ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১২ ১৪৩১

রাবিতে আগাছা পোড়াতে গিয়ে ৩ শতাধিক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ১১ জানুয়ারি ২০২৪  
রাবিতে আগাছা পোড়াতে গিয়ে ৩ শতাধিক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কৃষি প্রকল্পের জমিতে থাকা আগাছা পোড়াতে গিয়ে মেহগনি ও শিশু প্রজাতির প্রায় তিন শতাধিক গাছের পাতা পুড়ে মারা গেছে। এসব গাছের পাতা ধীরে ধীরে ঝড়ে পড়তে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বপাড়া আবাসিক এলাকার পিছনে থাকা কৃষি প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপকরা বলছেন, আগুনের কারণে গাছের পাতা পুড়ে গেলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং অনেক সময় গাছ মারাও যায়। তবে কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইমরান আলীর দাবি, গাছে ঔষধ দেওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। এতে গাছের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এই কৃষি প্রকল্পে প্রায় তিন শতাধিক গাছ আছে। এর মধ্যে ২৮০টিরও বেশি মেহগনি গাছ। বাকিগুলো শিশু গাছ ও হাতে গোনা কয়েকটি অন্য প্রজাতির গাছ রয়েছে। আগাছা নিধনের আগুনে প্রায় শতাধিক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে মেহগনি গাছই বেশি। তিন-চার বছর আগে গাছগুলো লাগানো হলেও অনেক গাছের পরিপূর্ণ বৃদ্ধি হয়নি। এতে ছোট আকৃতির মেহগনি গাছগুলোর সব পাতা পুড়ে গেছে। ধীরে ধীরে এগুলো ঝড়ে পড়তে দেখা গেছে। তবে পুড়তে বাদ যায়নি বড় আকৃতির শিশু গাছের পাতাও। কয়েকটি শিশু গাছের পাতা পুড়ে ঝরে গেছে। বেশকিছু গাছের গোড়ায় আগুনের তাপের ছাপও স্পষ্ট।

কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী রমজান আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন-চার বছর আগে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে তিন শতাধিক মেহগনি ও শিশু গাছ লাগানো হয়েছিলো। গাছগুলোর ফাঁকা জায়গায় প্রতি বছর আখ চাষ করা হয়। এ বছর আখ চাষের ফলন ওঠার পরে জমিতে থাকা আগাছা পরিষ্কার করতে প্রায় ১৫ দিন আগে আগুন দেওয়া হয়েছিলো।

তিনি কথায় কথায় বলেন, কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ইমরান স্যারের নির্দেশে আগাছা দমনে জমিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক গাছের পাতা পুড়ে গেলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না। এসব পাতাগুলো ধীরে ধীরে ঝড়ে পড়ে কিছুদিন পরেই নতুন পাতা গজাবে। এতে গাছ মরবে না।

তবে গাছে ঔষধ দেওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে দাবি করে কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইমরান আলী বলেন, গাছ মারা যায়নি। গাছে ঔষুধ দেওয়া হয়েছে। পরে গাছ ঠিক হয়ে যাবে।

আগুনে গাছের পাতা পুড়ে মারা গেলে গাছের কি ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা জানতে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক আহম্মেদ ইমতিয়াজের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, মেহগনি ও শিশু বিদেশি প্রজাতির গাছ। এদের পত্রঝরা উদ্ভিদ বলা হয়। সাধারণত প্রতি বছর শীতকালে এদের পাতা ঝড়ে যায়। তবে এখনো পাতা ঝড়ার পুরোপুরি সময় হয়নি। আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে গাছগুলোর পাতা মরে গেছে। এতে গাছের ওপরের ডাল ও ছোট আকৃতির গাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আগাছা নিধনে সঠিক উপায় অবলম্বন করা হয়নি এবং সরকারি জায়গায় বিদেশি গাছ লাগানো উচিত নয় উল্লেখ করে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন সরকারি জায়গায় বিদেশি গাছ লাগানো উচিত হয়নি। দেশীয় গাছ রক্ষা করার একমাত্র জায়গা সরকারি জায়গা। আর আগাছা নিধনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ উপায় হচ্ছে আগুনে পোড়ানো ও আগাছানাশক ছিটানো। এতে আগাছায় থাকা পোকামাকড় ও কীটপ্রতঙ্গ মারা যায়। প্রকৃতি নিঃশেষ হওয়ার মাধ্যম এটি। বিকল্প হিসেবে আগাছা কেটে পরিষ্কার করা উত্তম।

/শাকিবুল/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়