ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাণিজ্য মেলার সময় না বাড়ানোর দাবি

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাণিজ্য মেলার সময় না বাড়ানোর দাবি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : চলমান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সময় এক মাসের বেশি না বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে।

সময় বাড়ালে ১২ ফেব্রুয়ারি দোকান বন্ধ রেখে মেলা অভিমুখে রওনা হওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। এ ছাড়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাসহ যেকোনো মেলা ৫ থেকে ৭ দিনের বেশি স্থায়ী না করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বুধবার রাজধানীর মগবাজারের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি জানান বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

লিখিত বক্তব্যে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রপ্তনী উন্নয়ন ব্যুরো অধিক লাভ ও লোভের বশবর্তী হয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বণিজ্য মেলা নামে বারোয়ারী মেলার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যেখানে বিদেশি ক্রেতা ও উৎপাদনকারীরা ক্রমশ এই মেলার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। বিদেশিদের অংশগ্রহণ প্রায় শূণ্যের কোঠায় দাঁড়ায়। এই মেলাটি এখন বাংলাদেশি কতিপয় উৎপাদনকারী পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে তাদের উৎপাদিত ও আমদানীকৃত পণ্যের প্রদর্শনী। যেখানে নাই কোনো পণ্যের গুণগত উৎকর্ষতা। খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বেশির ভাগ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী তাদের গুদামে পড়ে থাকা দীর্ঘদিনের পুরোনো পণ্যগুলো বিশেষ ছাড় ও লোভনীয় মূল্য হ্রাস ঘোষণার মধ্য দিয়ে মেলায় আগত ক্রেতাদের কাছে  বিক্রি করে। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্রেতাই এসকল পণ্য কিনে প্রতারিত হয়ে থাকে। যা কোনভাবেই আমরা সচেতন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি মেনে নিতে পারি না। ’

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো এই ধরনের মেলার আয়োজন করে এ দেশের ভোক্তা সাধারণকে প্রতারিত করার সুযোগ দিতে পারে না। এটা তাদের কাজ নয়। তাদের কাজ হচ্ছে এ দেশের উৎপাদিত উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যসমূহ বিদেশের বাজারে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। এক মাস বা ৪০ দিনের জন্য মেলার নামে বাজার বসিয়ে এ দেশের দোকান ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সাধারণের ক্ষতি সাধন করা নয়। ’ 

আমরা যতদূর জেনেছি রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন বিক্রি করে ভালো ব্যবসা করে। এ সমস্ত স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রচুর অবৈধ অর্থনৈতিক লেনদেন হয়। নীতিগতভাবে তা কোনক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়।

আমাদের দেশের ভোক্তা সাধারণের মেলার প্রতি দুর্বলতা থাকে। তারা মনে করে মেলা মানেই সস্তায় পণ্য ক্রয় করা। এ জন্য মেলা শুরু হওয়ার পূর্ব থেকেই মেলায় কেনাকাটার জন্য এক ধরনের মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি নিতে থাকে। সে সময় থেকে দেশের সকল খুচরা মার্কেট ও দোকানসমূহে জনসাধারণের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পায়। ফলে খুচরা দোকানমালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মারাত্মক হতাশা নেমে আসে। যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। যারা নিয়মিত ব্যবসায়ী তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। শীতকালকে আমাদের দেশে একটি ভালো ব্যবসায়ী মৌসুম হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এ অবস্থায় পুরো ১ মাস ইপিবি কর্তৃক ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শেরে-ই-বাংলা নগরে এ ধরনের বিক্রয় অথবা বারোয়ারি মেলা অনুষ্ঠানের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ঢাকা শহরে প্রায় ৫ লক্ষ দোকান কার্যত ঐ এক মাস ক্রেতা সাধারণ শূন্য হয়ে পড়ে। যাতে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

এছাড়া কিছু কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল নেন বিক্রয় ও প্রচারের উদ্দেশ্য। সে সঙ্গে তারা ২০-৫০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেন। এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, যখন কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ২০-৫০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে পণ্য বিক্রি করবেন তখন তাদের সারা দেশে নিয়োজিত ডিলারগণ সমপরিমান ছাড়ের সুযোগ ভোগ করবেন। কারণ, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যখন মূল্য হ্রাস করে পণ্য বিক্রি করে তখন আর কোনো ডিলারের পক্ষে সে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি একমাসের পরিবর্তে এই মেলার সময় আরো ১০ থেকে ১৫ দিন বৃদ্ধি করার পাঁয়তারা চলছে। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, কোনোক্রমে এই মেলা এক মসের অতিরিক্ত সময় বাড়ানো যাবে না। এরপরও যদি সময় বৃদ্ধি করা হয় তবে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার ঢাকা নগরীর সকল দোকান বন্ধ করে আমরা মেলা অভিমুখে রওনা হব।’

এসময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে অন্যান্য যে দাবি তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো, মেলায় প্রদর্শনকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে মানসম্মত পণ্য বিক্রয়ে বাধ্য করা, ঢাকা নগরীতে এখন প্রধান প্রধান সড়কের উপর দিয়ে মেট্রো রেলের কাজ চলছে, ঢাকা নগরী একটি মারাত্মক যানজটের নগরী সুতরাং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা কোনোক্রমেই ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শেরে-ই-বাংলা নগরে আয়োজন না করা এবং ঢাকা নগরীর অভ্যন্তরে অপরিকল্পিতভাবে অস্থায়ী স্থাপনার ভিত্তিতেও কোনো মেলার অনুষ্ঠান না করা, বাংলাদেশ থেকে ৭৫১টি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয় এটাকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা না করে উন্নয়নশীল দেশের আদলে বর্হিবিশ্বকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশী রপ্তানি মেলার আয়োজন করা, ইতিমধ্যে সরকার পূর্বাচলে স্থায়ীভাবে মেলাকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। ২০১৯ সালের মধ্যে কাজটি সম্পাদন করে ২০২০ সালে সকল প্রকার মেলা ঐ স্থানে স্থানান্তর করা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/নাসির/ইভা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়