ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আতিক-তাপসের জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আতিক-তাপসের জয়

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

ভোটের বেসরকারি ফলাফলে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা ভোটের প্রাথমিক বেসরকারি ফল ঘোষণা করেন।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টার পর বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, নৌকা প্রতীকে শেখ ফজলে নূর তাপস পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।

এদিকে শনিবার রাত আড়াইটার পর ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম ফল ঘোষণা করে বলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে মো. আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা সিটি উত্তরে মেয়র পদে হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের শেখ ফজলে বারী মাসউদ পেয়েছেন ২৮ হাজার ২০০ ভোট, কাস্তে প্রতীকে কমিউনিস্ট প্রার্থী আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল পেয়েছেন ১৫ হাজার ১২২ ভোট, আম প্রতীকে আনিসুর রহমান দেওয়ান পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৫৩ ভোট এবং বাঘ প্রতীকে শাহীন খান পেয়েছেন ২ হাজার ১১১ ভোট। ঢাকা সিটি দক্ষিণে মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুর রহমান হাত পাখা প্রতীকে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫২৫ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৩ ভোট। গণফ্রন্টের প্রার্থী আবদুস সামাদ সুজন মাছ প্রতীকে ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়েছেন। বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ ডাব প্রতীকে ২ হাজার ৪২১টি ভোট পেয়েছেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. বাহারানে সুলতান বাহার আম প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ১৫৫ ভোট।

৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ভালো হয়েছে। তবে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

সিইসি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো এজেন্ট অভিযোগ করেনি। আমি যেখানে গিয়েছি, সেখানে সব দলের এজেন্ট ছিল। আমি যেখানে ভোট দিয়েছি সেখানে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেখানে বিএনপির এজেন্ট ছিল, আওয়ামী লীগের এজেন্টও ছিল। এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দায়িত্ব এজেন্টদের। ভোটকেন্দ্রে যদি গিয়ে থাকেন, সেখান থেকে বের করে দিলে অভিযোগ করতে হবে। এরকম অভিযোগ আমি পাইনি, নির্বাচন কমিশনেও কেউ অভিযোগ করেনি।’

‘বিরোধী দলের এজেন্ট পাইনি’
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগেও বলেছি, নির্বাচনের পরিবেশ কেমন আছে সেটা আমার চেয়ে আপনারা ভালো জানেন। আপনারা সাংবাদিক, আমি ক্ষণকালে এসে ভোটটা দিলাম। আমার পরিবার আমার সঙ্গে ভোট দিলেন। সুতরাং এই প্রশ্ন আমাকে করে কোন লাভ হয় না যে, এখানে নির্বাচনী পরিবেশ কেমন আছে।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘একটা বিষয় আমি বলব যে, এই কেন্দ্রে অনেকগুলো বুথ আছে, আমি এখানে বিরোধী দলের মেয়র প্রার্থীর কোন এজেন্ট দেখতে পাইনি। কেন পাইনি এটা আমি বুঝতে পারছি না, এটা আমার দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ। আমার তৃতীয় পর্যবেক্ষণ হলো ভোট সম্পর্কে কিংবা নির্বাচন সম্পর্কে আমি এখন কোন কথা বলব না। বিকেল ৪টার পরে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে আমি আপনাদের সঙ্গে হয়ত আবার কথা বলতে পারি।’

বিএনপির প্রত্যাখ্যান
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। রোববার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা শহরে এ হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগ, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ইভিএম বিভ্রাট, এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়া, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আতিকুলের প্রতিশ্রুতি
এবারের নির্বাচনে ৩৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন আতিকুল ইসলাম। যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো- ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক বাস পরিষেবা চালু করা। এছাড়াও রয়েছে, নগরীর মশার সমস্যা মোকাবিলায় ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) ব্যবস্থা বাস্তবায়ন,  আধুনিক ও স্বাস্থ্যকর ঢাকা গড়তে নগরীকে তিনটি অংশে ভাগ করে কাজ করা, নগরীর খাল পুনরুদ্ধার ও জলাবদ্ধতা কমানো, আমিন বাজারে রিসোর্সেস রিকভারি ফ্যাসিলিটি (আরআরএফ) স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ করা, সংগৃহীত বর্জ্য শক্তিতে রূপান্তর করা এবং নগরীর ব্যস্ততম এলাকাতে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স তৈরি করা।

তাপসের প্রতিশ্রুতি
নির্বাচনি ইশতেহারে পর্যটনের নগরী হিসেবে ভবিষ্যতের ঢাকাকে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এছাড়াও, ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় পুনরায় নকশা করে গাছ লাগানো হবে এবং বেশ কিছু বিনোদন পার্ক ও থিয়েটার গড়ে তোলা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

তার ইশতেহারে রয়েছে, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার আশেপাশের এলাকাগুলোকে নতুন করে সংস্কার করা, ঢাকায় যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি নির্মাণ, মশা নির্মূল করার জন্য নিয়মিত কার্যক্রম ও ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে এমন রাস্তা নির্মাণ এবং নারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক হোস্টেল নির্মাণ ও নাগরিকদের সার্বক্ষণিক কাজে লাগে এমন অ্যাপ চালু করা।


ঢাকা/মিথুন/নাসিম/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়