ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০১, ৩ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

বিশেষ প্রতিবেদক : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। প্রায় সাড়ে ৪৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংককে ৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা ঋণ আদায় করার টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় এ পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ, স্বল্প মেয়াদী আমানতের হার বৃদ্ধি, লোকসানি শাখা কমিয়ে আনা ও পরিচালনা মুনাফা অর্জনসহ ১৫টি সূচকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চ মাস পর্যন্ত ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে, একই সময়ে এই ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এই হিসেবে ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়েছে।

তিন মাস আগে এই ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকটিকে মোট ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা (শ্রেণিকৃত ঋণ ৯০০ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ২০০ কোটি টাকা) খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে। গত অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২০ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকটিকে মোট ৫৮০ কোটি টাকা (শ্রেণিকৃত ঋণ ৪৫০ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ১৩০ কোটি টাকা) খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে। গত অর্থবছরে জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২৫ টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকটিকে মোট ৬৫০ কোটি টাকা (শ্রেণিকৃত ঋণ ৫০০ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ১৫০ কোটি টাকা) খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে। গত অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকটিকে মোট ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা (শ্রেণিকৃত ঋণ ১০০০ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ৩৫ কোটি টাকা) খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে।

বেসিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে মোট ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকটিকে মোট ১৫০ কোটি (শ্রেণিকৃত ঋণ ১৪০ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ১০ কোটি টাকা) আদায় করতে হবে। গত অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫০ কোটি টাকা।

বিডিবিএলের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকটিকে মোট ১২০ কোটি টাকা (শ্রেণিকৃত ঋণ ৯০ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ৩০ কোটি টাকা) খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে।

সূত্র জানায়, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বেসিক ব্যাংক ছাড়া অবশিষ্ট পাঁচটি ব্যাংককে দেওয়া ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের জন্য প্রভিশন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমানো হয়েছে। গত অর্থবছরে প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য এই হার কমিয়ে ৪২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সোনালী ব্যাংককে ১০ শতাংশ, জনতা ব্যাংককে সাড়ে ১০ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংককে ১০ শতাংশ, রূপালী ব্যাংককে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, বেসিক ব্যাংককে ১২ শতাংশ ও বিডিবিএলকে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর সরকারি এই ছয় ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি করে বিভিন্ন টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও তাই করা হয়েছে। টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হলে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়