ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ছাত্রজীবনে স্বেচ্ছাসেবী কেন হবেন

রাশিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৮ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ছাত্রজীবনে স্বেচ্ছাসেবী কেন হবেন

মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে ছা্ত্রজীবন। মানুষ তার মনুষ্যত্ব বিকাশ ও জীবনকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষা অর্জন করে। ছাত্রজীবন হলো জীবন গড়ার উপযুক্ত সময়। তবে এসময় একজন শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তবমুখী সৃজনশীল শিক্ষা।

তাই শিক্ষার্থীরা যেমন কারিগরি, নৈতিক ও সাধারণ শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা অর্জন করে, তেমনি নিজের প্রতিভা, চরিত্র ও মানবিক গুণাবলি বিকাশ করারও যথেষ্ট সুযোগ পায়। তাই শিক্ষার্থীদের উচিৎ এই সময়টা যথাযথভাবে কাজে লাগানো।

ছাত্রজীবনে পড়াশোনা করা ছাড়াও আরো অনেক সময় থাকে। সেই সময়গুলো ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপি, গুগল ও ইউটিউব ইত্যাদির পেছনে বেশি ব্যয় না করে, কোনো সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কাজ করা যায়। তার মানে এই নয় যে, তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অস্বীকার করতে হবে। বরং তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন থেকে অর্জিত শিক্ষাগুলো কাজে লাগানোর ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে।

আজকের তরুণ প্রজন্মই আগামীতে দেশের গুরু দায়িত্ব কাঁধে নেবে। তারা আদর্শ নাগরিক তখনই হবে, যখন তাদের মধ্যে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে। তাই ছাত্রজীবনেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বাস্তবমুখী কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে জাতি। পড়াশোনা পাশাপাশি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা, বাস্তব জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও অন্যকে সাহায্য করার প্রবল ইচ্ছা ছাত্রজীবন থেকেই তৈরি করতে হবে।

এরিস্টটল যর্থাথই বলেছেন, ‘সংগঠন মানুষের নেতিবাচকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে সহযোগিতা করে। হতাশা ও দুঃখবোধ থেকে বেড়িয়ে আসতেও সাহায্য করে। চলার পথে একে অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরী করে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার পরিবেশও তৈরি করে সংগঠন।

তবে আমাদের দেশে সাধারণত একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়ে ‘সেচ্ছাসেবী সংগঠন’ বিষয়টার সঙ্গে পরিচিত হয়। বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে এই সংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও একজন শিক্ষার্থীর এসবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মেলে অনার্স, ডিগ্রি কিংবা সমমান ডিগ্রি অর্জনের সময়। সত্যি বলতে এই সাংগঠনিক কাজগুলো আরো পূর্বে অন্তত কলেজ পর্যায় থেকে হওয়া জরুরি। কারণ সেটা আমাদের সামাজিক প্রগতির পাশাপাশি তরুণ সমাজে সম্প্রীতির নিশ্চয়তা দানে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

স্বেচ্ছাসেবার ধারণা শিশু-কিশোরদের মনে বিদ্যালয় থেকেই বপন করে দেয়া উচিত। বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে উৎসাহিত করলে প্রথম থেকেই সবার মধ্যে সঠিক মনুষত্ব্যের বিকাশ ঘটবে। পরবর্তীকালে তাদের দ্বারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক কল্যাণ সাধিত হবে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বাইরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ধরনের সামাজিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। 'মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য' এই বোধটুকু ছাত্রজীবনে তৈরি করার জন্য সেচ্ছাসেবী সংগঠনই সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম।

সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সংগঠনের মৌল বিষয়গুলোকে ভিত্তি করেই পরিচালিত হয়। তাতে গঠনতন্ত্র, পরিচালনা পর্ষদ এবং নিয়ম-নীতিসহ কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় থাকে। প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে মানুষ যখন বিধ্বস্ত তখন তাদেরকে সেবার কোমল হাত প্রসারিত করে দেয় সেচ্ছাসেবীরা। বন্যার্ত, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত, দুর্ভিক্ষপীড়িত, শীতার্তদের সেবায় তারা গড়ে তুলে সাহায্য তহবিল। আর সে ভাণ্ডার পূর্ণ করার জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে পারে শিক্ষার্থীরা। রক্তদানের মধ্য দিয়ে তারা মৃতপ্রায় রোগীকে দেয় বাঁচার অনুপ্রেরণা। বৃক্ষরোপণে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্য। গ্রামের অবাঞ্ছিত জঙ্গল পরিষ্কার করেও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলে সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। এগুলো একজন শিক্ষার্থীকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বাস্তব জ্ঞান যেমন দিতে পারে আবার টিমওয়ার্ক বিষয়টির সঙ্গেও তাকে পরিচিত করায়। এই টিমওয়ার্ক ধারণা আবার সমাজে সম্প্রীতির নিশ্চয়তা আনতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া উৎপাদনশীলতা বাড়ানো কিংবা দক্ষ ব্যবস্থাপনা তৈরি করার জন্য টিমওয়ার্ক শিক্ষা প্রয়োজনীয়।

সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার চিরচেনা গণ্ডির বাইরে গিয়ে আরো অনেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এতে করে তার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন একজন শিক্ষার্থীকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এমন একটি জগতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয় যেখান থেকে সমাজকে পাঠ করার প্রত্যক্ষ ও যুগোপযোগী পথটা সে পেয়ে যায়। টিমওয়ার্কে কাজ করতে গিয়ে তার মধ্যে সহিষ্ণুতার গুণও তৈরি হয়। এতে শিক্ষাজীবনেই সে সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ার উপায় শিখে যায়। সেচ্ছাসেবী সংগঠন একটি প্লাটফর্ম হিসেবে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক ভাব ও মত-বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করে।

নির্দ্বিধায় বলা যায় একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা অভিনব এবং তাৎপর্যপূর্ণ। পুরাতন আর মিথ্যাকে মুছে ফেলে, প্রাচীন সংস্কার ও গোঁড়ামিকে ঝেড়ে ফেলে একটি শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের হাতেই। তাদের সুন্দর মনন ও সুকুমার বৃত্তি প্রকাশের মাধ্যমে সমাজের পঙ্কিলতা দূর করতে পারে। বিশ্ব মানবতা এবং মানবিকতার বিজয় পতাকা তাদেরই হাতে। সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে চিরবঞ্চিত, বুভুক্ষ, অনাহরক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা শোনাতে পারে সান্ত্বনার বাণী। আশাহত বুকে জাগাতে পারে আশা। হৃদয়ে জাগাতে পারে প্রাণের স্পন্দন।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ইবি/মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়