ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অবসান হোক

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২৪ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অবসান হোক

উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সামনে শুরু হবে উচ্চ শিক্ষালাভে শিক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধ। তবে এজন্য ফল প্রকাশের আগেই কোচিং শুরু করেছে ভর্তিচ্ছুরা। বরাবরের ন্যায় চলছে কোচিং বাণিজ্য । ইতোমধ্যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। তার অর্থ এবারও সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটতে হবে।

অথচ এই গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্যে ছয় মাস আগে কমিটি গঠন করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু যতদূর জানা যায়, ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দেয়নি এ বিষয়ে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য  শিক্ষার্থীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছোটাছুটি করতে হবে। এতে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে তাদের। বিশেষত মেয়েদের তুলনামূলকভাবে বেশি ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে।

বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় বলে প্রতি বছর অনেকে এই পরীক্ষা দিতে পারে না। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচের বিষয় তো আছেই। দরিদ্র অনেক মা-বাবার পক্ষে তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে বাড়ির কাছের কলেজে ভর্তি করান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিন্ন বা সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এ বিষয়ে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে  শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু তখন অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করায় তা থেমে যায়।

এরপর ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে আবার উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু কয়েকটি  বিশ্ববিদ্যালয় তাতে অসম্মতি জানায়। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালে এ বিষয়ে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে।  ২০১৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপাচার্যদের এক সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আলোচনা হলে অধিকাংশ উপাচার্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। কিন্তু স্বায়ত্তশাসনের অজুহাতে ফের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের  আপত্তির কারণে ভেস্তে যায় সে উদ্যোগ ।

পরবর্তীতে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে উপাচার্যদের বৈঠকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি তখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে সমন্বিত ও সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বলেছিলেন। এরপর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার গাইড লাইন তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাত সদস্যের কমিটি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। দুই কমিটি সমন্বয় করে ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালা তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। কমিটির ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নীতিমালা সংক্রান্ত ধারণাপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন না দেওয়ায় এ বছর তা আর হচ্ছে না।

গত কয়েক বছর ধরে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও খরচ দুটোই কমেছে। একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সব মেডিক্যাল কলেজে  যেমন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে সে রকম ব্যবস্থা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে চালু করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। আমাদের প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হবে। সে সঙ্গে আমাদের আরো প্রত্যাশা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়ার অবসান ঘটে যেন এ বছরই।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়