ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারকে অশান্ত করে তুলছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারকে অশান্ত করে তুলছে

বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন বাজারকে অশান্ত করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

তিনি বলেন, দেশে অচল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা অর্জন করছে। বড় বড় দেশে এ প্রবণতাগুলো নেই। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলো বিদ্যমান। এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীরা এটা করে। অধিক মুনাফা করার জন্য তারা জনগণকে জিম্মি করে ব্যবসা করতে চায়।

সোমবার রাজধানীতে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ অবহিতকরণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ব্যবসা আপনার করবেন, এর লাভও আপনারা নেবেন। আপনারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যান। সরকার সব ধরনের সুবিধা দেবে। তবে মানুষকে জিম্মি করবেন না। এটা হতে দেয়া যাবে না।

দেশে একটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও কমপ্লায়েন্ট চামড়া শিল্পখাত গড়ে তোলাই আমাদের সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সব ধরণের নীতি সহয়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থও ইতোমধ্যে উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়েছে। এরপরও কতিপয় অসাধু ট্যানারি মালিক কমপ্লায়েন্ট কারখানা স্থাপনে গড়িমসি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন,  চুক্তি অনুযায়ী কারখানা নির্মাণসহ উৎপাদন কার্যক্রম শুরুতে ব্যর্থ হওয়ায় সাভার চামড়া শিল্প নগরীর ১১টি প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। চামড়া শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে শিল্প মন্ত্রণালয় চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করেছে। এর আলোকে চামড়া শিল্পের পরিবেশগত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

চামড়া শিল্পের কাঁচামালে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের অনুকূলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের ছাড়পত্র বা সার্টিফিকেশন না থাকায় আমাদের রপ্তানি আশানুরূপহারে বাড়ছে না। এ বাস্তবতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সকল ট্যানারি কারখানা সাভারে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরিতে স্থানান্তর করেছে।

সাভার চামড়া শিল্পনগরী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড গঠন করা হয়েছে। যেহেতু এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন অর্জন চামড়াখাতে রপ্তানি বৃদ্ধির একটি অন্যতম পূর্বশর্ত, সেহেতু আমাদের সরকার চামড়া শিল্পখাতে কোনো ধরণের অনিয়ম বা বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেবে না।

ইতোমধ্যে এলডব্লিউজি সনদ অর্জনের লক্ষ্যে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে মক অডিট পরিচালনা করা হয়েছে। মক অডিটের ভিত্তিতে যেসব জায়গায় এখনো উন্নতি করা দরকার, সেসব জায়গায় উন্নয়নের কাজ চলছে।

চামড়া শিল্পে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেশন অর্জনের বিষয়টি বর্তমানে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য আসছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয় এবং এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য কার কী দায়িত্ব, তা আজকের কর্মশালায় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সেটি হলো, এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য যেসব ইস্যুতে উন্নতি করা প্রয়োজন, এর একটি সামান্য অংশ সিইটিপি ও চামড়া শিল্পনগরি প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট। বাকি বেশিরভাগ বিষয়ই ট্যানারি কারখানার সাথে সম্পর্কিত, যেগুলো উন্নয়নের দায়িত্ব উদ্যোক্তাদের ওপর বর্তায়। অথচ এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় বরাবরই এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন অর্জনে বিলম্বের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে দোষারোপ করা হয়ে থাকে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়। সরকারের কাজ হচ্ছে, ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।

ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে এবং এর লাভ অথবা ক্ষতি দু’টিই ব্যবসায়ীদের বিষয় জানিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশনের জন্য সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে প্রজেক্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী যথাযথভাবে চামড়া শিল্প নগরী প্রকল্প সমাপ্ত করা। আর এ কাজটি সম্পন্ন করতে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এটি সম্পন্ন করবো। এরপর বাকি সকল কাজ ট্যানারি মালিক ও চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের। তাদের বিষয়ে আমরা কোনো দায়-দায়িত্ব নেব না। তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা যেভাবে নিজেদের স্বার্থে কারখানার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, ক্রেতাদের কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করেছেন, ঠিক একইভাবে ট্যানারি মালিকাদেরও নিজ উদ্যোগে কারখানার উন্নতি ঘটাতে হবে এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। 

এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত সৃষ্টিতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়ন এবং এর রপ্তানি প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কী ধরণের দায়িত্ব রয়েছে, তা গণমাধ্যমকর্মীরা তুলে ধরতে পারেন। শুধুমাত্র সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে অমিত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পখাতকে পিছিয়ে দিলে চলবে না। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনো দুর্বলতা থাকলে তাও আপনারা তুলে ধরতে পারেন। তাহলে আমরা সরকারের নীতি ও কর্মসূচি সংশোধন করার সুযোগ পাব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ইআরএফ সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল, বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দরা।


ঢাকা/নাসির/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়