ব্যবসাবান্ধব বাজেট চায় ডিসিসিআই
এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম
ডিসিসিআইয়ের লোগো
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : সরকারের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকনির্দেশনাসহ বাস্তবায়নযোগ্য বাজট চায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এক প্রাক-বাজেট (অর্থবছর ২০১৫-১৬) আলোচনায় সংগঠনটি বেশকিছু সুপারিশসহ এ প্রস্তাব দেয়।
ডিসিসিআই-র সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্য্ন্ত নয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটের আওতায় এই ক্ষতি যাতে কিছুটা হলেও পূরণ হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। যদিও বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ মজুদ আছে, তারপরও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিনিয়োগ-প্রতিকূল পরিবেশ থাকার কারণে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এ ছাড়া ব্যাংকের অতিরিক্ত সুদের কারণে ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকনির্দেশনাসহ বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।’
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের কর প্রদানে বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেননি। এতে সঠিকভাবে ব্যাংক ঋণও পরিশোধ করতে পারেননি অনেকেই। তাই ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর প্রদানে বিশেষ ছাড় প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফিক্সড ভ্যাট প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ মওকুফের আহবান জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিগত রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বিভিন্ন বন্দরে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত পোর্ট-চার্জ, জরিমানার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ মওকুফেরও আহ্বান জানানো হয়।
করের আওতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ লোককে করের বোঝা বহন করতে হয়। যার একটি অংশ হলো ব্যবসায়ী। তা ছাড়া দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মাত্র ১৮ লাখ লোকের আয়কর সনদ থাকলেও, চলতি করবর্ষে মাত্র ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯১৩টি ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। তাই করের হার বৃদ্ধির চেয়ে করের আওতা বৃদ্ধি করা ছাড়া রাজস্ব বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই।’
করপোরেট কর পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আরো বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে করপোরেট কর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং ব্রোকারেজ অপারেটরদের ক্ষেত্রে এই হার ৩৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’
ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানো কষ্টকর হয়ে গেছে। এ জন্য ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব, একই সঙ্গে মহিলা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এদিকে নীট সম্পদের ওপর সারচার্জ শিথিল করার প্রস্তাব জানিয়ে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে নীট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি টাকার স্থলে ৪ কোটি পর্য্ন্ত সারচার্জশূণ্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এছাড়া শুধু ভিআইপিদের ট্যাক্স কার্ড প্রদান না করে সকল করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড প্রদান, চেম্বার ও ট্রেডবডির ওপর কর প্রত্যাহার, দেশিয় শিল্প সুরক্ষায় চূড়ান্ত পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করে কাঁচামাল আমদানিতে বিশেষ ছাড় ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারসহ বেশকিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।
কালো টাকার উৎস বন্ধে ডিসিসিআই সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও আশ্বস্ত করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের সদস্য, প্রথম সচিব ও ডিসিসিআই নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মে ২০১৫/এম এ রহমান/সুমন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন