ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

দেশ ও মানুষের স্বার্থ তিনি ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশ ও মানুষের স্বার্থ তিনি ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুভ জন্মদিন আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।যে নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, সেই নেতার জন্মদিনে আজ সমগ্র জাতি  কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছে। দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সমগ্র জীবন একটিই সাধনা করেছেন, আর তা হচ্ছে বাংলা ও বাঙালির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। কখনও কোনো কিছুর বিনিময়ে বা প্রলোভনে কিংবা ভয়ে নতিস্বীকার করেননি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি। বিশাল হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু সবাইকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তিনি ক্ষমতার জন্য, ক্ষমতায় থাকার জন্য কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করে বাঙালি যাতে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে। দেশের মানুষকে তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন। পাকিস্তানী স্বৈরাচারী সামরিক শাসকদের জেলে বছরের পর বছর বন্দী থেকেও অকুতোভয় বীরের মতো সঙ্কল্পে অটল থেকেছেন, মুক্তির মহামন্ত্রে  জাগিয়েছেন জাতিকে। বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন, এমনকি দুবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি বলেছেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী (তৎকালীন রেসকোর্স) ময়দানের জনসমুদ্রে তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর এ ঘোষনা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক মাইলফলক। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর ৭ মার্চের ভাষণই ছিল আমাদের পাথেয়। ওই ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন তিনি। তাঁর সে ঐতিহাসিক ভাষণ আজ ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে।

বিশাল হৃদয়ের মহৎ মনের মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। নিজের সবকিছুই জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। জনগণের জন্যই ছিল তাঁর রাজনীতি ও কর্মসূচি। ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরার পথে লন্ডনে নেমেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন সেখানে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এ ধ্বংসস্তূপ থেকেই একদিন আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করব।’ বস্তুতঃ শূন্য হাতে যাত্রা করে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে তিনি গড়ে তোলেন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ৭২’-এর ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা দেন। মাত্র সাত মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রচিত হয় সদ্য স্বাধীন দেশের উপযোগী সংবিধান।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতি। জীবনের প্রতিটি ধাপেই বাঙালির সার্বিক মুক্তির জয়গান গেয়েছেন। দেশের মানুষের স্বার্থের ব্যাপারে  সব সময়  আপোসহীন ছিলেন তিনি।  যে বাংলার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, যে বাংলার জন্য তিনি যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছেন বাঙালির জয়গান, সেই বাংলা ও বাঙালির জন্য তাঁর ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। তাইতো দেশের সর্বস্তরের মানুষের তথা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মানে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। আজ এই শুভ জন্মদিনে আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মহান এই নেতাকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ মার্চ ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়