ঢাকা     শনিবার   ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

ববির বুকে ১২তম ব্যাচের প্রথম দিনের অনুভূতি

ফারহানা ইয়াসমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২৩:২১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ববির বুকে ১২তম ব্যাচের প্রথম দিনের অনুভূতি

ফাতেমা তুজ জোহরা মাইসা, আফসানা মিমি, আসাদুজ্জামান নাদিম, মো. আব্দুর রহিম (ঘড়ির কাঁটার দিকে)

গুচ্ছ পরীক্ষার ধাপ অতিক্রম করে চোখে-মুখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে একঝাঁক মেধাবী তরুণ জায়গা করে নিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ২৪টি বিভাগে। নতুন ক্যাম্পাসে তাদের প্রথম দিনের অনুভূতি তুলে ধরেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন

‘ক্যাম্পাস আমার চোখের শান্তি’
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩। নতুন জীবনে পদার্পণের প্রথম দিন। অবশেষে পেয়ে গেলাম একটি ঠিকানা, একটি নতুন পরিবার। প্রথমদিন ক্যাম্পাসে এসেছিলাম মনের মধ্যে অনেক উত্তেজনা, ভয় আর পরিবারকে ছেড়ে আসার বেদনা নিয়ে। কিন্তু শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আর বড় ভাইয়া-আপুদের আন্তরিকতায় সব অনুভূতি আনন্দে পরিণত হয়ে নতুন পথ চলার অনুপ্রেরণা জাগালো। তারা আমাদেরকে গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন। আমাদেরকে আনন্দ দেওয়ার জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। নিজের জেলার বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লাগছিল। অনুষ্ঠান শেষে শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস দেখে চোখে শান্তি লাগছিল। সব মিলিয়ে দিনটি জীবনের পাতায় হয়ে থাকবে অম্লান।
- ফাতেমা তুজ জোহরা মাইসা, বাংলা বিভাগ।

‘নতুন সূচনার এক অনন্য অনুভূতি’
ভর্তি পরীক্ষার লড়াই অতিক্রম করে, হয়েছি একজন গর্বিত পাবলিকিয়ান। এরপর একদিন নোটিশ এলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগসূত্রের। চলে এলাম নতুন গন্তব্যস্থলে। পরিবার থেকে দূরে চলে আসা কষ্টগুলো তখন ক্যাম্পাস বরণ করে নিলো লালগোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে। সেদিন ছিল ৩ সেপ্টেম্বর। ধীর পায়ে প্রবেশ করলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সজ্জিত স্বপ্নের ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই একটু ভয় ও উত্তেজনা কাজ করছিল। কিন্তু শিক্ষকদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যে আমার সকল ভয় মুছে গেলো। পাশাপাশি সাজানো ক্লাস রুম আমার মনে প্রশান্তির ছায়া ফেলে দিলো। তারপর নতুন বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে পরিচিত হলাম। যাদের সঙ্গে চলতে হবে দীর্ঘ ৫ বছর। নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। আমরা সবাই এক সঙ্গে আড্ডা দিলাম আার বৃষ্টি উপভোগ করলাম। জীবনের নতুন অধ্যায় সূচনার এই দিনটি স্মরণীয় থাকবে আজীবন।
- আফসানা মিমি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

‘আমার স্বপ্ন পূর্ণতা পেল’ 
পৃথিবী সৃষ্টির লগ্ন থেকেই চলছে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কেউ পাচ্ছে জয় আবার কেউ হেরে যাচ্ছে। হেরে গিয়েও অনেকেই শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারাও জিতে যাচ্ছে কোথাও না কোথাও। এই যুদ্ধগুলোর একেক সময় একেক নাম দেয়া হয়। ঠিক তেমনি এক যুদ্ধের নাম ‘ভর্তিযুদ্ধ’। তথাকথিত মানুষের মতে, এই যুদ্ধে যারা সফলতার ছোঁয়া পায় তারাই হয়ে যায় শ্রেষ্ঠ মানুষ। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করলাম বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৯২ নিয়ে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমি সফলতার ছোঁয়া পাইনি। জিএসটিতে পরীক্ষা দিয়ে এসেই বাসায় বলেছিলাম কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে তাহলেই আমি পাবলিকিয়ান হতে পারবো। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেরিটে সাবজেক্ট পেলাম না, তৃতীয় মাইগ্রেশনে আশার আলো পেলাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান সাবজেক্ট পাবো। চতুর্থ মেরিটে আমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে চান্স পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমি লালচে ইটের মাঝে সাদা কাশফুলে আবৃত বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় বলে পরিচয় দিতে পারছি। আমার এই ছোটো স্বপ্নটাকে পূর্ণতা দিয়েছে কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে ববির সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। ববি পরিবারে একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত অনুভব করছি।
- আসাদুজ্জামান নাদিম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।

‘আনন্দের মাঝেও একাকিত্বের গহীন শূন্যতা’
বাস থেকে নেমেই অটোচালক মামাকে বললাম, মামা ভার্সিটি যাবেন। যেই কথা সেই কাজ...যেতে যেতে চোখে পড়ে বিশাল কীর্তনখোলা নদী। সেই নদীর উপর দিয়ে বয়ে গেছে ১.৬ কিমি দৈর্ঘ্যের সেতু। সেতু পার হতে না হতেই চোখে পড়ে ৫০ একর বিশিষ্ট আমার স্বপ্নের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। কাশফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস। তারমধ্যে বেলুন এবং আলপনায় সজ্জিত ছিল আমাদের ইংরেজি বিভাগের ক্লাস রুমগুলো। ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে শিক্ষক এবং বড় ভাইয়েরা আমাদের সাদরে গ্রহণ করে নিলেন। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, সঙ্গে ছিল নতুন একটা মুহূর্ত। যা ছিল আমার জীবনের অত্যন্ত আনন্দের সময়। কিন্তু সব পূর্ণতার মাঝেও আমি অনুভব করছিলাম আমার বন্ধু মিরাজের অভাব। দীর্ঘ ৯টা বছর এক সঙ্গে পার করার পরও ইচ্ছা ছিল দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব, কিন্তু সেটা আর হলো না। সে আজ ইবির শিক্ষার্থী, আর আমি ববির। এটাই ছিল আমার আনন্দের মাঝেও একাকিত্বের গহীন শূন্যতা।
- মো. আব্দুর রহিম, ইংরেজি বিভাগ।

/ফিরোজ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়