বিশ্বকাপে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ মিথুনের
ওদের হাতে বিশ্বকাপ মশাল। ওদের কাছে ১৬ কোটির প্রত্যাশা। ওরাই স্বপ্নের ধারক। ওরা বাংলার টাইগার। ওরা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নসারথি। ওদেরই একজন মোহাম্মদ মিথুন।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রতিদিন লেখা প্রকাশ করছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ। আজ পড়ুন মোহাম্মদ মিথুনের গল্প, লিখেছেন আমিনুল ইসলাম।
বাংলাদেশের হয়ে যে সাতজন এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন, তাদের একজন মিথুন। অবশ্য বিকেএসপি থেকে পড়াশুনা করা এই ক্রিকেটারের ২০১৪ সালে অভিষেক হলেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন বহুদিন। অবশেষে গত বছর তার ফর্ম খুঁজে পান। তাতে তিন বছর পর ২০১৮ সালে আবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। প্রমাণ করেন নিজেকে। এবার বিশ্বমঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার পালা তার।
২৮ বছর বয়সি এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান টপ কিংবা মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে পারদর্শী। তাকে ভবিষ্যতে মুশফিকুর রহিমের বিকল্প উইকেটরক্ষক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। যদিও লিটন কুমার দাসও রয়েছেন এই বিবেচনায়।
অবশ্য বিকেএসপি থেকে পাস করার আগে থেকেই মিথুনের প্রতিভা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছিল। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তার শুরুটা হয় উইকেটরক্ষক হিসেবে। যদিও তার ব্যাটিং ছিল শক্তিশালী সাইড। লং হ্যান্ডেলে ব্যাট করতে পছন্দ করেন তিনি। যদিও কখনো কখনো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টপ অর্ডারেও ব্যাটিং করে থাকেন।
২০০৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে খুলনা বিভাগের হয়ে মিথুনের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়। তখন অবশ্য বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেন। যুব বিশ্বকাপে খেলার তিন বছর পর তিনি বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পান। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছিলেন তিনি।
ওই মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার গড় ছিল ৫০.৮১। এরপর ২০১৩-১৪ সালে আরো একটি দারুণ মৌসুম কাটান। সেবার ৯ ম্যাচে ৭০৯ রান করেছিলেন তিনি। তার এই পারফরম্যান্সের পুরস্কার স্বরূপ হঠাৎ টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পান। তখন অবশ্য নিয়মিত উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম আঙুলের চোটে ভুগছিলেন। ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় মিথুনের। একই বছর জুনে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজেও ডাক পান তিনি। ১৭ জুন ভারতের বিপক্ষে তার ওয়ানডে অভিষেক হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকার কারণে ২০১৪ সালে অভিষেক হলেও ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত মাত্র ২টি ওয়ানডে খেলেছিলেন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে ২০১৮ সালে আবার জাতীয় দলে সুযোগ করে নেন। গত বছর তিনি ১১টি ওয়ানডে খেলেন। তার মধ্যে দুটি ছিল অর্ধশত রানের ইনিংস ছিল (৬৩ ও ৬০)।
২০১৯ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে মাশরাফির অনুরোধে তাকে রাখা হয়। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান তিনি দেন। দুই ম্যাচে মাঠে নেমে দুটিতেই করেন ফিফটি (৬২ ও ৫৭)। যেখানে অন্য ব্যাটসম্যানরা ছিলেন ব্যর্থ। সে কারণে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তিনি মাশরাফির বাজির ঘোড়া। বড় মঞ্চে এবার নিজেকে প্রমাণের পালা। পারবেন কি মিথুন?
সংক্ষেপে মিথুনের ক্যারিয়ার :
মিথুন বাংলাদেশের হয়ে ৫টি টেস্ট খেলেছেন। রান করেছেন ১৯১টি। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৬৭। এ পর্যন্ত ১৮টি ওয়ানডে খেলেছেন। রান করেছেন ৪২০। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৬৩। ৪টি হাফ সেঞ্চুরি থাকলেও কোনো সেঞ্চুরি নেই। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মিথুন। রান করেছেন ৯০টি। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৪৭।
তবে ৯৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তিনি রান করেছেন ৪ হাজার ৯৬১। ১২টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ২৫টি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন ১৩৫ ম্যাচ। মোট রান ৩ হাজার ৯৪৪। ১টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩০টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। আর ১১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তার মোট রান ১৭৪১। ৮টি হাফ সেঞ্চুরি থাকলেও কোনো সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৮০।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মে ২০১৯/আমিনুল/পরাগ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন