ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিরিয়াল নম্বর ৬৯

মেহেদী হাসান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৫, ৬ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সিরিয়াল নম্বর ৬৯

জোছনা আমার ক্রাশ। একেবারে সিরিয়াস লেভেলের ক্রাশ। ওকে ছাড়া বাঁচবোনা ধরণের ক্রাশ। আইডির নাম ‘বেদের মেয়ে জোছনা’। প্রোফাইল ছবিটা একদম হলিউড নায়িকার মতো। একদিন সকালে দেখি ও আমাকে একটা মেসেজ দিয়েছে। আমি প্রচণ্ড খুশি হয়ে সিন করে দেখি একটা মেসেজে: এই ছবিটা ১০০ জনকে শেয়ার করো তাহলে ১০ দিনের মধ্যে ভালো খবর পাবে।

যাহোক ক্রাশ মেসেজ দিয়েছে সেটাই বড় কথা। আমি রিপ্লাইতে লিখলাম-নাইস পিক। ও একটা হারট ইমোজি দিলো। আমিতো সেই সুযোগ পেয়ে গেলাম। অনেক কথা হলো। কথায় কথায় জানতে পারলাম জোছনা তার আসল নাম না। তার আসল নাম ‘মরজিনা’। সে দেখতেও নায়িকাদের মতো না। কালো। কিন্তু তাতে কি? ভালোবাসা কি এতো কিছু মানে নাকি! ক্রাশ মানে তো ক্রাশই।

যাহোক, মেয়ে পটানোয় ওস্তাদ আমার খেলোয়াড় বন্ধু ফাহিমকে ফোন দিলাম। ঘটনা শুনে ও আমাকে বলল কবিতা দে পটে যাবে। আমি প্রচুর মেধাশক্তি খাঁটিয়ে কবিতা লিখলাম ‌‌‌“কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি.... দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।" পাঠকদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বলবেন এটাতো রবীন্দ্রনাথ এর কবিতা।তাদেরকে বলতে চাই, রবীন্দ্রনাথ পড়ার সময় আছে নাকি? নিউজফিডেই তো সারাদিন কাটে। আর আমার এই কবিতা যদি কেউ ১০০ বছর আগে কপি করে থাকে সেটাই বা আমার কি দোষ! আমার ক্রাশ মরজিনা কবিতা পড়ে বলল- ওয়াও! হৃদয় তুমি খুব নায়েচ লিকো। আমি ডগমগ হয়ে গেলাম খুশিতে।

এভাবে মাসখানেক পরে আমি আমার ক্রাশ মরজিনাকে বললাম- আমি গরু তুমি খাসি, তোমায় আমি ভালোবাসি। মরজিনা সে মেসেজ দেখে আমাকে বলল, "দেখো হৃদয় আমি ক্লাস ৫ এ পড়ি তুমি কীভাবে আশা করো আমি এখনো সিংগেল থাকতে পারি?" আমি ভাবলাম ঠিক-ই তো। তারপরে বললাম "এখন উপায়?" মরজিনা বলল, “সিরিয়ালে থাকো। তোমার নাম্বার ৬৯”। সংখ্যাটিকে অন্যখাতে না নেবার জন্য অনুরোধ রইলো। আমি একটা কান্নার ইমোজি দিলাম। মরজিনা বলল, “ভালোবাসার জন্য তুমি এটুকুতো করতেই পারো তাইনা?” আমি সাহস ফিরে পেলাম। হাজার হোক সে আমার ক্রাশ। তার জন্য আমি সব করতে পারি।

একদিন সকালে দেখি মরজিনা আমাকে মেসেজ দিয়েছে ওর জরুরি ১০ হাজার টাকার দরকার। আমি দেখলাম আমার বিকাশে আছে ১৯ টাকা। বাকি টাকা কোথায় পাই? তখনই দেখলাম ওর আরেকটা মেসেজ “ভালোবাসার জন্য তুমি এটুকু তো করতেই পারো তাইনা?” আমি তখন দিনদুনিয়ার সব ভুলে গেছি। শুধু ভাবছি আজ যদি জসিমের মতো লটারি পেতাম কিংবা শাবানার সেলাই মেশিনটা আমার হতো! তো বাবার পকেট থেকে ১৫ হাজার টাকা নিলাম। কিছু টাকা ব্যাকাপ থাকলো। কখন আবার মরজিনা চায়। হাজার হোক সে আমার ক্রাশ। তার জন্য আমি সব করতে পারি।

এর বেশ কিছুদিন পর মরজিনা আমাকে ফোন দিয়ে ভীষণ কান্নাকাটি করতে থাকলো। ওর ব্রেক-আপ হয়েছে। ওর বিএফ (বয় ফ্রেন্ড) নাকি ওর পাশের বাড়ির মেয়েকে নিয়ে গেছিলো পোলিও টীকা দিতে। ওর সন্দেহ মেয়েটার সাথে ওর বিএফ-এর ইটিশ-পিটিশ ৪২০ চলছে। সেজন্যই এই ব্রেক-আপ। আমি মনে মনে খুশি হলাম। আর মাত্র ৬৮ জন। তারপরেই আমি। ওকে আমি বললাম আজকাল কাউকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। দেখো পোলিও খাওয়াতে নিয়ে গিয়ে কি কি খেয়েছে। মরজিনা আমাকে বললো ওর জন্য একটা কবিতা লিখতে। আমি তো পড়লাম ঝামেলায় কবিতা আমি কীভাবে লিখি। তখন দেখলাম ওর আরেকটা মেসেজ “ভালোবাসার জন্য তুমি এটুকুতো করতেই পারো তাইনা?" আমি তখন দুনিয়ায় সব কবিদের কবিতা থেকে পাঁচমিশালি কোপ দিয়ে কবিতা লিখলাম।

ব্রেক-আপ হয়েছে, ভয় কি ক্রাশ?

আমরা এখনো লাইনে রয়েছি ৬৮ জন ক্রাশ,

সব বিএফ এক্স হয়, সব খারাপ, ফুরায় যখন ফ্লুইডের লেনদেন;

থাকে শুধু নতুন মেসেজ, নতুন বিএফ বানানো শুরু হয় দেন।

মরজিনা আমার মেসেজ দেখে আবার চাঙা হয়ে ওঠে। নতুন প্রেম শুরু করে। আমি আফসোস করি। ইশ্ আর কয়টা দিন আগে প্রপোজ করলেই সিরিয়ালে আগে আসতে পারতাম।

এভাবে মাস যায়। সপ্তাহ যায়। মরজিনার ব্রেক-আপ হয়। নতুন প্রেম হয়। আবার ব্রেকাপ হয়। আবার নতুন প্রেম হয়। আমি অপেক্ষায় থাকি। কখন আসবে সিরিয়াল!

আমার কানে বাজে তার অপরূপ মেসেজ “ভালোবাসার জন্য তুমি এটুকুতো করতেই পারো তাইনা?" আমি আরো আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করি। আমার চুল পাকে। দাড়ি বড় হয়। সামনের চোয়ালের দাত পড়ে যায়। আমি তবুও অপেক্ষায় থাকি। মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলে তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করি। হাজার হোক সে আমার ক্রাশ। তার জন্য আমি সব করতে পারি।

আমার মনে সেই কথা- “ওহে মরজিনা। তোমার প্রেমিকের শেষ হইলোনা। শেষ হইবেনা। কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো । আমি সিরিয়ালতো পেয়েছি।"


রাজউক কলেজ/মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়