ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অহংবোধের বিসর্জন দেয়াই কোরবানির শিক্ষা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ১১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অহংবোধের বিসর্জন দেয়াই কোরবানির শিক্ষা

বছর ঘুরে আবার এসেছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় এ উৎসব প্রতি বছর হিজরি সনের ১০ জিলহজ উদযাপিত হয়। সামর্থ্যবান মুসলমানরা ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এ মাসেই পালিত হয় পবিত্র হজ। আর পবিত্র হজের পরই কোরবানি দেয়া হয়।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আপত্য স্নেহ যাতে ঐশী নির্দেশ পালনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তা নিশ্চিত করতে নিজের চোখ বেঁধে প্রিয় পুত্রকে কোরবানির প্রাক্কালে করুণাময়ের অসীম কুদরতে ইসমাইল (আ.)-এর বদলে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এই মহিমান্বিত ঘটনার অনুসরণে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারীদের মধ্যে ১৪০০ বছর ধরে পালিত হচ্ছে কোরবানির প্রথা। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন।

ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ পরিত্যাগ করা। ঈদ একটি আনন্দ উৎসব হলেও এই উৎসব তখনই তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে যখন তা সর্বজনীন রূপ নেয়। তাই ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। কোরবানির মূল কথা হল ত্যাগ। সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে দরিদ্র প্রতিবেশীদের মধ্যে এর মাংস বিতরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। কোরবানির উদ্দেশ্য নিছক শুধুপশু জবাই নয়, মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকে যে অহংবোধ, তা বিসর্জন দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়াই কোরবানির শিক্ষা।

কোরবানি কোনো লোক দেখানো বা প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে- ‘রাব্বুল আলামিনের কাছে কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না। তার কাছে পৌঁছে বান্দার তাকওয়া।’ সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের উৎস- মহান আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী জীবন গড়ার মধ্যেই রয়েছে কোরবানির আসল মাহাত্ম্য। তা উপেক্ষা করে কোরবানির নামে অহংবোধের প্রকাশ ঘটালে তা হবে পশু হত্যার নামান্তর। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, সমাজ তথা মানুষের ভেতরের পশুশক্তিকে দমনই হচ্ছে কোরবানির মূল কথা।

এবার ডেঙ্গু রোগ সবার বড়  চিন্তার কারণ। ঈদে যারা রাজধানীতে থাকবেন এবং যারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন তাদের সবাইকে ডেঙ্গুর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে যার যার নিজ নিজ বাড়-ঘর, আনাচে-কানাচে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এ সময় পশু কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। রাস্তার ওপর বা যত্রতত্র কোরবানি দেওয়া অনুচিত। কোরবানি-পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেকে তৎপর থাকতে হবে। কোরবানি করার পর রক্ত ও অন্যান্য অনুষঙ্গে পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

ঈদ মানে খুশি-আনন্দ। তবে এ আনন্দ তখনই তাৎপর্যময় হবে যখন ধনী-গরিব নির্বিশেষে এতে শামিল হবেন। রাব্বুল আলামিন এ আনন্দে দরিদ্রদের শরিক করার জন্য তার ধনী বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন। পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে ঈদুল আজহার আদর্শকে আমরা সমুন্নত রাখতে পারি। মহান রাব্বুল আলামিন বিশ্বের সব মুসলমানকে সেই তওফিক দান করুন। আত্মত্যাগের এ আনন্দময় উৎসবে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা- ঈদ মোবারক।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ আগস্ট ২০১৯/আলী নওশের/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়