ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ার শপথ নিলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা
ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ার শপথ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সম্মিলিত কণ্ঠে শপথ পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা শপথ পাঠে অংশ নেন।
‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আজ, এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক, সকল প্রকার দায়িত্ব, সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করব।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকব। আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিব। নৈতিকতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপ-সংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সমূলে উৎপাটিত করব।এই আঙ্গিনায় যেন নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়। আর কোনো নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয়। তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব।’
তারা বলেন, আমরা সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে দৃঢ় অবস্থান তা থেকে আমরা কোন অবস্থাতেই সরে আসব না। যেকোনো ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদ চর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীর ব্যাপারেও ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত কি না বা অন্য কাউকে প্রভাবিত করছে কিনা এই মর্মে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, গত ৩০ জুলাই ২৪ জন বর্তমান স্টুডেন্টসহ ৩৪ জন সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নাশকতার পরিকল্পনাকারী সন্দেহে আটক হয়। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখে একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার আশা করছি। যদি তারা প্রত্যেকেই দোষী প্রমাণিত হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের বিপক্ষে থাকবে। একইভাবে যদি তাদের মধ্যে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তবে নির্দোষরা যেন আর কোনভাবে কোন হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং বুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করব। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কোন সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত কিনা বা তারা ক্যাম্পাসে অন্য শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে কি না এই ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। যদি তাদের এরূপ কোন সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয় তবে ভার্সিটির অধ্যাদেশ অনুযায়ী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে। এবং যদি তারা নির্দোষ হয়, তাহলে তারা যেন সুস্থ একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে তার দাবি জানানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আবরার হত্যাকাণ্ডে বুয়েটের আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসে ফেরার বিপরীতে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। এরকম কুখ্যাত একজন ব্যক্তির সাথে ক্লাস এবং ক্যাম্পাস শেয়ার করতে আমরা কোনভাবেই রাজি নই এবং কর্তৃপক্ষকে আজকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না আসলে আমরা একাডেমিক কার্যক্রম এ অংশগ্রহণ না করার মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দ্বিধা করব না।
/ইয়ামিন/এসবি/