ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

২০১৪ সালের পর ১১৭২ প্রকল্প অনুমোদন

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২০১৪ সালের পর ১১৭২ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করা। ২০১৪ সালে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়ত্বি গ্রহণ করার পর এ পর্যন্ত ১৪০টি একনকে সভায় মোট ১ হাজার ১৭২টি প্রকল্প অনুমোদতি হয়েছে।

প্রকল্পগুলোর মোট প্রাক্কলতি ব্যয় ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি অর্থাৎ সরকারি অর্থায়নে ৮ লাখ ৮ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৫ লাখ ২০ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এছাড়া, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আরএডিপি এবং ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

২০০৮-০৯ থেকে ২০১৭-১৮, এ ১০ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকার। মোট ২ হাজার ১৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে এ অর্থ অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে গত তিন অর্থবছরেই অনুমোদন হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ২২ হাজার ৯০৬ কোটি টাকার প্রকল্প। গত ১০ বছরে অনুমোদিত ব্যয়ের যা প্রায় ৫৭ শতাংশ।

দেশে বড় বাজেটের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে থাকে একনেক। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় অর্থবছরটির প্রথম একনেক সভা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ একনেক সভা হয় গত অর্থবছরের ২৬ জুন। এসব সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন করা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মেয়াদে ১ হাজার ১৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে অনুমোদন হয়েছে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫ লাখ ১৩ হাজার কোটি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যদিও ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মোট ৪৩ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ১০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বড় ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুরুতে কিছুটা সক্ষমতার অভাব থাকলেও এখন যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে শতভাগ সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি টেকসই গতিশীলতার মধ্যে এসেছে। সেই গতিশীলতা ধরে রাখতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে সবসময়ই পিছিয়ে পড়া এলাকা, প্রান্তিক মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি সব জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নই প্রকল্প গ্রহণের অন্যতম লক্ষ্য।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের চোখে যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে অর্জিত অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে এমডিজি-পরবর্তী জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার নীতি-কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে সেভাবেই।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৮-০৯ অর্থবছরের (১৩.০১.২০০৯ শুরু) ৬৯ প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন করে ১৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২২৫টি প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন হয় ৮০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছরেই প্রথমবারের মতো প্রকল্প ব্যয় অনুমোদন ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৫০ প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন হয় ১ লাখ ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। সদ্যসমাপ্ত (২০১৭-১৮) অর্থবছরে ৩১৮ প্রকল্পের বিপরীতে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করেছে একনেক।

সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৬৮ প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছর ১৫১টি প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন করা হয় ১ লাখ ৬ হাজার ৪০৬ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ২১২টি প্রকল্পে ১ লাখ ২১ হাজার ৯৬২ কোটি ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২১২টি প্রকল্পে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছর প্রথমবারের মতো প্রকল্প ব্যয় ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২৭৮টি প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় অনুমোদন করা হয় ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ কোটি। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছর ২৫২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি।

সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যাতে নির্বিঘ্নে হয় সেজন্য যুক্ত করা হয়েছে ফার্স্ট ট্র্যাকে। প্রতি মাসে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি খতিয়ে দেখছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এতে পদ্মা সেতুসহ বেশিরভাগ প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে। ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ, এলএনজি টার্নিমাল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হাসিবুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়