ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বেসিক ব্যাংকে বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেসিক ব্যাংকে বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

গত ১১ ডিসেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৪৮৭তম বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তটি গত ২২ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আলম বৃহস্পতিবার এক চিঠির মাধ্যমে পর্ষদের সিদ্ধান্তটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে অবহিত করেছেন।

এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের মতো বেসিক ব্যাংকের বেতনকাঠামো নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে বেতনকাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে ব্যাংকটিতে কর্মরতদের বেতন অনেকটাই কমবে।

সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বেসিক ব্যাংকে বিগত সাত বছর ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় বিদ্যমান অতিরিক্ত বেতন-ভাতা ব্যাংকের পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বেসিক ব্যাংকের সমরূপ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের তুলনায় অত্যধিক বেতন-ভাতা চালু আছে বিধায় ব্যাংকের বিদ্যমান (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ প্রবর্তিত) বেতনকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা বাতিল করা হলো এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ কর্তৃক জারিকৃত ‘চাকরি ( ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান) বেতন ও ভাতাদি) আদেশ ২০১৫’ এর অনুরূপ বেতনকাঠামো গৃহীত হলো এবং ২২.১২.২০১৯ তারিখ থেকে কার্যকর হলো। ব্যাংকের বেতনকাঠামো বহির্ভূত অন্যান্য সুবিধাদি পর্ষদের অনুমোদনক্রমে প্রদান করা হবে।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্ষদের সিদ্ধান্ত গত ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে পরিপত্রের মাধ্যমে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবহিত করা হয়।

গত সোমবার বিদ্যমান বেতন-ভাতা কমানোর ওই সার্কুলারকে কেন্দ্র করে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এ সময় তারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।

এ বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বেতনকাঠামো দেখে আমরা নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। নতুন সার্কুলার জারির মাধ্যমে হঠাৎ করে বেতন কমানো অযৌক্তিক। এটা শ্রম আইনবিরোধী পদক্ষেপ। এটা মেনে নেয়া যায় না।

বেসিক ব্যাংকের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করা হয়েছে। তারা বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে সাধারণ কর্মীরা জড়িত নন। যারা দোষ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। এ দায় সাধারণ কর্মীরা নেবে কেন? আমাদের বেতন কমানো অযৌক্তিক, অন্যায় ও অমানবিক। এটা আমরা কোনোভাবে মানতে পারি না।

এর আগে গত আগস্ট মাসে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের বেতন কমানোর নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই দিন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ৩৫৪ কোটি টাকা লোকসান করেছেন। মাত্র ৭২টা ব্র‌্যাঞ্চের জন্য এখানে প্রায় ২ হাজার ১০০ জনবল আছে। এত লোকের এখানে কী কাজ?’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা একদিকে অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় বেতন বেশি নেন। অন্যদিকে ব্যাংক লোকসানে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব হতে পারে না। বেতন কমাতে হবে। আপনারা কর্মকর্তারা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেন- কীভাবে কত কমাবেন। সিদ্ধান্ত আমাকে জানান। এরপর আমি আমার সিদ্ধান্ত জানাব।’

এছাড়া, গত ১২ ডিসেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচি মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে ত্রৈমাসিক সমন্বয় বৈঠকে বেসিক ব্যাংকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে, খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

এরপরই গত রোববার বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন সার্কুলার জারির মাধ্যমে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান বেতন কমানোর পদক্ষেপ নেয়। বৃহস্পতিবার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানানো হয়।


ঢাকা/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়