুরন্ত রঙিন স্বপ্ন দেখা শুরু করে। কিন্তু এর সাথে সাথেই অনাকাঙ্ক্ষিত অস্পষ্ট কিছু ঘটনায় তারা তাদের সমস্ত চৈতন্যে অশুভ সংগীত শুনতে পায়। কিনো মুক্তাটি বিক্রির জন্য মরিয়া হয়ে উঠে, কিন্তু অসৎ ব্যবসায়ীরা সব একজোট হয়ে কৌশলে ন্যায্য দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু তাদের কৌশল ছাপিয়ে কিনোর জেদ আর দৃঢ়তা বড় হয়ে উঠে৷ সে সিদ্ধান্ত নেয় এই মুক্তার জন্য যা তাদের প্রাপ্য তাই আদায় করবে। প্রয়োজনে দূরদেশে পাড়ি জমাবে। জুয়ানার মনের আশঙ্কাকে গুরুত্ব দেওয় না কিনো, পরিণামে রাতের আধাঁরে ঝড় নেমে আসে তাদের সাজানো বাড়িতে। হুমকির মুখে পড়ে যায় কিনোর জীবন, রাতের আধাঁরে ভাই জুয়ান টমাস আর ভাইয়ের স্ত্রী অ্যাপোলোনিয়ার সহযোগিতায় অনিশ্চয়তার দিকে পা বাড়ায় জেলে পরিবারটি।

পথে অনেক বাধা বিপত্তি পার করে, অনেক সংগ্রামের পর তাদের শেষ পরিণতি হয় অত্যন্ত দুঃখজনক। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি হারিয়ে কিনো আর জুয়ানা নিঃস্ব হাতে ফিরে আসে লা পাজের ধূলিধূসর পথে।

অত্যন্ত সাধারণ একটি কাহিনী যে পাঠকের মনে এতটা জায়গা নিতে পারে তা ‘দ্য পার্ল’ পড়েই উপলব্ধি করা যায়। এই বইতে জেলে পরিবারটির মাধ্যমে লেখক সারা পৃথিবীর রিক্ত, নিঃস্ব, নির্যাতিত, প্রতারিত মানুষের স্বপ্ন আর জীবনের স্বরূপ দেখিয়েছেন। ‘দ্য পার্ল’ এর প্রতিটি লাইনে চারপাশের অসংখ্য মানুষের লোভ, হিংসা, দ্বেষ, ভন্ডামি, স্বার্থপরতা আর হিংস্রতা ছড়িয়ে আছে।

অত্যন্ত সাহসী, পরিশ্রমী, দায়িত্ববান, শক্তিশালী আর দৃঢ় চরিত্র কিনো, স্ত্রীর চোখে সে ঈশ্বরের মতো। আর জুয়ানা চিরচেনা নারী চরিত্র-স্বামীর চোখে যে শান্ত, সুশীলা, বিনম্র, সদা আনন্দময়ী। আবার একই সাথে যার ভিতরটা ইস্পাতের মতো দৃঢ়। এই উপন্যাসে মূল্যবান জীবন মূল্যহীন হয়ে উঠে সামান্য মুক্তার জন্য। আসলে উপন্যাস জুড়ে মুক্তা একটি উপমা মাত্র! জন স্টাইনবেক মুক্তার মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীর নিঃস্ব মানুষের স্বরূপ বুঝিয়েছেন।

লেখক: লোক প্রশাসন বিভাগ (৩য় বর্ষ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

কুবি/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়