ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আইসিসির আসরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারতের যত মুখোমুখি লড়াই

নুহিয়াতুল ইসলাম লাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ১৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইসিসির আসরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারতের যত মুখোমুখি লড়াই

নুহিয়াতুল ইসলাম লাবিব : ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ-ভারতের বড় কোনো টুর্নামেন্টে আর দেখা হয়নি। সেসময় শক্তিমত্তার দিক থেকে ভারত বেশ এগিয়ে ছিল। তাই ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের আগে সবাই ধরেই নিয়েছিল সহজেই ভারতের থলিতে কিছু পয়েন্ট জমে যাবে। কিন্তু ১৭ মার্চ ২০০৭ এ পোর্ট অফ স্পেনে উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতকে বাংলাদেশ পরাজিত করায় যেন সবকিছু পরিবর্তিত হয়ে যায়। উদ্বোধনী ম্যাচে তামিমের দারুণ অর্ধশতকে ভারতের রাহুল দ্রাবিড় যেন সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের এ লজ্জ্বাজনক হার মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছিল ভারতীয় খেলোয়াড় এবং তাদের সমর্থকদের। এমনকি তাদের কোচ গ্রেগ চ্যাপেলকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

এরপর বাংলাদেশের কাছে আর পরাজয় বরণ করতে হয়নি ভারতকে। তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম বেশ আশাজাগানিয়া। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছোনোর পাশাপাশি একদিনের ক্রিকেটে তারা পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। পাশাপাশি সর্বশেষ সিরিজে শ্রীলংকার সাথে ১-১ এ ড্র করার গৌরব অর্জন করেছে। গত সপ্তাহে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে পাঁচ উইকেটে পরাজিত করেছে। এবার ভারতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে টাইগাররা। আগামীকাল বিকেলে ফাইনালে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত।

তার আগে চলুন দেখে নেওয়া যাক আইসিসি আসরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল :

২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ : টুর্নামেন্টের প্রথম সপ্তাহে ভারতকে পরাজিত করার পেছনে তামিমের মূল ভূমিকা থাকায় সবার দৃষ্টি পড়ে তামিমের উপর। তামিম ইকবাল ঠিক তখন থেকেই সবার কাছে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বাংলাদেশের বোলার মাশরাফি বিন মর্তুজা সে ম্যাচে ভারতকে ১৯১ রানে আটকে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং একই সাথে তামিমের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ভারতের ম্যাচ জয়ের আশা যেন ফিকে হয়ে গিয়েছিল। জহির খানের করা একটি বল তামিমের ঘাড়ে আঘাত হানলে তামিম কোনো প্রতিক্রীয়া দেখাননি। তবে উত্তর দিয়েছিলেন ব্যাটে। একই ওভারের পঞ্চম বলে মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সে উত্তর দিয়েছিলেন। তামিমের এই শটই যেন বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে এই জয়ের পর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভুলে রাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা উল্লাসে মেতে উঠেছিল।

২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : ইংল্যান্ডের অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সংস্করণে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত প্র্রথম ম্যাচে পায় বাংলাদেশকে। ট্রেন্ট ব্রিজে বাংলাদেশকে ২৫ রানে পরাজিত করে শুভসূচনা করে ধোনির দল ভারত। সে ম্যাচে গৌতম গম্ভীর ৪৬ বলে ৫০ রানই ছিল দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান এবং এর মাঝে ভারতের শুরুটাও বেশ আক্রমণাত্মক হয়। পাশাপাশি যুবরাজ সিং ১৮ বল খেলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৪১ রানের ইনিংসটি ভারতকে পাঁচ উইকেটের বিনিময়ে ১৮০ রানের বড় সংগ্রহ এনে দিতে সক্ষম হয়। বেঙ্গালুরুর স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝা ২১ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট লাভ করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। তাতে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি।

২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ : এই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মিরপুরে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বীরেন্দর শেবাগের অনবদ্য ১৭৫ ও বিরাট কোহলির অপরাজিত ১০০ রানে ভর করে ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৭০ রান সংগ্রহ করে। পাহাড়সম এই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৯ ‍উইকেট হারিয়ে ২৮৩ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে ভারত ৮৭ রানের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে। সেবার অবশ্য শিরাপাও জিতেছিল তারা।

২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : এই বিশ্বকাপে ভারত মিরপুরে স্বাগতিক বাংলাদেশকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে ওঠার গৌরব অর্জন করে। ভারতের রবীচন্দ্রন আশ্বিন (৪-০-১৫-২) এবং অমিত মিশ্র (৪-০-৩৬-৩) এর দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশের ইনিংস অল্পতেই গুটিয়ে যায়। তাতে ৭ উইকেটের বিনিময়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩৮ রান! এরপর ভারত ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার ৪৪ বলের ৫৬ এবং কোহলির ৫০ বলে অপরাজিত ৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে ৯ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে জয় পায়।

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ : প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ চমৎকার খেলেছে। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় সেই শক্তিশালী ভারতের। রোহিত শর্মার ১৩৭ ও সুরেশ রায়নার অর্ধশত রানের ইনিংসে ভর করে ভারত মেলবোর্নে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩০২ রানের সংগ্রহ পায়। ৩০৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের পার্টনারশিপ যেন জমছিলই না। ৩৩ রান যেতে না যেতেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। অবশেষে ৪৫ ওভারে মাত্র ১৯৩ রানে শেষ হয় টাইগারদের ইনিংস। ভারত জয় পায় ১০৯ রানের বড় ব্যবধানে।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : সুপার টেনে ভারতের বিপক্ষে দারুণ খেলে বাংলাদেশ। প্রথমে মুস্তাফিজ ও আল-আমিন হোসেনের বোলিং তোপে ১৪৬ রানে ভারতকে আটকে রাখে বাংলাদেশ। এরপর তামিম, সাব্বির, সাকিব, সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। শেষদিকে ৩ বলে জয়ের জন্য ২ রান প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার করা শেষ ওভারে বাংলাদেশ সেটি নিতে পারেনি। ফলে ১ রানে হেরে যায়।

এবার দেখার বিষয় ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে কেমন খেলে বাংলাদেশ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৭/নুহিয়াতুল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়