ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের বড় চ্যালেঞ্জ: রাহেল আহমেদ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১৭ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের বড় চ্যালেঞ্জ: রাহেল আহমেদ

বিশেষ প্রতিবেদক : খেলাপি ঋণ দেশের সমগ্র ব্যাংকিং খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদ।

তিনি মনে করেন, খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো গতিশীল হবে। এ জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাজধানীতে ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে তিনি একথা উল্লেখ করেন।

ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম রব্বানী, মো. তৌহিদুল আলম খান ও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ব্যাংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও পিআরডি এম. মনিরুজ্জামান টিপু।

১৯৯৫ সালে ১৭ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড যাত্রা শুরু করেছে ‘একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক’ এই শ্লোগান নিয়ে। শুধু শ্লোগান নয়, যাত্রার শুরু থেকেই প্রাইম ব্যাংক তার সৃজনশীল কর্মকা- দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল যে, সত্যিই প্রাইম ব্যাংক একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক এবং এই ধারা আজও অব্যাহত আছে।

প্রাইম ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ২৪ বছরে যেটা অর্জন করেছে, তা হচ্ছে গ্রাহক, শেয়ার হোল্ডার, শুভানুধ্যায়ীদের আস্থা। প্রাইম ব্যাংক আগামী ২০২১ সালকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। লক্ষ্যপূরণে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘ওয়ান ব্যাংক, ওয়ান টিম।’

ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদ তার সূচনা বক্তব্যে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বিশেষ করে ব্যবসায়িক কর্মকা-ের পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাংকটি সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা তুলে ধরেন। এদিকে যেমন বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের কথা বলেছেন পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও বলেছেন।

প্রাইম ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের শেষে তাদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা, বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা এবং তাদের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২৯ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের ১৪৯টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

খেলাপি ঋণ দেশের উন্নয়নের পথে বড় একটি বাধার কথা উল্লেখ করে রাহেল আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল একাধিকবার খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার উপায় বের করে আর্থিক খাতকে আরো সুসংহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রাইম ব্যাংক ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ অনেক কমিয়ে এনেছে। বাকি যেটুকু আছে সেটুকুও দ্রুত তুলে এনে তা দেশের আর্থিক খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেবে। ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে আইন আছে তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পরিধি আরো বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে বিদ্যমান আইন যাতে কড়াকড়িভাবে প্রতিপালন করা হয় সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘আগামী এক বছর, দেড় বছরে খেলাপি ঋণ কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই দেখার বিষয়। খেলাপি ঋণের বিষয়টা প্রাইম ব্যাংক যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। দুই শতাংশ পরিশোধ করে খেলাপি ঋণগুলো নিয়মিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার মতে, ঋণখেলাপিরা সাত শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করবে। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঋণখেলাপিরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করবে।’

৯ শতাংশ হারে সুদ আর মোট ঋণের দুই শতাংশ পরিশোধ করে নিয়মিত করা খেলাপিদের ফেস করার উদ্যোগ আপনাদের জন্য কতটা সহনীয় বলে মনে করেন- জানতে চাইলে রাহেল আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওই সার্কুলার আমরা পাইনি। যেহেতু এখন পর্যন্ত সেই পলিসি আমাদের হাতে আসেনি লিখিতভাবে, আমার মনে হয় না- এ ব্যাপার আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে। উনি একটা পরিকল্পনার কথা বলেছেন। আমি নিশ্চিত এ বিষয়ে বিশদভাবে আমাদের সঙ্গে আলাপ হবে। আমরা এ বিষয়ে গাইডেন্স পাব। আমার বিশ্বাস, সেই গাইডেন্সটা আমাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে সর্বজনবিদিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ডিপোজিট ৬০ শতাংশ এবং ইন্টারেস্ট ৯ শতাংশ ঘোষণা করেছিলেন। এজন্য সরকারি তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করারও অনুমতি দিয়েছেন তিনি। সে তহবিলগুলো আপনারা পাচ্ছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে প্রাইম ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘আমরা জানি না। তবে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, এই তহবিলগুলো বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হচ্ছে।’

প্রাইম ব্যাংক ৬ ও ৯ ডিজিটের মধ্যে থাকতে পারবে কিনা, জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আপনি ৯ ও ৬ শতাংশের কথা বলেছেন। মার্কেট নিজেই রিট্রেক্ট করে, মার্কেট নিজেই এটাকে ঠিক করে দেয়। ৯, ৮, ৭, বা ৬- এ রকম কোনো পয়েন্ট ধরে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। আমরা সবাই চেষ্টা করছি, যতখানি সম্ভব একটা গ্রাহকবান্ধব ব্যাংকিং ব্যবস্থা উপহার দেওয়ার জন্য। আমাদের যে গ্রাহকরা আছেন, তাদের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সেটা আমরা সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করব ৯ কেন, আরও কমে যদি দেওয়া যায়, সেটা দেওয়ার চেষ্টা করব। সেক্ষেত্রে ডিপোজিটের রেটটা মার্কেটে যদি কমে আসে, তাহলে অবশ্যই আমরা গ্রাহকদের সরবরাহ করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এক দিনে বা এক রাতে কোনো কিছু হয় না। আমি নিশ্চিত, সবাই এটা বোঝেন। আমরা যারা স্টেকহোল্ডার আছি, সবাই মিলে কাজ করলে এটা না পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। লভ্যাংশের প্রবৃদ্ধি যাতে স্থিতিশীল থাকে, মানসম্পন্ন লাভ যেন ওখানে আসে, সেটার দিকে প্রাইম ব্যাংক নজর দিচ্ছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ এপ্রিল ২০১৯/কেএমএ হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়