কৃত্রিম সংকটসহ ৩ কারণে বেড়েছে চালের দাম
করোনার প্রাদুর্ভাবের সুযোগে চালের দামে বেড়ে গেছে। হঠাৎ করেই এই দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য ৩ কারণকে দায়ী করে একপক্ষ দুষছে আরেক পক্ষকে। ক্রেতাদের অভিযোগ—ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছেন মিল মালিকদের। তারা বলছেন, করোনাকে পুঁজি করে মিলাররা চালের সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে, হঠাৎ এই দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারের মনিটরিং না থাকাকে দায়ী করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ, শান্তিনগর বাজার. কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে—মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৮ থেকে ৬৮ টাকায়। অথচ করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে এ দুই ধরনের চালই বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা প্রতিকেজি।
সরু চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে মোটা চালেরও। পাইজাম ও লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে এসব চালের দাম ছিল ৪২ থেকে ৫০ টাকা। আর স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। আগে ছিল ৪০ টাকা।
যাত্রাবাড়ী বাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবির হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে জীবনযাপন করা খুবই কষ্টকর। সরকারি নজরদারির দুর্বলতার সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দফায় দফায় চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছেন। সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং টিম গঠন করেছে। অথচা বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো ভূমিকা দেখছি না।’
চালের দাম কেন বেড়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, ‘এখন নওগাঁ-জয়পুরহাট-নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগের মতো চাল আর আসছে না। যা আসছে তার দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
প্রায় একই অভিযোগ রায়েরবাগ বাজারের পাইকারি চালবিক্রেতা ‘সাজ্জাদ রাইস এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান, যাত্রাবাড়ীর ‘মের্সাস রেহান রাইস এজেন্সি’র মালিক সুমন হোসেন এবং ‘বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিনের।
এই তিন ব্যবসায়ী বলেন, ‘করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর কে কয় বস্তা চাল কিনে রাখবে, তার প্রতিযোগিতা চলে। তখনই চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরপর চাল বিক্রি কমলেও চালের দাম কমছে না। মূল কারণ—বড় মিলাররা চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। ছোট ছোট কিছু প্রতিষ্ঠানের চাল পাওয়া গেলেও চালের দাম কমছে না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অটো রাইস মিল মালিক ও বেপারী এগ্রো পোডাক্টের প্রপাইটার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে, এর সঙ্গে মিলারদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফ.টি.এ) শরিফা খান বলেন, ‘সারা বছরই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হয়। এছাড়া, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)ও নিয়মিত মনিটরিং করছে। কোনো কারণ ছাড়া কেউ অনৈতিক মুনাফা লাভ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই।’ কারসাজি করে কেউ চালের বাজার অস্থির করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা/ আসাদ/এনই
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন