ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ৫ সদস্যের কমিটি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ৫ সদস্যের কমিটি

দেশের পুঁজিবাজারের মৌলভিত্তি সুদৃঢ় ও জবাবদিহিতার মধ্যে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তৈরি হচ্ছে ‘ম্যাট্রিক্স’। এজন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে কমিটি একটি সুপারিশ প্রণয়ন করে তা সরকারের কাছে জমা দেবে। এরই ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও ম্যাট্রিক্স বাস্তবায়ন করতে যে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল তাতে অনুমোদন দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন করে নির্বাহী পরিচালক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন উপসচিব।

কমিটির জন্য চারটি কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে- কমিটি প্রস্তাবনাসমূহ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা প্রণয়নসহ সমন্বয়কের ভূমিকা পালন, বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিক মনিটরিং এবং তা প্রতিবেদন আকারে সরকারের কাছে পেশ করা, কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো সংস্থার প্রতিনিধি বা যে কোনো ব্যক্তিকে কো-অপ্ট করতে পারবে এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ বা আলোচনা করতে পারবে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অথচ পুঁজিবাজার হতে পারে বিনিয়োগের বড় মাধ্যম। দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে পুঁজিবাজারে তাদের কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করার কথা। সেখানে বিদ্যমান অবস্থায় তাদেরকে পুঁজি সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।

মূলতঃ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এই ‘ম্যাট্রিক্স’ তৈরি করছে সরকার। মনে করা হচ্ছে, এই ম্যাট্রিক্সে সুর্নির্দিষ্ট বিষয়, প্রস্তাবনা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং বাস্তবায়নের সময়কালও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এটি তৈরি করা হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে। সরকার আশা প্রকাশ করছে এই ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের মৌলভিত্তি সৃদৃঢ়করণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

তবে এই ম্যাট্রিক্সের মধ্যে কী কী বিষয় রয়েছে সে সম্পর্কে গণমাধ্যমকে আপাতত কিছু জানাতে রাজি নয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা। বিষয়টিকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে উল্লেখ করে ম্যাট্রিক্স সম্পর্কে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এনইসি সম্মেলন কক্ষে পুঁজিবাজার নিয়ে এক সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা যে মতামত দিয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করেই এই ম্যাট্রিক্সটি তৈরি করা হয়েছে। এই ম্যাট্রিক্স বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে পুঁজিবাজারের কাঙ্খিত পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তবে প্রস্তাবনাসমহূ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা যেমন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ইনভেস্টমেন্ট করপেরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টরা রয়েছে। বিষয়টি এককভাবে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ধসের পর থেকেই পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারের একটি সংকট রয়েই গেছে। এ সঙ্কট দূর করতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময় সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানির শেয়ার অফলোড করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। গত ৯ বছরেও সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

নতুন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে আবার সেই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজার উন্নয়নে ১৯৭৬ সাল থেকে কাজ করা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাই আইসিবি’র পাশাপাশি একই ভূমিকায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ নিয়েও কাজ করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বলা হয়েছ।

এদিকে পুঁজিবাজারে জবাবদিহিতাসহ আইনগত দুর্বলতার কারণে দেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ার বাজারে ছাড়তে অনাগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এনবিআরকে। এক্ষেত্রে সংস্থাটি প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে কর ছাড় বাড়ানোর যায় কি না তাও দেখবে প্রতিষ্ঠানটি। আইন মন্ত্রণালয় দেখবে তালিকাভুক্তির আইনগত দিকগুলো। আইন মন্ত্রণালয় একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের অন্যান্য আইনগত বিষয়গুলোও দেখবে।

আইন অনুযায়ী দেশের সব বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের বীমা খাতের ২৭ কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এই ২৭ কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার দায়িত্ব পেয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ)। এ সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলোর পাশাপাশি আইপিও প্রসেসিং সময় কমিয়ে দেয়া, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে অ-তালিকাভুক্ত করাসহ নানা বিষয় দেখবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে খুব শিগগির ২৭ বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভূক্ত হবে বলে জানিয়েছেন।


ঢাকা/হাসনাত/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়